আমি এই দেশের সন্তান এই দেশেই থাকব, দেশের জন্য যে কাজ করি সেটাই করব: ড. ইউনূস

ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস শুক্রবার রাতে ডয়েচে ভেলেকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।

পুরো সাক্ষাৎকারটি নিচে তুলে ধরা হলো।

অনেকে বলে আপনি সাক্ষাৎকার দিতে চান না, আবার কেউ বলে আপনি কথা না বলেই দুর্যোগে আছেন, বললে না জানি কী হতো। আপনার কোনো মন্তব্য?

ড. মুহাম্মদ ইউনূস: অবস্থাটা হলো এমন- দেশে তো কথা বলিই না, আবার বিদেশে বললেও শর্ত দেই যে, ছাপানোর আগে আমাকে বলতে হবে যাতে আমার এমন কোনো শব্দ থেকে না যায়, যে আমি বিপদের সম্মুখীন হবো। বিপদ থেকে দূরে থাকার জন্য এটা করছি, আবার বিপদের মধ্যেই আছি। কথা না বলা নিজেকে রক্ষা করার একটা সুবিধা। কথা যত না বলা যায়, ততই হয়ত নিজেকে রক্ষা করতে পারব।

নিজেকে কতটা রক্ষা করতে পারছেন?

ড. ইউনূস: রক্ষা আর করতে পারলাম কই। এটা শুধু বাড়ছে। কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়ে গেছি। কিছুদিন আগে ১২ তারিখে আমাদের অফিসের মধ্যে ঢুকে লোকজন বলল যে, "এটা আমরা দখল করব। এখন থেকে এটা আমরা চালাব।"

কী ধরনের আবদার এটা? আমরা পুলিশের কাছে গেলাম। পুলিশ বলল যে, তারা এ ব্যাপারে কিছু করতে পারবে না। তারা কিছু করল না। আমরা তাহলে যাব কোথায়। পুলিশ কিছু করবে না। আমাদের প্রতিষ্ঠান দখল করার জন্য ছুটে আসবে। আইন-কানুন কিছুই মানবে না। একটা প্যানিক সৃষ্টি করল। পুরো অফিসের মধ্যে, বিশেষ করে নারী কর্মীরা খুবই ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে গেল যে, এটা কী কাণ্ড হচ্ছে। কাজেই সমস্যার পরিমাণ বাড়ছে, কমছে না।      

আপনার বিরুদ্ধে রায়ের পর আপনি প্রতিটি মানুষকে গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াইয়ে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার আহ্বান জানান। আপনি কি সরকারের পরিবর্তন চাইছেন?

ড. ইউনূস: তুমি কি গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে নাকি? আমরা কেউই গণতন্ত্রের বিপক্ষে না। সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া যে, আমরা সবাই গণতন্ত্রের পক্ষে, মানবাধিকারের পক্ষে, ন্যায়-নীতির পক্ষে, রুল অব ল'র পক্ষে। এগুলো না থাকলে জাতি হিসেবে আমরা টিকে থাকতে পারব না। এখন তো আমাদের দায়িত্ববোধ অনেক বেড়ে গেছে। এগুলোকে প্রতিষ্ঠা করা, সোচ্চার হওয়া, এগুলোকে মুখ ফুটে বলা, সবাইকে বলতে হবে। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ বলেই আমি বলছি না।

রায় ঘোষণার পর নিজের ওপর পড়ল বলে বললেন?

ড. ইউনূস: হতে পারে। মুখ যখন বন্ধ থাকে, তখন কোনো কথাই বলা হয় না। যখন মুখ খোলার সুযোগ হয়েছে, সামনে ক্যামেরা নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে, মনের কথা বলেছি। বলা হচ্ছিল না। আমার ধারণা এটা সবারই মনের কথা। তারাও চায় বলুক, আমি বললে তাদের মনে সাহস আসে।

গণতন্ত্র-মানবাধিকারের পক্ষে সবাই এক বাক্যে বলতে পারছে কি না?

