গানে-কবিতায়-নাটকে ভোটাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়

শিল্পী অমল আকাশের পরিবেশনায় পারফরমেন্স আর্ট। ছবি: মামুনুর রশীদ/স্টার

'গণতন্ত্রহীনতায়' বাংলাদেশে যে 'দুর্বিষহ' অবস্থা তৈরি হয়েছে তাতে আরেকটি 'ভোটারবিহীন নির্বাচন' হলে তা দেশকে আরও খারাপ পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন ঢাকায় একটি সাংস্কৃতিক সমাবেশের আয়োজকরা।

আজ শুক্রবার বিকেলে শাহবাগে লেখক-শিল্পী-শিক্ষক-সাংবাদিকদের ব্যানারে ভোটাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার দাবিতে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে ছিল প্রতিবাদী গান, পথনাটক, মাইম, পারফরমেন্স আর্ট ও কবিতা পাঠের মতো নানা আয়োজন। আয়োজনের শেষাংশে গান পরিবেশন করে সমগীত সাংস্কৃতিক প্রাঙ্গণ।

সমগীত পরিবেশিত গানের শুরুর কথাগুলো ছিল এ রকম—'দূর করে সংশয়, বল তুমি নির্ভয়/এ দেশ তোমার এ দেশ আমার, ভোট ডাকাতের নয়।'

নারায়ণগঞ্জের ‘শ্রুতি’র মাইম প্রদর্শনী। ছবি: স্টার

সমগীতের গানের এই কথাগুলোর মতোই সমাবেশে পরিবেশিত প্রতিটি গান-নাটক-কবিতা ও অন্যান্য পরিবেশনায় ছিল বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়। সমাবেশের আরেক অংশে ছিল ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী চিত্রকর্ম অঙ্কন ও সংবাদপত্রে প্রকাশিত সরকারবিরোধী কার্টুন প্রদর্শনীর আয়োজন।

সমাবেশের শুরুতে আয়োজকদের পক্ষ থেকে কথা বলেন প্রকাশক বাকি বিল্লাহ। তার ভাষ্য, বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে কথা বলতে, বাংলাদেশের মানুষ ও ভবিষ্যতের পক্ষে দাঁড়াতে তাদের ওপর ইতিহাস-অর্পিত দায়িত্ব পালনের জন্যই তারা এখানে দাঁড়িয়েছেন।  

বাকি বিল্লাহ বলেন, 'ক্ষমতায় আঁকড়ে রাখার মানসিকতা থেকে যে সংকট তৈরি হয়েছে, সেই ক্ষমতাসীনরা আজ জনগণের সংকট উপলব্ধি করতে পারছে না। তাদের রক্ষা করতে হবে এস আলমদের। মানুষ না খেয়ে মারা যাক, মানুষ কথা বলার অপরাধে জেলে যাক, তাতে তাদের কিছু আসে যায় না। কারণ টাকা পাচারকারীদের রক্ষা করাটা আমাদের ক্ষমতাসীনদের প্রধান দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে।'

ফিলিস্তিনে চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী চিত্রাঙ্কন। ছবি: স্টার

তিনি আরও বলেন, 'আমরা চাই বাংলাদেশে যারা ক্ষমতায় থাকবে তাদের ক্ষমতার উৎস যেন হয় মানুষ। যেন তাদের এস আলম, চীন কিংবা আমেরিকার দিকে তাকিয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরতে না হয়।'

এক্ষেত্রে ভোটাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার ভেতর দিয়েই সাধারণ মানুষকে ক্ষমতার উৎস করে তোলা সম্ভব বলে মনে করে আয়োজকরা।

এদিন বিকেল ৪টা থেকে শুরু হওয়া এই সমাবেশের ঘোষণা পাঠ করেন কবি সাখাওয়াত টিপু। এর পরপরই পারফরমেন্স আর্ট প্রদর্শন করেন শিল্পী অমল আকাশ।

সমাবেশে নাটক পরিবেশন করে নাটকের দল 'এই বাংলায়', 'থিয়েটার ৫২', 'বটতলা' 'তীরন্দাজ'। গান পরিবেশন করেন শিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান, মূয়ীয মাহফুজ, আনা নাসরিন। চলে সমকালীন কবিদের কবিতা পাঠ।

সমাবেশে সংহতি জানাতে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, লেখক-গবেষক আলতাফ পারভেজ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রমুখ।

ছিল সংবাদপত্রে প্রকাশিত সরকারবিরোধী কার্টুন প্রদর্শনীর আয়োজন। ছবি: স্টার

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর শাহবাগ থানার একজন উপপরিদর্শক সমাবেশস্থলে এসে আয়োজকদের 'নিরাপত্তার' কারণ দেখিয়ে ৭টার মধ্যে সমাবেশ শেষ করার 'অনুরোধ' করেন ।

এ ব্যাপারে অন্যতম আয়োজক শিল্পী অমল আকাশ বলেন, 'তারা বলতে চাচ্ছে যে আমাদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য এখানে তাদের যথেষ্ট ফোর্স নেই। তাই তারা আমাদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। এর আগে তারা আমাদের ৬টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করতে বলে। তখন আমরা তাদের বোঝাই যে আমাদের এখানে অনেক দূর থেকে শিল্পীরা এসেছেন। অনুষ্ঠান শেষ করতে সময় লাগবে। তারপরও তারা আমাদের ৭টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করার জন্য চাপাচাপি করতে থাকেন।'

 

Comments

The Daily Star  | English

JnU protesters spend night on road, vow to continue sit-in until demands met

As of 10:00am today, demonstrators remain at the site, refusing to leave until their demands are fulfilled

1h ago