আজ গণঅভ্যুত্থান দিবস

গণঅভ্যুত্থান দিবস
ছবি: সংগৃহীত

বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মাইলফলক ঊনসত্তরের ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থান দিবস আজ বুধবার। মুক্তিকামী নিপীড়িত জনগণের পক্ষে জাতির মুক্তি সনদ খ্যাত ছয় দফা ও পরবর্তীতে ছাত্র সমাজের দেওয়া ১১ দফা কর্মসূচির প্রেক্ষাপটে সংঘটিত হয়েছিল এ গণঅভ্যুত্থান।

দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে বাঙালির দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফাভিত্তিক গণ-আন্দোলনের আদর্শকে ধারণ করে অগ্রসরমান সংগ্রামের পথপরিক্রমায় ১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়নসহ প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন ও ১১-দফা দাবি ঘোষণা করেন।

এই ১১-দফা দাবির মূল ভিত্তি ছিল বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ছয় দফা। ছয় দফাভিত্তিক ১১ দফা দাবিতে ছাত্রসমাজের সমস্যাকেন্দ্রিক দাবি-দাওয়ার পাশাপাশি কৃষক ও শ্রমিকদের স্বার্থ সংক্রান্ত দাবিগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই আন্দোলনের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ রাজবন্দিদের মুক্তি।

ছয় দফা ও পরবর্তীতে ১১ দফা কর্মসূচির প্রেক্ষাপটে সংঘটিত হয় ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান। ১৯৬৯ সালের ১৭ জানুয়ারি ছাত্রনেতারা দেশব্যাপী সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের ডাক দিলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনেম খান ছাত্র আন্দোলন দমাতে ১৪৪ ধারা জারি করে।

সরকারি নিপীড়নের প্রতিবাদে ২০ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ছাত্রসভা ও প্রতিবাদ মিছিলের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এ মিছিলে পুলিশের গুলিতে ছাত্রনেতা আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান (আসাদ) নিহত হলে আন্দোলন আরও তীব্র হয়। শহীদ আসাদের আত্মদানের পর ২১, ২২ ও ২৩ জানুয়ারি শোক পালনের মধ্য দিয়ে সর্বস্তরের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ২৪ জানুয়ারি অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়।

পাকিস্তানি সামরিক শাসন উৎখাতের লক্ষ্যে ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি সংগ্রামী জনতা শাসকগোষ্ঠীর দমন-পীড়ন ও সান্ধ্য আইন ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। মিছিলে পুলিশের গুলিতে ঢাকায় সচিবালয়ের সামনের রাজপথে নবকুমার ইনস্টিটিউটের নবম শ্রেণির ছাত্র কিশোর মতিউর রহমান ও রুস্তম শহীদ হন। প্রতিবাদে সংগ্রামী জনতা সেদিন সচিবালয়ে আগুন দেয়।

বিক্ষুব্ধ জনগণ আইয়ুব-মোনেম চক্রের দালাল, মন্ত্রী, এমপিদের বাড়িতে ও তাদের মুখপত্র হিসেবে পরিচিত তৎকালীন দৈনিক পাকিস্তান ও পাকিস্তান অবজারভার অফিসেও আগুন দেয়। ঢাকার পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

এরপর ১৫ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত সার্জেন্ট জহুরুল হক বন্দি অবস্থায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে নিহত হলে প্রতিবাদমুখর হয়ে বাংলার জনগণ। ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. শামসুজ্জোহা নিহত হলে সান্ধ্য আইন উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে আসে ছাত্র-জনতা।

গণঅভ্যুত্থানের প্রবল চাপে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অভিযুক্তদের ও নিরাপত্তা আইনে আটক ৩৪ নেতৃবৃন্দকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় স্বৈরশাসক আইয়ুব খান। ২৩ ফেব্রুয়ারি লাখো জনতার উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সামরিক স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের পতন ঘটে। সেই থেকে ২৪ জানুয়ারি 'গণঅভ্যুত্থান দিবস' হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

দিবসটি উপলক্ষে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় বকশীবাজারে নবকুমার ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে শহীদ মতিউর রহমানের স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে আওয়ামী লীগ।

দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংশ্লিষ্ট সবাইকে কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

Comments

The Daily Star  | English

No justifiable reason to delay nat'l polls beyond Dec: Salahuddin

We have been able to make it clear that there is not even a single mentionable reason to hold the election after December, says the BNP leader

6h ago