ড. ইউনূস: মুখ খুলে গণতন্ত্রের কথা বলতে পারছে না। এক বাক্যে বলা, পরিষ্কার কণ্ঠে বলা, এটা সবার দায়িত্ব, এটা জাতীয় দায়িত্ব। না হলে গণতন্ত্র থাকবে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনাকে অপছন্দ করেন। আপনাকে দায়ী করেন। তাকে কি আপনি প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন? কী কারণে উনি অপছন্দ করেন?

ড. ইউনূস: উনি মনে করেন আমি দেশের সর্বোচ্চ ডাকু, সন্ত্রাসী, অপরাধী, সেরা চোর। উনি তার মতো করে ব্যাখ্যা করেন। উনি বলেন, আমি সুদখোর, আমি ঘুষখোর। অনেক কটু শব্দ ব্যবহার করেন যে, তাতে মনে হয় আমার সম্পর্কে তার ধারণা খুবই খারাপ।

এমন তো আগে ছিল না। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত একসঙ্গে কাজ করতে কোনো সমস্যা হয়নি? এখন কেন এই শত্রুতা?

ড. ইউনূস: এটা আমার তরফ থেকে হয়নি। আমি আগে শ্রদ্ধা করে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে) ওয়াশিংটনে নিয়ে গেছি মাইক্রোক্রেডিট সামিটে প্রধান অতিথি করে। সবাই সম্মান করেছে। মাইক্রোক্রেডিট তখন পৃথিবীর সামনে আসছে। বড় আকারে আসছে এবং এটাকে বাংলাদেশের অবদান আকারে সবাই স্বীকৃতি দিচ্ছে। ওয়াশিংটনে নিয়ে গিয়েছিলাম বাংলাদেশের এই গৌরবটা উনি যেন আমাদের পক্ষ থেকে গ্রহণ করেন। উনি গেছেন। স্বাভাবিকভাবেই এই সম্পর্ক থেকে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কী কারণে ঘাটতি হতে আরম্ভ করল, বুঝতে পারলাম না। উনার আচরণ ও শব্দ পরিবর্তন হতে আরম্ভ করল। এমন পরিবর্তন হলো যে, এখন আমাকে চোর-বদমাইশ ছাড়া আরও কিছু মনে করেন না বলে মনে হয় আমার কাছে।

অনেকে বলেন, ২০০৭ সালে বিরাজনীতিকরণের চেষ্টা বা আপনি ক্ষমতা দখল করতে চেয়েছিলেন, এটা কি কোনো কারণ হতে পারে? দেশের ক্ষমতায় আসতে চেয়ছেন কি না?

ড. ইউনূস: যদি চাইতাম, তাহলে যখন মিলিটারি আমার বাসায় এসে বসে রইল সারারাত, আমাকে রাজি করানোর জন্য, আমি তো লুফে নিতাম। আমি যদি ক্ষমতাই চাইতাম তাহলে বলতাম, চলেন চলেন, কোন জামাটা পরতে হবে দেখিয়ে দিন, এখনই যাচ্ছি।

আমি তো সেটা করিনি। সারারাত আমি তর্ক করেছি। আমি বলেছি, না ভাই আমি চাই না। তারা বলল, আমরা সকালে আবার আসব। আমি বললাম, না ভাই, সকালে এলেও আমি একই কথা বলব। আমি তো মনের ভেতর দ্বন্দ্ব রেখে বলছি এমন না। আমি পরিষ্কারভাবে তাদের বলেছি। না হয় তো আমি রাজি হয়ে যেতাম। কে ছাড়ে সরকারের প্রধান হবার আহ্বান। কয়জন আছে বাংলাদেশে যে বলবে, আমি এই দায়িত্ব গ্রহণ করব না। আমি তো বলেছি শপথ গ্রহণ করব না। আমি বলেছি, আমি এই কাজের জন্য নই। দেশ পরিচালনা করা আমার কাজ না, আমার দায়িত্ব না। আমি জানি না এটা কীভাবে করতে হয়, আমি যেটা জানি, সেটা আমি করি।  

আপনার মেয়ে মনিকা ইউনূস সিএনএনে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ড. ইউনূস ও প্রধানমন্ত্রী আগে একসঙ্গে কাজ করেছেন, আমি চাই আবারও তারা একসঙ্গে কাজ করুক। আপনি এমন আশা করেন কি না?

