সাভারে বেতন দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত ২০

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারখানার সামনে পুলিশের অবস্থান। ছবি: স্টার

ঢাকার সাভারে বেতনের দাবিতে বিক্ষোভরত একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

শ্রমিকরা বলছেন, এতে তাদের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।

আজ শনিবার সকাল ৯টার দিকে সাভারের উলাইল এলাকায় অবস্থিত প্রাইড গ্রুপের এইচ আর টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড ও ফ্যাশন নিট লিমিটেড কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের এই ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে শ্রমিকরা কারখানার সামনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবস্থানকালে শুরুতে পুলিশ ও শ্রমিকদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ও লাঠিচার্জ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সেই সময় শ্রমিকদেরও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে দেখা গেছে।

আন্দোলনরত কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কারখানায় বেতন নিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে তাদের ঝামেলা চলছিল। গতকাল কর্মীদের বেতন দেয় কর্তৃপক্ষ। আজ শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজ সকালে কারখানায় গিয়ে গেটে এক দিনের জন্য সাধারণ ছুটির নোটিশ দেখতে পান শ্রমিকরা। এরপরই মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলার দাবিতে তারা কারখানার সামনে অবস্থান নেন। কিন্তু মালিকপক্ষ কিংবা কারখানার কোনো কর্মকর্তা তাদের সঙ্গে কথা বলতে আসেননি। এতে হাজারো শ্রমিক কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। সকাল ৯টার দিকে পুলিশ এসে শ্রমিকদের কারখানার সামনে থেকে সরে যেতে বলে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আহত এক নারী শ্রমিক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের না জানিয়ে কারাখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর কারণ জানতে আমরা কারখানার সামনে অবস্থান করছিলাম। পুলিশ আমাদেরকে সেখান থেকে সরিয়ে দিতে চায়। আমরা সরতে না চাইলে পুলিশ মারধর শুরু করে।'

'এক পর্যায়ে সড়কে অবস্থান নিতে চাইলে আমাদের লক্ষ্য করে পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে। পুলিশ শ্রমিকদের লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে। আমিসহ অন্তত ২০-২৫ জন শ্রমিক আহত হয়েছি। কয়েকজন শ্রমিকের শরীরে রক্ত দেখতে পেয়েছি,' বলেন তিনি।

জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করেন আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর সহকারী পুলিশ সুপার আফজাল হোসেন। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শ্রমিকদের ওপর লাঠিচার্জ কিংবা রাবার বুলেট ছোড়া হয়নি। শ্রমিকরা মহাসড়কে অবস্থান করে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়েছিল। তাই টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়েছে।'

এ ঘটনায় কেউ আহত হয়নি বলেও দাবি করেছেন তিনি।

'বর্তমানে কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। শ্রমিকরা চলে গেছে,' বলেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

শ্রমিকদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কয়েকদিন ধরে কারখানাটি থেকে সুতাসহ বেশ কিছু কাঁচামাল অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হচ্ছিল। এ কারণে শ্রমিকদের ভেতরে কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আতঙ্ক কাজ করছিল। এর মধ্যেই কারখানাটি গতকাল কর্মীদের বেতন দিয়ে আজ ১ দিনের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। এ নিয়ে শ্রমিকরা কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তাদের ওপর লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়েছে পুলিশ। এতে ২০-২৫ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন।'

অভিযোগের বিষয়ে জানতে কারখানার মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মনিরুল ইসলামের মোবাইলে ফোন করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

সরেজমিনে কারখানায় গেটে গিয়েও কোনো কর্মকর্তার খোঁজ পাওয়া যায়নি।

কারখানার সিকিউরিটি অফিসার শফিকুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আজ কারখানায় কোনো কর্মকতা আসেননি। কারো সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারছি না।'

'আগামীকাল কারখানা খোলা হবে এবং শ্রমিকদের বেতন দেওয়া হবে', বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Stay alert against conspiracies: Fakhrul

BNP Secretary General Mirza Fakhrul Islam Alamgir today urged all to stay alert, warning that conspiracies are underway to once again plunge Bangladesh into new dangers

1h ago