ধান কুড়িয়ে অন্ন যোগায় ২০০ পরিবার

বেঁচে থাকার বিকল্প কোনো উপায় না পেয়ে তারা ধান কুড়ানিকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ছবি: স্টার

এদের কারও জমি নেই, আবার কারও ভিটেমাটি পর্যন্ত নেই। নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। তাই তারা ধান কুড়ান। ধান কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের মেঘনা পাড়ে এভাবেই চলে প্রায় ২০০ পরিবারের সংসার।

আশুগঞ্জ সদর ও এর আশপাশের কয়েকটি গ্রামে এদের বাস। তবে তারা এসেছেন মূলত কিশোরগঞ্জের মেঘনা নদী তীরবর্তী এলাকা, নেত্রকোণা ও জামালপুর থেকে। বেশিরভাগই নদী ভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন। 

ছবি: স্টার

আশুগঞ্জ ধান-চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. জহিরুল ইসলাম জারু দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, দেশের বৃহৎ ধানের মোকাম আশুগঞ্জ বাজারঘাটে ভরা মৌসুমে ৫০-৬০টিরও বেশি বড় নৌকায় প্রতিদিন প্রায় এক লাখ মণ ধান কেনা-বেচা হয়। অফ-সিজনে হয় অন্তত ৪০-৫০ হাজার মণ। নৌকা থেকে ট্রাকে তোলার সময় ধান গড়িয়ে মাটিতে পড়ে। সেই ধান কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করে প্রায় ২০০ পরিবার। বেঁচে থাকার বিকল্প কোনো উপায় না পেয়ে তারা ধান কুড়ানিকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।

আশুগঞ্জ বাজারঘাটে ধান কুড়ানিতে ব্যস্ত ছিলেন বৃদ্ধা আছিরন বেগম ও তার মেয়ে আসমা। আজ বুধবার দুপুরে কথা হয় তাদের সঙ্গে। 

ছবি: স্টার

তারা জানান, জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার টাঙ্গারপাড় গ্রামে ছিল তাদের বাস। স্থানীয় দশানি নদীর ভাঙনে বসতবাড়ি ও ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। স্বামী বিয়ে করে অন্যত্র চলে যাওয়ায় দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে আশ্রয় নেন আশুগঞ্জের সোনারামপুর গ্রামে। এরপর স্থানীয় এক চাতালকল মালিক তাদের এখানে ধান কুড়ানোর ব্যবস্থা করে দেন। 

আছিরন বেগম বলেন, 'বড় মাইয়া আসমারে লইয়া সারাদিন টুকাইয়া ৩০-৪০ কেজির মতো ধান পাই। বৈশাখের মওসুমডাতে বেশি পাইলেও সারা বছর সমান যায় না। তবে যা পাই তা পরিষ্কার কইরা বেইচ্চা যেই ট্যাহা পাই, তা দিয়া আমরার ছয়জনের সংসার চলে।' 

ছবি: স্টার

বৈশাখের শুরু থেকে জ্যৈষ্ঠের শেষ পর্যন্ত ধানের প্রাচুর্য থাকে এই মোকামে। ফলে এই মৌসুমে মোকামে গেলে নারী-পুরুষের পাশাপাশি শিশুদেরও ধান কুড়াতে দেখা যায়। বস্তা থেকে নৌকায় কিংবা মাটিতে পড়ে যাওয়া ধান কুড়ানোর পর তা কোলা কিংবা চালুনির সাহায্যে পরিষ্কার পর্যন্তই তাদের কাজ। এরপর ঘাট এলাকা থেকেই তা কিনে নেয় নির্দিষ্ট ক্রেতারা।

আশুগঞ্জের সোহাগপুর গ্রামের বাসিন্দা মালেক মিয়া জানান, প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা কাজ করে তারা এক বস্তার মতো ধান কুড়াতে পারেন। নারী ও শিশুদের ক্ষেত্রে তা কম হয়। তবে আবহাওয়া ভালো ও ধানের প্রাচুর্য থাকলে কোনো কোনো দিন দেড় থেকে দুই বস্তা পর্যন্ত ধান পাওয়া যায়। ৪০ কেজির বস্তা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হয় ব্যাপারীদের কাছে।

ছবি: স্টার

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা চালকল মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. ওবায়দুল্লাহ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কুড়ানো ধানে অনেক হতদরিদ্র পরিবার সংসার চালানোর সুযোগ পায়। বিক্রি করার পরেও ধানের মৌসুমে তাদের ঘরে ৬-৭ মণ ধান জমা হয়। এই ধান থেকে সংগ্রহকৃত চাল তাদের অন্ন যোগায়।'
 

Comments

The Daily Star  | English

Teknaf customs in limbo as 19 mt of rice, authorised by AA, reaches port

The consignment of rice weighing 19 metric tonnes arrived at Teknaf land port on Tuesday evening with the documents sealed and signed by the Arakan Army

4h ago