ড. ইউনূস: এটা কি আমার জন্য করা যাচ্ছে না? আমি নারাজ? তুমি ভাবখানা এমন করছ যে, আমি আপত্তি করছি। আমাকে চোর-বদমাইশ করে রেখেছে। আমার নাম উঠলেই উনার রাগ উঠে যায়। আমাকে সুদখোর না বললে উনার মন তৃপ্ত হয় না। আমাকে পদ্মা নদীতে না চুবিয়ে উঠালে উনার শান্তি আসে না। এটা তো উনাকে বলতে হবে।

আপনি ক্ষমতা বা গ্রহণযোগ্যতা ব্যবহার করে পদ্মা সেতুর ঋণ যেন বাংলাদেশ না পায়, সে চেষ্টা করেছেন কি না?

ড. ইউনূস: এটা হাস্যকর একটা কথা। বললেই হয়ে গেল, এটাও আরেকটা চোর-ডাকাতের মতো কথা। আমরা এত বিবৃতি দিয়েছি। আমরা সবাই চাই সেতু। বিরোধিতা করার প্রশ্নই ওঠে না। উনি বলতেই থাকলেন। একজন বলতে থাকলে তো আমার করার কিছু নেই। সরকারের যাবতীয় প্রচারযন্ত্র উনার হাতে। আমার তো কিছু করার নেই।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সময় আপনাকে নিমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল?

ড. ইউনূস: মনে হয় না।

গ্রামীণ টেলিকমের লভ্যাংশ কোন খাতে ব্যয় করা হয়?

ড. ইউনূস: গ্রামীণ টেলিকম একটা স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। কোম্পানি আইনের ২৮ সেকশন দ্বারা সৃষ্ট। এটা তার নিজের নিয়মে চলবে। এটার কোনো মালিক নেই। যদি কারও পাওনা থেকে যায়, পরিচালনা পরিষদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া। সহজ-সরল একটা জিনিস।

গ্রামীণ টেলিকম বলেছিল যে, কিছু কিছু সহায়তা দেবে গ্রামীণ ব্যাংককে। যে টাকা দেবে বলেছিল, সেটা দিয়ে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত ৫০০ কোটি টাকা দিয়েছে। এটা তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। আইনগত বাধ্যবাধ্যকতা কিছু ছিল না।

গ্রামীণ ব্যাংক থেকে আপনি চলে যাওয়ার পর গ্রামীণ টেলিকমের সঙ্গে ব্যাংকের সম্পর্কের বিধিমালা পরিবর্তন করা হয়েছে কি?

ড. ইউনূস: আগে চেয়ারম্যান নমিনেট করতে পারত গ্রামীণ ব্যাংক। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে যখন আমাদের সরিয়ে দেওয়া হলো, তখন আমরা ভাবলাম সেই পদটা আর দরকার নেই, সেটাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। অন্য কোনো পরিবর্তন হয়নি।

গ্রামীণ টেলিকম গ্রামীণ ব্যাংকের লভ্যাংশ পায়, সেটি কোথায় ব্যয় করা হয়?

ড. ইউনূস: সামাজিক ব্যবসায় ব্যয় করা হয়। সাধারণ ব্যবসা মানে মুনাফা। আমরা বলেছি এটা ভুল। মানুষকে সর্বোচ্চ মুনাফার বাইরেও আরেক রকমের ব্যবসা, যেটা মানুষের সমস্যা সমাধান করে ব্যবসা করা। ওই অর্থ দিয়ে আমরা একটা একটা করে সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা পুরো গ্রামীণফোনকে সামাজিক ব্যবসা করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু টেলিনরকে আমরা রাজি করতে পারিনি। গ্রামীণ টেলিকমকে করতে পেরেছি সামাজিক ব্যবসা হিসেবে। এর থেকে যে মুনাফা হয়, সেটা বিভিন্ন সামাজিক ব্যবসা সৃষ্টির কাজে লাগছে।

আপনি কখন কোন প্রতিষ্ঠান কোন সামাজিক ব্যবসা চালু করছেন, কোনটা রাখছেন, কীভাবে বাদ দিচ্ছেন, প্রক্রিয়াটা কেমন? এটা শুধু আপনি যেভাবে বলেন, সেভাবেই হয় কি?

