নরসিংদীতে জেলেদের জন্য বরাদ্দের চাল আত্মসাতের অভিযোগ ৩ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

Bagerhat_Rice
স্টার ফাইল ছবি

ইলিশ শিকারকারী জেলেদের জন্য ভিজিএফের বরাদ্দকৃত চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে নরসিংদী সদর উপজেলার ৩ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।

নরসিংদী ত্রাণ, পুনর্বাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মতে, ভিজিএফের আওতায় নরসিংদী সদর উপজেলার ৩ ইউনিয়নের ৪০০ জেলের প্রত্যেকের নামে ২৫ কেজি করে ১০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়।

এ তালিকায় থাকা ৪০০ জেলের মধ্যে ৪৫ জনের সঙ্গে কথা বলেছে দ্য ডেইলি স্টার। তারা বলেছেন, বরাদ্দের কোনো চালই তারা পাননি।

ইলিশের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিত করতে সারাদেশে গত ১৪ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। নিষেধাজ্ঞা চলাকালে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলেদের জন্য চাল বরাদ্দ দেয় ত্রাণ, পুনর্বাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর।

নোটিশে বলা হয়েছে, যারা বেঁধে দেওয়া সময়ে ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকবে, কেবল তারাই এ সুবিধা পাবেন। তবে দ্য ডেইলি স্টারের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ওই ৩ ইউনিয়নে চাল বরাদ্দ পেয়েছেন মৃত ব্যক্তি, অপেশাদার ও প্রবাসীরা।

নরসিংদী জেলা খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা শিউলি বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের কাছে প্রশাসন থেকে চিঠি এসেছিল। আমরা গত মাসেই সদর উপজেলার ইউনিয়নগুলোতে ডিলারদের মাধ্যমে চাল দিয়েছি।'

জানতে চাইলে ৩ ইউপি চেয়ারম্যান জানান, বরাদ্দের চাল তারা বিতরণ করেছেন। কিন্তু বরাদ্দের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি জেলে থাকায় তারা সবাইকে চাল দিতে পারেননি।

তবে সংশ্লিষ্ট ২ জন ইউপি সদস্য জানান, জেলেদের জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চাল বরাদ্দ এসেছে কি না এ বিষয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।

তালিকায় থাকা ৪৫ জন জেলে ও তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তাদের মধ্যে ৬ জন মৃত, ৪ জন প্রবাসী ও ১৭ জনের খোঁজ পাওয়া গেছে যারা জেলে নন।

তালিকায় থাকা মৃত ব্যক্তিরা হলেন—আলোকবালী ইউনিয়নের মুরাদনগর এলাকার হাসেম মিয়া, হাবিজ মিয়া, আজি মিয়া, বাখননগর এলাকার অছেদ মিয়া ও করিমপুর ইউনিয়নের তোতা মিয়া, মাদবর আলী।

প্রবাসে রয়েছেন—আলোকবালীর মুরাদনগর এলাকার আবদুল লতিব এবং বাখননগর এলাকার জামাল মিয়া, ইউসুফ মিয়া ও বিল্লাল মিয়া। এর মধ্যে প্রবাসী ইউসুফ মিয়া আলোকবালী ইউনিয়নের সংরক্ষিত আসনের ইউপি সদস্য খোরশিদা বেগমের ভাই। তার স্বামী মিটল মিয়ার নামও তালিকায় রয়েছে, যদিও মিটল মিয়া পেশায় জেলে নন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খোরশিদা বেগম বলেন, 'আমার স্বামী ও ভাইয়ের নাম জেলেদের তালিকায় কারা দিয়েছেন, আমি জানি না। তারা জেলে নন।'

চাল বিতরণের বিষয়ে তিনি বলেন, '২০২২ সালে আমরা কিছু ছেলেকে ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে ২৫ কেজি করে চাল দিয়েছি। কিন্তু এবার তাদের জন্য চাল বরাদ্দ এসেছে কি না আমি জানি না। বরাদ্দ না আসলে চাল কোথায় থেকে বিতরণ করা হবে।'

একই ইউনিয়নের ৭নং ইউপি সদস্য আব্দুল হান্নান মিয়া বলেন, 'আমার এলাকায় মৃত, প্রবাসী, অপেশাদার ও অপেশাদার ব্যক্তিদের নামে চাল বরাদ্দ এসেছে। কারা এ তালিকা তৈরী করেছেন, তা আমার জানা নেই। তবে, ৩ নভেম্বর পর্যন্ত আমার এলাকার বরাদ্দপ্রাপ্ত তালিকায় থাকা ৩৩ জনের কেউ চাল পায় নি। এমন কি আমার পাশের প্রাম বকশালীপুরের ৮ জনও চাল পাননি।'

আলোকবালী ইউনিয়নের মুরাদনগর গ্রামের জিলান মিয়া (৩৫) বলেন, 'আমি গত ২ বছরেও কোনো চাল পাইনি। শুনেছি বরাদ্দপ্রাপ্ত তালিকায় ৪১ নং ক্রমে আমার নাম রয়েছে।'

'আমার নামে বরাদ্দকৃত চাল যারা আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে সরকারের কাছে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি,' বলেন তিনি।

করিমপুর ইউনিয়নের মো.আলমগীর বাশার (৪২) বলেন, 'আমি গত ২০ বছর ধরে ইলিশ শিকার করি। বরাদ্দপ্রাপ্ত তালিকায় আমার নাম শীর্ষে রয়েছে জানতে পারলাম। কিন্তু আমার নামে বরাদ্দকৃত চাল পাইনি এবং কেউ পেয়েছেন কি না তাও জানি না। আমার চাল বরাদ্দ এসেছে, এটাই আপনার কাছে থেকে প্রথম শুনলাম।'

তালিকায় থাকা চরদিঘলদি ইউনিয়নের ১২ জেলের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, তারা কেউ চাল পাননি। তবে 'ঝামেলা এড়াতে' তারা কেউ পরিচয় প্রকাশ করে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

বরাদ্দের চাল কোথায় গেল জানতে চাইলে অভিযুক্ত আলোকবালী ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন সরকার দিপু বলেন, 'আমাদের এলাকায় জেলে সংখ্যা অনেক। কিন্তু বরাদ্দ পেয়েছি মাত্র ১২৫ জনের। তাদেরকে সবাইকে গত অক্টোবর মাসে চাল দিয়েছি। আমাকে হয়রানি করতে আমার নামে মিথ্যা অপবাদ ছড়ানো হচ্ছে। চাল নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে মিথ্যা স্বাক্ষ্য দিলে আমার কী করার আছে!'

চরদিঘলদী ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন শাহীন বলেন, 'আমার ইউনিয়নে চাল বিতরণে কোনো অনিয়ম হয়নি। সঠিক উপায়ে গত ১২ অক্টোবর দিনব্যাপী চাল বিতরণ করা হয়েছে। হয়তো তালিকার ক্ষেত্রে ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতে পারে।'

অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে করিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মুমিনুর রহমান আপেলের মোবাইলে একাধিবার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি।

জানতে চাইলে নরসিংদী জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম বলেন, 'বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
Drug sales growth slows amid high inflation

Drug sales growth slows amid high inflation

Sales growth of drugs slowed down in fiscal year 2023-24 ending last June, which could be an effect of high inflationary pressure prevailing in the country over the last two years.

17h ago