‘প্রকৌশল ত্রুটি’তে ধসে পড়েছে রাবিতে নির্মাণাধীন অডিটোরিয়াম, আহত ৫ নিখোঁজ ২

নিখোঁজ দুই শ্রমিক ঘটনাস্থলে আটকা পড়ে থাকতে পারে—এমন সন্দেহে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে।
নিখোঁজ দুই শ্রমিকের খোঁজে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস। ছবি: আনোয়ার আলী/স্টার

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) একটি হলের নির্মাণাধীন মিলনায়তন ধসে পাঁচ শ্রমিক আহত হয়েছেন এবং দুই শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন।

ফায়ার সার্ভিস ও রাবি কর্মকর্তারা জানান, আহত শ্রমিকদের মধ্যে তিনজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অপর দুইজনকে রাবি মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটার সময় সেখানে ছিলেন ১১ জন শ্রমিক।

তাদের মধ্যে পাঁচজন হাসপাতালে এবং চারজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন দুই শ্রমিক।

নিখোঁজ দুই শ্রমিক ঘটনাস্থলে আটকা পড়ে থাকতে পারে—এমন সন্দেহে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে।

ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা জানান, নিখোঁজ দুই শ্রমিকের অবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তারা উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রাখবেন।

এই ধসের জন্য 'প্রকৌশল ত্রুটি' কে দায়ী করেছে ফায়ার সার্ভিস।

রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক মো. ওয়াহেদুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটা স্পষ্ট যে প্রকৌশল ত্রুটির কারণে ধসের ঘটনা ঘটেছে।'

তিনি বলেন, 'প্রকৌশলগত ত্রুটি নির্ধারণের জন্য পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত প্রয়োজন। এটি দুর্বল স্তম্ভের কারণে হতে পারে কিংবা ছাদ ঢালাইয়ে দুর্বল শাটারিংয়ের কারণেও হতে পারে।'

ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা জানান, শ্রমিকরা ছাদ ঢালাইয়ের সময় বিম ও পিলারসহ ছাদ ধসে পড়ে।

রাবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর জানান, মাদার বক্স হলের দক্ষিণে এ এইচ এম কামারুজ্জামান হলের দশতলা ভবন নির্মাণের জন্য রাবি কর্তৃপক্ষ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান 'মজিদ অ্যান্ড সন্স'কে নিয়োগ দিয়েছে। নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে ছিল এবং নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হলটিতে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি মিলনায়তন নির্মাণ করছিল।

রাবির আরেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল ইসলাম জানান, কীভাবে ভবন ধসের ঘটনা ঘটেছে ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে আজ সন্ধ্যায় ভবনের সব স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে জরুরি বৈঠক ডেকেছে রাবি কর্তৃপক্ষ।

নির্মাণ কাজে অনিয়মের সঙ্গে রাবি কর্তৃপক্ষের জড়িত থাকার প্রতিবাদে কয়েকজন শিক্ষার্থী ধসে পড়া ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছেন। ক্যাম্পাসে কর্মরত নির্মাণ শ্রমিকদের নিরাপত্তার দাবিও জানান তারা।

রাবি ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাকিব হাসান বলেন, 'অডিটোরিয়াম ভবনের একটি স্তম্ভ ভেঙে পড়ার পর ভবনটি ধসে পড়ে। এটাই নির্মাণে ত্রুটিপূর্ণ প্রকৌশলের প্রমাণ।'

তিনি বলেন, 'ক্যাম্পাসে এমন ঘটনা নতুন নয়। নির্মাণাধীন ভবনগুলো প্রায়ই ক্যাম্পাসে ধসে পড়ে। এর আগেও আরেকটি অডিটোরিয়াম ধসে পড়েছিল। ১৭ কোটি টাকার অডিটোরিয়াম নির্মাণে মাত্র ৭ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছিল, এটা ওপেন সিক্রেট।'

তিনি সুষ্ঠু তদন্ত করে আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে রাবির প্রকৌশল বিভাগের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে কল করা হলেও তাদের কেউই কল রিসিভ করেননি।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, ঘটনাস্থলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগ ও কনস্ট্রাকশন ফার্মের কাউকে তারা পাননি।

Comments