ড. ইউনূস: এরকম শুধু আমার ক্ষেত্রেই হয় নাকি, দেশে এরকম আরও কেউ করছে, অন্য কারও ক্ষেত্রেই এমন হয় কি না? আমাদের এখানে বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে। আমার বক্তব্য যদি কনভিন্সিং মনে হয়, বোর্ড যদি গ্রহণ করে, আমি যত কথাই বলি না কেন এ তো বোর্ডের সিদ্ধান্ত।

সামাজিক ব্যবসা কেমন আগাচ্ছে? আপনি কতটা নিজেকে সন্তুষ্ট ভাবেন?

ড. ইউনূস: বিভিন্ন দেশ থেকে এটার জন্য প্রবল সাড়া পাচ্ছি। সারা বিশ্ব এটা করছে। বাংলাদেশ হচ্ছে এর কেন্দ্রভূমি। সবাই তাকিয়ে থাকে আমাদের কাজের দিকে। পৃথিবীর অনেকে দেশ এটাকে সম্মান করে। আমার পরিচিতি বাড়ানোর জন্য তো কোনো কনসালটেন্সি ফার্ম নেই।

যেমন: খেলাধুলার প্রচণ্ড রকমের সামাজিক শক্তি আছে। ফুটবলের সময় আমাদের দেশে নানা দেশের পতাকা ওড়ে। এটা আমার খুব ভালো লাগে। দেশের নাম শোনেনি, কিন্তু খেলাটা জান-প্রাণ। মানুষের এই শক্তিটাকে আমরা মুনাফার কাজে ব্যবহার করি, সামাজিক কাজে করি না।

এটার কথা জেনে রিও অলিম্পিকে আমাকে ডাকল, আমি গেলাম। তারা শুনল, গ্রহণ করল। এটা তো আমি বিজ্ঞাপন দিয়ে পছন্দ করাচ্ছি না। তাদের পছন্দ হচ্ছে, তারা নিচ্ছে।

কর না দিয়ে অনুদান দিয়েছিলেন একটি ট্রাস্টে। পরে আবার কর দিতে হয়েছে আদালতের নির্দেশে। এটাকে কি ভুল বলবেন, নাকি জুলুম বলবেন?

ড. ইউনূস: আমার কিন্তু নিজের নামে কিছু নেই। বাড়ি নেই, শেয়ার নেই, আমি নিজের নামে কিছু রাখিনি। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি কিছুর মালিক হব না। এজন্য ট্রাস্ট করেছি। মালিকানাবিহীন থাকছি আমি। আমার উপার্জন ট্রাস্টে দিয়ে দিচ্ছি। এসময় প্রশ্ন উঠল যে, ট্রাস্টে দিতে হলে আমাকে কর দিতে হবে কি না।

আমার আইনজীবী বলেছিলেন, আপনি তো দান করছেন। আমি বলেছি সরকারকে দেওয়ার থাকলে, দেবো। আইন যেভাবে বলবে, সেভাবে হবে। পরে সরকার বলল, কর দিতে হবে। আমি বললাম, আদালতে যাই, আদালত যেটা বলবে সেটাই করব। আমি তো নিজেই গিয়ে কর দিয়েছি। আমি নিজেই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দিয়েছি। এ টাকার ওপর আমার তো কোনো লোভ নেই। আমি নিজে আদালতের কাছে প্রার্থনা করেছি।

ট্রাস্টের ট্রাস্টিও আপনি, নিজের টাকা অন্যভাবে নিজের কাছে রাখলেন কি?

