ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাসে যতটা সুরক্ষিত বঙ্গবন্ধু টানেল
ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা বা আগুনসহ ছোট-বড় দুর্যোগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নিরাপদ থাকবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রযুক্তি ও বিশেষজ্ঞ জনবলের নিখুঁত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিচালিত হবে এ টানেল। ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে টানেলকে সুরক্ষা করতে নেওয়া হয়েছে নানান ব্যবস্থা।
প্রকল্প কর্মকর্তারা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, অবস্থানগত কারণেই টানেল সব সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকে। এখানে সামান্য ত্রুটিতেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা আছে। দেশের ও দক্ষিণ এশিয়ার নদীর তলদেশে নির্মিত প্রথম এ টানেলটিকে সুরক্ষিত রাখতে কয়েক ধাপে সর্বোচ্চ সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিটি সুরক্ষা ধাপের আছে একাধিক বিকল্প।
প্রকল্প প্রতিবেদন অনুসারে, চট্টগ্রাম ভূমিকম্পপ্রবণ হওয়ায় রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয় করে টানেলের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়া তিন দশমিক ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ এ টানেলটির প্রবেশ মুখের রেইন শেল্টার ভূমির স্বাভাবিক উচ্চতার চেয়ে সাত দশমিক তিন মিটার উঁচু রাখা হয়েছে। ফলে বৃষ্টিপাত ও স্বাভাবিক জলোচ্ছ্বাসে টানেলের ভেতরে পানি ঢোকার সুযোগ অনেক কম।
তবে সমুদ্র তীরবর্তী হওয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে টানেলের দুই প্রান্তে চারটি ফ্লাড গেট রাখা হয়েছে যা প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা বা আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে সতর্ক সংকেত দেওয়া হলে ফ্লাড গেটগুলো আটকে দেওয়া হবে। ফলে জলোচ্ছ্বাসের সময়ও টানেলের ভেতরে পানি প্রবেশের সম্ভাবনা থাকবে না।
এরপরও পানি ঢুকলে তিনটি পাম্প স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা নিষ্কাশন করবে। ফ্লাড গেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ না হলে বা পাম্প হাউজগুলো কাজ না করলেও একাধিক বিকল্প রাখা হয়েছে। ফলে এ ক্ষেত্রে বিপদের আশঙ্কা কম।
টানেল প্রকল্প পরিচালক মো. হারুনুর রশিদ চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একটি বাহন টানেলের ভেতরে থাকবে তিন থেকে সর্বোচ্চ চার মিনিট। মাটির গভীরে অর্থাৎ সুড়ঙ্গে তাপমাত্রা তুলনামূলক কম থাকে। তবে টানেলের তাপমাত্রা কিংবা বায়ুপ্রবাহ, অক্সিজেন স্বাভাবিক রাখতে প্রতিটি টিউবে ১৪টি করে ২৮টি বৃহদাকার জেট ফ্যান ব্যবহার করা হয়েছে। এসব ফ্যানের মাধ্যমে টানেলের বাইরের পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে বাইরের বাতাস টানেলের ভেতর দিয়ে অপরপ্রান্তে পৌছাতে পারবে। ফলে আলাদা অক্সিজেন সরবরাহের প্রয়োজন হবে না।'
প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, টানেলটি প্রথম শ্রেণির কেপিআই (কি পয়েন্ট ইন্সটলেশন) ও স্পর্শকাতর হওয়ায় এর ভেতরে ১১০টি সিসিটিভি থাকবে। এসব ক্যামেরা ৩৬০ ডিগ্রি এঙ্গেলে ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে পারে।
তাছাড়া টানেল পরিচালনার জন্য প্রতিদিন গড়ে ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হলেও দুই প্রান্তে ৩০ মেগাওয়াট সাব স্টেশন তৈরি করা হয়েছে। বিকল্প হিসেবে টানেলের জন্য স্থাপিত জেনারেটরগুলো টানা ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবে।
এছাড়াও, আইপিএস দিয়ে টানেলে দুই ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে। বিদ্যুৎ চলে গেলে যা এক সেকেন্ডের চার ভাগের এক ভাগ সময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবে। তাছাড়া উভয়প্রান্তে তিনটি করে ছয়টি জেনারেটর রাখা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, টানেলটি কেপিআই স্থাপনা হওয়ার পাশাপাশি দুই কিলোমিটারের মধ্যে শাহ আমানত বিমানবন্দর হওয়ায় এখানে প্রতিটি যানবাহনকে স্ক্যানিংয়ের আওতায় আনা হবে। প্রাথমিকভাবে উভয়প্রান্তে চারটি স্ক্যানার বসানো হলেও পরবর্তীতে আটটি স্ক্যানার বসানো হবে। যাতে কোনো নাশকতায় ব্যবহার করা যায় এমন দ্রব্য নিয়ে কেউ প্রবেশ করতে না পারে। এখানে বিস্ফোরক শনাক্তকরণ যন্ত্রও রাখা হয়েছে।
Comments