‘যে টাকা বেতন পাইছি, বাড়ি যাতায়াতেই শ্যাষ’
রাজধানী ঢাকার মিরপুরে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন আলমগীর হোসেন। কারখানা ছুটি হওয়ায় স্ত্রী, দুই সন্তান ও বোনকে সঙ্গে নিয়ে তিনি গাবতলী বাস টার্মিনালে আসেন রংপুরে যাবেন বলে।
যে দুএকটি বাসে টিকিট আছে, তার কোনোটির ভাড়াই এক হাজার ২০০ টাকার কম না। কিছুটা এগিয়ে গেলে আরও কম খরচে যদি কোনো বাসে ওঠা যায়—সেই আশায় দুই সন্তানকে পালা করে কোলে নিয়ে হাঁটতে শুরু করে তারা।
আলমগীরের পরিবার আমিন বাজার পৌঁছে সোমবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে। সেখানেই এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয়।
আলমগীর বলেন, 'ঢাকা থেকে রংপুরে নন এসি বাসের ভাড়া এক হাজার ২০০ টাকা! কোনোটার আরও বেশি, দেড় হাজার টাকা। বাসে যাওয়া সম্ভব না। ট্রাকে গেলেও যে টাকা বেতন পাইছি, বাড়ি যাতায়াতেই শ্যাষ।'
কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর আলমগীর ৫০০ টাকা ভাড়ায় সপরিবারে একটি ট্রাকে ওঠেন।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এদিন বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করায় সন্ধ্যার পর থেকে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় ব্যাপক ভিড় দেখা যায়। এদের মধ্যে অনেকেই আগে থেকে টিকিট কেটে রেখেছিলেন।
ছুটি নিয়ে অনিশ্চয়তায় টিকিট না কেটে যারা গাবতলী এসেছেন, তারা বিপাকে পড়েন। দূরপাল্লার রুটে অন্যান্য সময়ে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি নিয়ে যাত্রী তুলছে রাজধানীতে চলা লোকাল বাসগুলো।
ঢাকা থেকে রংপুরের ভাড়া দেড় হাজার থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। বগুড়ার ভাড়া ন্যূনতম এক হাজার টাকা। সে তুলনায় প্রায় অর্ধেক ভাড়ায় যাত্রী নিচ্ছে ট্রাক ও মিনি ট্রাকগুলো।
গাবতলীতে কথা হয় ট্রাকচালক হায়দার আলীর সঙ্গে। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অন্য সময় গাবতলী থেকে ইট নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে দেই। এখন নির্মাণ কাজ বন্ধ, তাই যাত্রী পরিবহন করছি। ৩০ জন যাত্রী নিয়েছি ১৫ হাজার টাকা চুক্তিতে, সবাইকে রংপুর যাবেন। মাল টানলেও এ রকম টাকাই আসে। সব খরচ বাদ দিয়ে তিন হাজার টাকা লাভ হতে পারে।'
গাবতলী থেকে মিনি ট্রাক যাচ্ছে সিরাজগঞ্জ ও আরিচা ঘাট পর্যন্ত। একেকটি ট্রাকে ১৫ থেকে ১৮ জন পর্যন্ত যাত্রী উঠতে দেখা যায়। মিনি ট্রাকে আরিচার ভাড়া জন প্রতি ১০০ টাকা।
বগুড়ার যাত্রী শফিকুল ইসলাম বলেন, 'সরাসরি গাড়ি পাইনি। মিনি ট্রাকে ৪০০ টাকায় সিরাজগঞ্জ যাব, ওখান থেকে কোনো একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।'
Comments