ড. ইউনূস: যে ট্রাস্ট করে, সেই তো ট্রাস্টি হয়। এটা আমার টাকা না। এটা ট্রাস্টের টাকা। আমার উত্তরসূরিরা এই টাকায় হাত দিতে পারবে না।

খোলা চিঠিতে নোবেলজয়ীসহ ২৪২ বিশ্ব ব্যক্তিত্ব বলছেন, আপনার বিরুদ্ধে মামলার রায়ে দণ্ড কমানো যেত। আপনার বন্ধুদের সঙ্গে কি আপনি একমত?

ড. ইউনূস: এটা বিচার বিভাগ ঠিক করবে। আমার যারা শুভানুধ্যায়ী, তারা কার সঙ্গে আলাপ করেছেন আমি জানি না।

আর একটা মজার বিষয় আমাদের বোর্ড মেম্বার ৭ জন। সরকার আদালতে গেছে চারজনের বিরুদ্ধে। আর তিনজন কোথায়?

আপনি বলেছেন, যে দোষ করিনি তার শাস্তি পেলাম?

ড. ইউনূস: আমি তো অপরাধ করিনি। বোর্ড কী করবে? বোর্ড তো কিছু করেনি। বোর্ড সদস্যরা কোনো টাকা পায়নি। এখন জেল হলো, কেউ তো আর বোর্ড সদস্য হতে চাইবে না। এভাবে চললে, ব্যবসা হবে কী করে?

আমাদের এখানে মুনাফা নেই। এটা ভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান। মুনাফা করতে হলে, মালিককে মুনাফা পেতে হবে। মালিক তো মুনাফা করে না। মালিকই তো নেই। তাহলে মুনাফাও নেই। এখানে আইন প্রযোজ্য হবে না।

কোর্ট যদি বলে এখানে আইন আছে, মুনাফার অংশ দিতে হবে, আমরা দিয়ে দেবো। আমরা নট-ফর প্রফিট। এনজিও নন-প্রফিট। এনজিও তো প্রফিট করছে। এই আইন যদি প্রযোজ্য হয়, তাহলে সবার জন্য প্রযোজ্য হবে।

আপনার শুভাকাঙ্ক্ষীরা মামলা পর্যবেক্ষণে এক্সপার্ট নিয়ে আসবেন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ গ্রহণ করলেন। এটা কী অবস্থায় আছে এখন?

ড. ইউনূস: এখন সরকার আর আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এটা সরকারের সঙ্গে আলোচনা। তারা তো বলেছে যে, তারা আসতে চান। কিন্তু তার আগেই সরকার বলে দিয়েছে, এর আর সময় নেই।

দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। সরকারের লুপহোল কোথায় বা আইনের কী পরিবর্তন আনা দরকার বলে মনে করেন?

ড. ইউনূস: আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আইনের প্রয়োগ করতে হবে। সেটা না করলে কিছুই হবে না। কর্মকর্তারা আইনের প্রয়োগ সঠিকভাবে করছেন কি না, সেটা দেখতে হবে। প্রয়োগ শুরু হলে বোঝা যাবে, কোথায় সমস্যা। এখন তো বোঝাই যাচ্ছে না ঘাটতি কোথায়।

দেশের অর্থনীতি ভঙ্গুর বলে অনেকে মনে করেন। আপনি কি মনে করেন?

ড. ইউনূস: সারা বিশ্বের অর্থনীতি খারাপ, আমাদেরও সে অবস্থা। এখন কীভাবে সমাধান করা যাবে, সেটা সরকারের বিষয়।

সংবাদ সম্মেলন করলেন। হুমকি পাচ্ছেন বলেছেন। এখন পরিস্থিতি কী?

