সুকন বাসফোরের দৈনিক মজুরি ১৮ টাকা!

পরিচ্ছন্নতা কর্মী সুকন বাসফোর। ছবি: সংগৃহীত

ভোরের আলো ফোটার আগেই রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন সুকন বাসফোর। পেশায় নারী পরিচ্ছন্নতা কর্মী সুকন শ্রীমঙ্গল শহরের পুরান বাজার থেকে হবিগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত পুরো সড়ক ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করেন।

ভোর ৫টায় কাজে বেরিয়ে ফেরেন সকাল ৯টায়। এই সময়ে তাকে ঝাড়ু দিতে হয় বেশ বড় একটা রাস্তা যা তার একার পক্ষে করা কষ্টকর। আর তাই মাঝে মাঝে তার স্বামী ও ছেলে ঝাড়ু দেওয়ার কাজে সাহায্য করেন।

আর এ কাজের জন্য সুকন মজুরি পান দৈনিক ১৮ টাকা!

এত কম বেতনে চলে—জানতে চাইলে সুকন বলেন, 'কী করব? মাসে হয় ৫৫০ টাকার মতো। আমাদের তো আর জায়গা-জমি নাই। এই জায়গায় থাকতে পারছি, তাই কষ্ট হলেও এত অল্প টাকায় কাজ করি। কলোনির বাইরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকার সামর্থ্য তো আমাদের নাই।'

সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের (সেড) তথ্য অনুযায়ী, সুকনের স্বামী প্রদীপ বাসফোর শহরের বিভিন্ন জায়গায় ময়লা পরিষ্কারের কাজ করেন। যেখানে যে কাজ পান, তাই তিনি করেন। সুকন-প্রদীপ দম্পতির দুই সন্তান। ছেলে নবম শ্রেণিতে এবং মেয়ে নার্সারিতে পড়ে। স্বল্প আয়ে কষ্টে দিন কাটে তাদের। মাছ-মাংস খেতে পান না বললেই চলে।

সুকন বাসফোর বলেন, 'বর্তমানে তো জিনিসপত্রের দাম অনেক। এই টাকায় তেল কিনলে চাল হয় না। ডাল-ভাত-সবজি খেয়ে দিন পার করি আমরা। মাঝে মধ্যে উপোসও করতে হয় দু'এক বেলা।'

এত কম বেতন নিয়ে তিনি বলেন, 'প্রতিদিন সকালে ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে আমরা শহর পরিষ্কার করি। আমাদের তো কোনো ছুটি নাই। মে দিবসের দিনেও কাজ করতে হয়। কোনো মে দিবসে কোনোদিন ছুটি পাইনি।

'বেঁচে থাকার মতো কোনো মজুরি আমরা পাই না আমরা,' বলে কেঁদে ফেলেন সুকন।

তিনি বলেন, 'কাজের জন্য আমরা না পাই জুতা, না পাই কোনো নিরাপত্তা উপকরণ। এমনকি বেশিরভাগ সময় কাজের ঝাড়ুটা পর্যন্ত নিজের টাকায় কিনতে হয়। অবসরে গেলে আমাদের জন্য কোনো ভাতাও নেই। আমরা সব দিক থেকে বঞ্চিত।'

শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র মো. মহসিন মিয়ার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তারা তো ঠিকমতো কাজই করে না। আর বেতন ৫৫০ টাকা হলেও আমরা তাদের আবাসন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকি। তাদের জন্য নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। আমি তাদের নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার করার মতো আরও কাজ করতে বলেছি। তাতে তাদের  আমি  ৩৫০ টাকা করে দেব। কিন্তু তারা কাজ করতে রাজি নয়।'

শ্রীমঙ্গলে গতকাল 'চা শ্রমিক ও হরিজন পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের ন্যায্য মজুরির প্রশ্ন ও কর্মপরিবেশ" সংক্রান্ত এক আলোচনা সভায় গবেষক ও সেড'র পরিচালক  ফিলিপ গাইন বলেন, 'শ্রমিকরা যদি কাজ না করতো তবে আমাদের কী হতো? তারপরও তাদের প্রতি এত বঞ্চনা। আবার শ্রীমঙ্গলে ৩৬ জন হরিজনের মাসিক বেতন ৫৫০ টাকা। এই বেতন কি কোনওভাবে ন্যায্য ও গ্রহণযোগ্য?'

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, 'মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল পৌরসভার হরিজন সম্প্রদায়ের পরিছন্নতা কর্মীদের মাসিক মজুরি ৫৫০ টাকা কোনোমতে কাম্য নয়।'

'২০২৪ সালের বাংলাদেশে এমন মজুরি কোথাও আছে সেটা বিশ্বাস করাও কঠিন। প্রথমত বিষয়টি এখনও দৃশ্যমান হয়নি। আমাদের প্রথম কাজ হলো এটা সবার কাছে দৃশ্যমান করা। পরে সেটা জবাবদিহিতার জায়গায় নিয়ে যাওয়া,' বলেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিমুদ্দিন খান বলেন, 'খাতভিত্তিক মজুরি নির্ধারণ না করে, সব ট্রেড ইউনিয়নের উচিত এক হয়ে একটি সার্বজনীন নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ করা।

'প্রান্তিকতার সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক হলো মানুষের নিজেকে প্রান্তিক ভাবা, ক্ষমতাহীন ভাবা। নিজেদের শক্তির বহিঃপ্রকাশের সক্ষমতা থাকাটা তাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
Dense fog disrupts flight operations

Dhaka airport: APBn at odds with aviation force over security duties

A conflict has emerged between the Aviation Security Force (AVSEC) and the Airport Armed Police Battalion (APBn) over security responsibilities at Hazrat Shahjalal International Airport (HSIA). APBn claims that AVSEC took control of their office on October 28, hindering their ability to perform duties effectively

30m ago