কলেজশিক্ষক নাদিরার নিরাপত্তা ও হুমকিদাতাদের আইনের আওতায় আনার দাবি ১৪৭ নাগরিকের

নরসিংদী সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক নাদিরা ইয়াসমিনের নিরাপত্তা ও তাকে হুমকি দেওয়া ব্যক্তি ও সংগঠনকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন দেশের ১৪৭ নাগরিক।
আজ শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা এ দাবি জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, নাদিরা ইয়াসমিন একজন শিক্ষক, গবেষক ও সমাজ সচেতন নাগরিক, যিনি দীর্ঘদিন ধরে নারী অধিকার, সমতা ও মানবিক মর্যাদার পক্ষে কাজ করে আসছেন।
এতে আরও বলা হয়, তার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা 'নারী অঙ্গন' সংগঠনটি অনেক নারী শিক্ষার্থীর আত্মপ্রত্যয় গঠনে ভূমিকা রেখেছে যেখানে ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা বিবেচনায় রেখে কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
বিবৃতিদাতারা বলেন, সম্প্রতি এই কলেজশিক্ষককে লক্ষ করে বিভিন্ন মাধ্যমে সম্প্রতি তিনটি সংগঠন পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ করছে এবং হুমকি দিচ্ছে। নরসিংদীর তানযীমুল মাদারিসিল কাওমিয়া, খেলাফত মজলিস ও হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে নাদিরাকে চাকরিচ্যুত করার দাবি করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, এছাড়া বিভিন্ন ব্যক্তি ফেসবুকে নাদিরা ইয়াসমিনকে নিয়ে অপমানজনক, বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পোস্ট দিচ্ছেন। নামে-বেনামে তাকে গালাগাল, মিথ্যা প্রচার এবং হুমকির মাধ্যমে তাকে মানসিক এবং সামাজিকভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, নাদিরা ইয়াসমিনের ব্যক্তিগত মেসেঞ্জারে তাকে গালিগালাজ করা হচ্ছে, যা একজন শিক্ষক ও নারীর জন্য শুধু অসম্মানজনকই নয়, সম্পূর্ণ বেআইনি।
'এ ধরনের চাপ সৃষ্টি, হুমকি ও সামাজিক ঘৃণার উসকানি আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাব্যবস্থার জন্য এক অশুভ দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। একজন শিক্ষকের জীবন ও কাজের পরিবেশ ধ্বংস করার এ প্রচেষ্টা শুধু একটি ব্যক্তিকে নয়, পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে,' বলা হয় বিবৃতিতে।
এই আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানিয়ে সহকারী অধ্যাপক নাদিরা ইয়াসমিন ও তার সংগঠনের প্রতি পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করে বিবৃতিদাতারা বারবার নারীর প্রতি অপমান, অসম্মান, হয়রানিতে বর্তমান সরকারের নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তা পরিস্থিতির ক্রম অবনতির কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
এ অবস্থায় বিবৃতিদাতারা নাদিরা ইয়াসমিনের নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছেন।
একইসঙ্গে যারা নাদিরাকে ফেসবুক ও মেসেঞ্জারে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছে ও হুমকি দিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে।
এছাড়া, প্রশাসনকে মিথ্যা প্রচার ও অনলাইন হয়রানি বন্ধে দৃঢ় অবস্থান নেওয়া এবং কলেজ কর্তৃপক্ষ যেন নাদিরার একাডেমিক স্বাধীনতা ও মানবাধিকার রক্ষায় যথাযথ দায়িত্ব পালন করে, তার দাবি জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।
বিবৃতিদাতাদের মধ্যে আছেন: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অ্যাক্টিভিস্ট শামীম আরা নীপা, উন্নয়ন ও সংস্কৃতিকর্মী ওয়ারদা আশরাফ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাজলী সেহরীন ইসলাম, অ্যাক্টিভিস্ট ও উন্নয়নকর্মী মাহমুদা খাঁ, সংস্কৃতিকর্মী কাজী রোকসানা রুমা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা, শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক বীথি ঘোষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, লেখক ও অধিকারকর্মী ফেরদৌস আরা রুমী, উন্নয়নকর্মী নূসরাত খান, প্রকাশক মাহরুখ মহিউদ্দীন, নৃবিজ্ঞানী ও শিক্ষক নাসরিন সিরাজ, অ্যাক্টিভিস্ট প্রাপ্তি তাপসী, সাংবাদিক ও গবেষক সায়দিয়া গুলরুখ, আলোকচিত্রী ও অ্যাক্টিভিস্ট শহিদুল আলম, নৃবিজ্ঞানী ও লেখক রেহনুমা আহমেদ।
এতে আরও সই করেছেন: মানবাধিকারকর্মী জাকিয়া শিশির, গণিতবিদ নাফিসা রায়হানা, গবেষক ও অ্যাক্টিভিস্ট অরুণিমা তাহসিন, সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান, গবেষক মীর হুযাইফা আল মামদূহ, রাজনৈতিককর্মী বাকী বিল্লাহ, শিল্পী ও শিক্ষক মুনেম ওয়াসিফ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মাসুদ ইমরান মান্নু, শিক্ষক ও লেখক শরৎ চৌধুরী, নৃবিজ্ঞানী নাসরিন খন্দকার, কার্টুনিস্ট মেহেদী হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তাসনীম সিরাজ মাহবুব, অ্যাডভোকেট দিলরুবা শরমিন, নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নাভিন মুরশিদ, সংগীতশিল্পী অমল আকাশ, কানাডার ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক হানা শামস আহমেদ, স্থপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সায়কা ইকবাল মেঘনা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রুশাদ ফরিদী প্রমুখ।
Comments