ড. ইউনূস: আমরা ভয়ের মধ্যে আছি। বিল্ডিংয়ের সামনে লোকজন ঘেরাও করে আছে। সংকটপূর্ণ অবস্থায় আছি। সংবাদ সম্মেলন এ কারণে করেছি যে, আমরা যে ভালো অবস্থার মধ্যে নেই, সেটা জানান দেওয়া।

আপনি বাংলাদেশে থাকছেন, চাইলেই অন্য দেশে যেতে পারেন। কেন বাংলাদেশে থাকা?

ড. ইউনূস: তাহলে কি আমি দেশ ছেড়ে চলে যাব? এমন কুসন্তান হলাম আমি? এই অবস্থা হয়ে গেল আমার?

আমি মনে করি না আমার এমন অবস্থা। আমি এই দেশের সন্তান, এই দেশেই থাকব। দেশের জন্য যে কাজ করি, সেটাই করব। যতদিন বেঁচে আছি, এটাই করে যাব।

আপনার প্রতিষ্ঠান মানি লন্ডারিং করেছে বলে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে?

ড. ইউনূস: যেভাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সবাইকে জানান দেওয়া হচ্ছে যে, আমি সবচেয়ে বড় ডাকাত, আমি সাংঘাতিক মানুষ, দেশের সর্বনাশ করে যাচ্ছি। সেভাবেই পরিচিত হচ্ছি।

আপনার পরবর্তী লক্ষ্যগুলো কী?

ড. ইউনূস: আমি বলেছি এটা আমাদের স্বপ্নের বীজতলা। আমাদের নতুন নতুন স্বপ্ন আসে, সেটা আমরা বাস্তবায়ন করি, সফল হলে বড় আকারে করি। সারা দুনিয়া এগুলো লুফে নেয়। সারা দুনিয়ার লক্ষ্য আমাদের দিকে যে, আমরা এগুলো কীভাবে পরিচালনা করছি।

আমরা একটা নতুন পৃথিবী গড়তে চাই। তিন শূন্যের পৃথিবী- শূন্য কার্বন নির্গমন, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীভূতকরণ এবং শূন্য বেকারত্ব। এটা নিয়ে বহুবার বলেছি। পৃথিবীকে রক্ষা করতে হলে, আমাদের এই তিন শূন্যের পৃথিবী গড়তে হবে।

এখন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এসেছে। এটা পৃথিবীকে ধ্বংস করে দেবে। আগামী দিনে এটার পরিবর্তন হয়ে যাবে। আমরা বলেছি এটা টিকতে পারে না। টেকনোলজিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সারা বিশ্বে। এটার বড় নিয়ামক হবে সামাজিক ব্যবসা। এর প্রসার করা হবে আমাদের দায়িত্ব।

রোহিঙ্গা সমস্যা এবং মিয়ানমারে বর্তমানে যে সংঘাত চলছে, সেটার আশু কোনো সমাধান দেখেন কি না?

ড. ইউনূস: এটা একটা ব্যাপক বিষয়। শুধু রোহিঙ্গা না, পুরো মিয়ানমারের বিষয়টি একটা জটিল বিষয়। তাদের সীমান্তে থাকার কারণে আমরা বহুভাবে এটার জন্য সাফার করছি। এটা এখন থেকেই ঠিক করতে হবে যে, আমরা কীভাবে এটা নিষ্পত্তি করতে পারি। পৃথিবীর যারা পলিসি গ্রহণ করেন এগুলো সমাধানের, তাদের সঙ্গে মিলেমিশে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। শুধু দর্শক হিসেবে থেকে গেলে হবে না। তাদের বন্দুকের গুলি আমাদের গায়ে এসে লাগছে, আমাদের ঘরে এসে পড়ছে, এটা খুব ভালো লক্ষণ না। কাজেই সময় থাকতে এটা সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে আপনার কিছু বলার আছে কি না?

ড. ইউনূস: আমার আর কী বলার আছে। আমার পক্ষ থেকে তাকে কিছু বলার নেই।

Comments

The Daily Star  | English

US states worried about election unrest take security precautions

Many of the most visible moves can be seen in the battleground states that will decide the presidential election, states like Nevada where protests by Trump supporters broke out after the 2020 election.

2h ago