ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ‘গাফিলতিতে’ গেন্ডা-সাধাপুর সড়কে ভোগান্তি

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ‘গাফিলতিতে’ গেন্ডা-সাধাপুর সড়কে ভোগান্তি
গেন্ডা-সাধাপুর সড়ক। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার সাভারের সাধাপুর এলাকার একটি ফার্মাসিউটিক্যালস প্রতিষ্ঠানে হেড অব প্লান্ট অপারেশন পদে কাজ করেন সুকুমার চাকমা। চাকরির সুবাদে তাকে প্রতিদিন সাভারের গেন্ডা-সাধাপুর সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হয়। কিন্তু, দীর্ঘ ৪ বছর আগে শুরু হওয়া সড়কটির উন্নয়ন কাজ আজও শেষ না হওয়ায় তাকে দীর্ঘ পথ ঘুরে যেতে হচ্ছে।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে সুকুমার চাকমা বলেন, 'ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক থেকে আমাদের কারখানায় যাতায়াতের প্রধান সড়ক ২টি। একটি হচ্ছে গেন্ডা-সাধাপুর, অপরটি সাধাপুর-বলিয়ারপুর। ২টি রাস্তার অবস্থাই খারাপ। গেন্ডা-সাধাপুর সড়ক তো পুরোই অচল, আর সাধাপুর-বলিয়ারপুর সড়ক দিয়েও কোনো ভারি যানবাহন চলতে পারে না।'

এই কারণে প্রতিদিন প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ ঘুরে অফিসে যেতে হয় বলে জানান তিনি।

সুকুমার বলেন, 'ঘুরে চলাচল করার কারণে কারখানার পণ্য আনা-নেওয়ার ব্যয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে।'

গেন্ডা-সাধাপুর সাভারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক। এটি গেন্ডা থেকে বলিয়ারপুর যাওয়ার জন্য ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বাইপাস সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বেশ কয়েকটি গ্রামের ওপর দিয়ে যাওয়া এই সড়কের আশেপাশে অন্তত ২০টি শিল্পকারখানা রয়েছে।

ঠিকাদারের 'গাফিলতি'র কারণে দীর্ঘ প্রায় ২ বছর যাবৎ সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী অন্তত ১০টি গ্রামের বাসিন্দা এবং শিল্পকারখানা সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, কর্ণপাড়া থেকে নামাগেন্ডা হয়ে সড়কটির সাধাপুর এলাকা পর্যন্ত পুরোটাই খানাখন্দে ভরা। সড়কের কোনো কোনো অংশ সংস্কারের জন্য খোড়া হয়েছিল। সেগুলো সেভাবেই রয়েছে। কয়েকটি জায়গায় ড্রেন তৈরি করা হলেও কাজ অসমাপ্ত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে। সড়কটির সাধাপুর এলাকায় একটি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ কাজরও অসমাপ্ত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে। সার্বিকভাবে এই সড়কে যানবাহন চলাচল সম্ভব নয়, এমনকি পায়ে হেঁটেও চলাও দুরুহ।

নামাগেন্ডা এলাকার একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক রহিমা বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগে অটোরিকশায় কারখানায় যেতাম। গত ৩/৪ বছর ধরে রাস্তা ভাঙা। এখন আর এখানে অটোরিকশা চলে না। বৃষ্টি হলে তো পায়ে হেঁটেও চলার উপায় থাকে না। বাধ্য হয়ে অনেক পথ ঘুরে কারখানায় যাই।'

সাধাপুর এলাকার রিকশাচালক আব্দুল মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '৪ বছর আগে সড়কের উন্নয়ন কাজ শুরু করেছিল। শেষ না করেই করোনার সময় ঠিকাদার পালিয়ে গেছে। এরপর থেকেই আমাদের ভোগান্তি শুরু।'

এলজিইডির তথ্য মতে, ড্রেন, আরসিসি রোড, গার্ডার ব্রিজ নির্মাণসহ সড়কটি উন্নয়নে মোট ৮টি প্যাকেজে 'দ্বিতীয় নগর অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্প'র আওতায় ২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর ৪৭ কোটি ৬১ লাখ ৪৫ হাজার ৭২৬টাকা ব্যয়ে রাজধানীর শ্যামলী এলাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মর্ডান স্ট্রাকচার্স লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি হয়।

চুক্তি অনুযায়ী, সড়ক উন্নয়ন কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২ নভেম্বর এবং কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২১ সালের ১২ মার্চ। চুক্তি মোতাবেক কাজ শুরু হলেও নির্ধারিত সময়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজ শেষ করেনি।

পরবর্তীতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ শেষ করার জন্য ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। কিন্তু, তারা ৫৫ শতাংশ কাজ করে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর বাকি কাজ সমাপ্ত করতে অপারগতা প্রকাশ করে। গত ১ জানুয়ারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চুক্তি বাতিল করা হয়।

এই চুক্তি বাতিলের পর গত ১৭ জানুয়ারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি তাদের নিরাপত্তা জামানত ফেরত পেতে এলজিইডির ঢাকা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ঢাকার একটি আদালতে মামলা করে। মামলাটি গত ১৩ মার্চ খারিজ করে দেন আদালত।

এ বিষয়ে এলজিইডি ঢাকা জেলার সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মো. মাসুদুর রহমান মল্লিক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার তাগিদ দেওয়া সত্যেও তারা নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় বর্ধিত সময় দেওয়া হয়।'

তিনি বলেন, 'বর্ধিত সময়েও তারা কাজ শেষ করেনি। ৫৫ শতাংশ কাজ শেষ করে বাকি কাজে তারা অপারগতা প্রকাশ করে। মাঝে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়ের করা একটি মামলার জটিলতার কারণে সড়কটির অবশিষ্ট কাজের টেন্ডার আহ্বান করা যাচ্ছিল না। আদালত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মামলাটি খারিজ করে দিয়েছেন।'

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'চুক্তির শর্ত ভঙ্গের কারণে নিরাপত্তা জামানতের প্রায় ৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা তারা ফেরত পাবে না। এটা তাদের জরিমানা।'

'সড়কের বাকি কাজ শেষ করার জন্য ২৭ কোটি টাকার এস্টিমেট পেপার প্রকল্প পরিচালকের কাছে গত ৩০ মে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি এ মাসের মধ্যেই টেন্ডার আহ্বান করা হবে এবং অতি দ্রুত সড়কের বাকি কাজ শেষ করা হবে।,' যোগ করেন তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মর্ডান স্ট্রাকচার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. রাশেদ খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যায়নি। কর্মকর্তারা তো শুধু নিজেদের কথাই বলবে, আমাদের সমস্যা বুঝবেন না। এই বিষয়ে অনেক কথা আছে, ফোনে এতো কথা বলা যাবে না।'

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

14h ago