ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলো জবরদখলের প্রচেষ্টার প্রতিবাদে ৩৪ নাগরিকের বিবৃতি

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪। ছবি: পলাশ খান/স্টার

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি প্রতিষ্ঠান জবরদখল করার প্রচেষ্টার প্রতিবাদে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৩৪ নাগরিক।

আজ রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, 'সম্প্রতি নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি প্রতিষ্ঠান জবরদখল করার প্রচেষ্টা সংক্রান্ত বিভিন্ন সংবাদের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। গ্রামীণ টেলিকম ভবনে অবস্থিত গ্রামীণ কল্যাণ ও গ্রামীণ টেলিকমসহ এসব প্রতিষ্ঠান জবরদখল করার প্রচেষ্টা হিসেবে এতে অনধিকার ও জোরপূর্বক প্রবেশ এবং ভবনটির সামনে রাজনৈতিক সমাবেশ করা হয়।'

'এর ধারাবাহিকতায় গ্রামীণ ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান এ কে এম সাইফুল মজিদ একপর্যায়ে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ারম্যান পদে পরিবর্তন করা হয়েছে বলে দাবি করেন। এর মধ্যে ড. ইউনূসের পরিবর্তে তিনটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদে সাইফুল মজিদের নিজের লেখা চিঠিতে তিনি নিজেই মনোনীত হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়।'

'ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত এসব অলাভজনক প্রতিষ্ঠান প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সংশোধিত আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন অনুসারে প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ারম্যান পদে পরিবর্তন আনার এখতিয়ার গ্রামীণ ব্যাংকের নেই বলে ড. ইউনূসের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এরপরেও এ বিষয়ে কোনো আইনগত দাবি থাকলে তা আদালতের কাছে উপস্থাপন করার উদ্যোগ গ্রামীণ ব্যাংক গ্রহণ করতে পারতো।'

'কিন্তু সেটি না করে যেসব প্রক্রিয়ায় ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলো দখলের চেষ্টা বর্তমানে করা হচ্ছে তা বেআইনি, অনৈতিক ও অরুচিকর বলে আমরা মনে করি। সংবাদ সম্মেলনে ড. ইউনূস সম্পর্কে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান যেসব একতরফা, বেপরোয়া ও মানহানিকর অভিযোগ করেছেন আমরা তার নিন্দা করছি।'

'ইতোপূর্বে হিসাব তলব, তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদের নামে ড. ইউনূসকে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হয়রানি করেছে। শ্রম আইন সংক্রান্ত দেওয়ানি চরিত্রের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করে তা অস্বাভাবিক দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে তার বিরুদ্ধে নানাধরনের প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে। এসব ঘটনা থেকে ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠানগুলো দখলের সাম্প্রতিক প্রচেষ্টাগুলোকে পৃথকভাবে দেখার সুযোগ নেই বলে আমরা মনে করি।'

'ড. ইউনূস অতিদরিদ্র ও অবহেলিত মানুষের অবস্থার উন্নয়নে কাজ করে বিশ্বে সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছেন এবং বাংলাদেশের জন্য বিরল সম্মান বয়ে এনেছেন। আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার মোড়কে তার এবং তার গড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যবস্থা গ্রহণ তার কর্মযজ্ঞকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং বিশ্বের কাছে নেতিবাচক বার্তা প্রদান করছে।'

'ড. ইউনূসের গড়া প্রতিষ্ঠানগুলো জবরদখলের প্রচেষ্টাসহ তার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক সকল উদ্যোগ বন্ধের জন্য আমরা সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।'

এই যৌথ বিবৃতিতে সই করেছেন—

১. মানবাধিকার কর্মী হামিদা হোসেন

২. তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হাফিজ উদ্দিন খান

৩. সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার

৪. সুজনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার

৫. সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক

৬. সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সারা হোসেন

৭. সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

৮. অধ্যাপক আলী রীয়াজ

৯. অধ্যাপক স্বপন আদনান

১০. অধ্যাপিকা ফিরদৌস আজিম

১১. আলোকচিত্রী শহিদুল আলম

১২. অধ্যাপক সি আর আবরার

১৩. অধ্যাপক আসিফ নজরুল

১৪. অধ্যাপিকা শাহনাজ হুদা

১৫. মানবাধিকার কর্মী শারমীন মুরশিদ

১৬. মানবাধিকার কর্মী শিরিন প হক

১৭. মানবাধিকার কর্মী সঞ্জীব দ্রং

১৮. মানবাধিকার কর্মী জাকির হোসেন

১৯. মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন

২০. মানবাধিকার কর্মী রেহনুমা আহমেদ

২১. মানবাধিকার কর্মী ফরিদা আখতার

২২. শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নায়লা জেড খান

২৩. নৃবিজ্ঞানী সায়েমা খাতুন

২৪. ড. নাসরিন খন্দকার

২৫. অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম

২৬. অধ্যাপক আর রাজী

২৭. গবেষক রোজিনা বেগম

২৮. সাংবাদিক সায়দিয়া গুলরুখ

২৯. অ্যাডভোকেট সালমা আলী

৩০. তবারক হোসেইন

৩১. সুব্রত চৌধুরী

৩২. অরূপ রাহী

৩৩. রেজাউর রহমান লেনিন

৩৪. ব্যাংকার সৈয়দ নাসের বখতিয়ার আহমেদ

 

Comments

The Daily Star  | English

Penalty less than illegal gains fuels stock manipulation

While fines are intended to deter future offences, questions remain over their effectiveness if the amount is lower than the illegal gain.

12h ago