পর্যাপ্ত কোরবানির পশু থাকলেও দাম বেশি
গো-খাদ্যের দাম ও পশুপালনের খরচ বেড়ে যাওয়ায় এ বছর ঈদুল আযহায় পাবনা ও সিরাজগঞ্জে কোরবানির পশুর দাম গত বছরগুলোর তুলনায় বেশি বলে জানিয়েছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা।
তারা আরও জানান, খামার পর্যায়ে গত বছর ছোট ও মাঝারি আকৃতির গরুর (৩ থেকে ৫ মন) মনপ্রতি দাম ছিল ২৬ থেকে ২৭ হাজার টাকা এবং বড় গরু (৫ মনের উপরে) মনপ্রতি ২৩ থেকে ২৪ হাজার টাকা।
তাদের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, এ বছর ছোট ও মাঝারি আকৃতির গরু (৩ থেকে ৫ মন) মনপ্রতি ২৭ থেকে ২৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড় গরু (৫ মনের বেশি) বিক্রি হচ্ছে মনপ্রতি ২৫ থেকে ২৬ হাজার টাকায়।
প্রাণিসম্পদ বিভাগের সূত্র মতে, এ বছর দেশে কোরবানির পশুর যোগান গত বছরের তুলনায় বেশি। দেশীয় পশু দিয়েই কোরবানির চাহিদা মেটানো যাবে বলে তাদের আশা।
দেশের অন্যতম বৃহত্তম পশু উৎপাদনকারী জেলা পাবনা ও সিরাজগঞ্জে কয়েকটি খামার ও হাট ঘুরে দেখা গেছে, ঈদকে সামনে রেখে খামারি ও ব্যবসায়ীরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন। এ বছর বড় গরুর তুলনায় ছোট ও মাঝারি গরু পালনে বেশি মনযোগী খামারিরা।
পাবনা সদর উপজেলার জালালপুর গ্রামের খামারি রাজু আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছর ৪০টি গরু বিক্রি হলেও আশানুরূপ দাম পাইনি। এ বছর ৩০টি গরু পালন করেছি। ইতোমধ্যে ২৬টি গরু কেনার জন্য ঢাকার ব্যবসায়ীরা বায়না করে গেছেন।'
তিনি জানান, তার খামারে ৭০০ থেকে ১ হাজার ১০০ কেজি ওজনের গরু রাখা হয়েছে। প্রায় ১ বছর লালন-পালন করতে প্রতিটি গরুতে শুধু খাবার খরচ হয়েছে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা।
তিনি বলেন, 'গো-খাদ্যের দাম বছরজুড়ে বেশি থাকলেও এখন কিছুটা কম। তবে এতে খামারিদের লাভ হয়নি। পশু পালনে খরচ কমেনি।'
পাবনার ফরিদপুর উপজেলার পুরস্কারপ্রাপ্ত খামারি সাইফুল আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পশু পালনে খরচ বেশি হওয়ায় এ বছর খামার থেকে ছোট ও মাঝারি আকৃতির গরু (৩ থেকে ৫ মন) মনপ্রতি ২৭ থেকে ২৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড় গরু (৫ মনের বেশি) মনপ্রতি ২৫ থেকে ২৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।'
তিনি জানান, তার খামারে প্রায় ৭০টি গরু আছে। এর মধ্যে কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য ১০টি গরু মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে। তবে এখনো কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা পাননি।
'পাইকাররা এখনো সেভাবে গরু কিনছেন না। বাইরে থেকেও ক্রেতারা সেভাবে আসছেন না। কাঙ্ক্ষিত দামে গরু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি,' যোগ করেন তিনি।
পার-ফরিদপুর গ্রামের গরু ব্যবসায়ী মো. আলহাজ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর আশানুরূপ বেচাকেনা না থাকায় খামারিদের কাছে এখনো গরু বায়না করিনি।'
তিনি আরও বলেন, 'গত সপ্তাহে পাবনা ও সিরাজগঞ্জের ৪টি হাটে ১০টি গরু বিক্রি করে কাঙ্ক্ষিত দাম পাইনি। বাজারে গরুর আমদানি বেশি থাকলেও এখনো ক্রেতার আশানুরূপ ভিড় নেই। গরুর দাম বেশি হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত ব্যবসা সম্ভব হচ্ছে না।'
অবৈধ পথে আসা বিদেশি পশু বিক্রি বন্ধের দাবি করেছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা।
পাবনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আল মামুন হোসেন মণ্ডল ডেইলি স্টারকে জানান, এ বছর কোরবানির ঈদ উপলক্ষে পাবনায় প্রায় ১ লাখ ৭৪ হাজার গরু, ৪ লাখ ২৯ হাজার ছাগল-ভেড়া ও ৫ হাজার ৯২৫ মহিষ প্রস্তুত করা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গৌরাঙ্গ কুমার তালুকদার ডেইলি স্টারকে জানান, এ বছর সিরাজগঞ্জে প্রায় ১ লাখ ৭১ হাজার গরু, ১ লাখ ৮৭ হাজার ছাগল, ৬০ হাজার ১১৩ ভেড়া ও ৩ হাজার ৬৭৪ মহিষ প্রস্তুত করা হয়েছে।
এই ২ জেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা আরও জানান, দেশে কোরবানির পশুর প্রায় ১০ শতাংশের যোগান দেন পাবনা ও সিরাজগঞ্জের খামারিরা। জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে সেগুলো সরবরাহ করা হয়।
প্রাণিসম্পদ বিভাগের উপ-পরিচালক (খামার) মো. শরিফুল হক ডেইলি স্টারকে জানান, এ বছর দেশে প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ পশু প্রস্তুত করা হয়েছে যা গত বছরের তুলনায় বেশি।
গত বছর ১ কোটি ১৯ লাখ কোরবানির পশু প্রস্তুত করা হয়। এর মধ্যে প্রায় ৯০ লাখ ৯৩ হাজার পশু কোরবানি হয়।
গত বছরের তুলনায় এ বছর কোরবানির সংখ্যা বাড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'যোগান বেশি থাকায় দেশীয় পশু দিয়েই এবার কোরবানির চাহিদা পূরণ করা যাবে।'
সাধারণ ক্রেতাদের সংশয়
পাবনার প্রবীণ বাসিন্দা আব্দুল মতিন খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সারা বছর সংসার খরচের থেকে সঞ্চয় করে একটা ছোট গরু নিজেই কোরবানি দেওয়ার চেষ্টা করি। প্রতি বছর ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার মধ্যে গরু কিনি।'
'এ বছর এই টাকায় কোরবানির পশু কিনতে পারবো কি না তা নিয়ে সংশয় আছে,' যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, 'চাইলেই ১০/১৫ হাজার টাকা বেশি দিয়ে পশু কেনা সম্ভব হবে না। বাজেটের মধ্যে পশু কিনতে না পারলে ভাগে কোরবানি দেওয়ার কথা ভাববো।'
পাবনা শহরের নুরপুর এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জুবায়ের হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত কয়েক বছর ধরে ১০ হাজার টাকার মধ্যে একভাগে কোরবানি দিতে পারলেও এ বছর তা সম্ভব হবে কি না জানি না।'
আব্দুল মতিন খান ও জুবায়ের হোসেনের মতো আরও অনেকে মনে করছেন, বর্তমান চড়া বাজার দরে পশু কিনে কোরবানি দেওয়া কঠিন হবে।
Comments