স্বাস্থ্যসেবা সারা দেশের মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে: প্রধানমন্ত্রী

‘কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে কেন্দ্র করে বিশাল কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।’
মন্ত্রিপরিষদ সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার উদ্ভাবিত কমিউনিটি ক্লিনিকের বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, স্বাস্থ্যসেবা সারা দেশের মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে।

তিনি বলেন, 'এমনকি আমি নিজেও জানতাম না যে প্রস্তাবটি (কমিউনিটি ক্লিনিকের বিষয়ে) কখন জাতিসংঘে উত্থাপিত হয়েছিল। প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে পাস হওয়ার পর জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি আমাকে অবহিত করেছিলেন।'

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) মন্ত্রিসভা কক্ষে মন্ত্রিসভার সাপ্তাহিক বৈঠকে সভাপতিত্বকালে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

মন্ত্রিসভার পক্ষ থেকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ প্রধানমন্ত্রীর এমন মানবিক উদ্যোগের জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাতে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন।

প্রধানমন্ত্রী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিকভাবে ৭০টি দেশকে ধন্যবাদ জানাতে বলেন, যারা প্রস্তাবটি কো-স্পন্সর করেছে এবং জাতিসংঘের সবকটি সদস্য দেশ সর্বসম্মতভাবে এটিকে সমর্থন করেছে।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, 'সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবাগুলো প্রতিটি মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে এবং সাধারণ মানুষ সেখানে চিকিৎসা নিতে আসছে।'

তিনি বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে কেন্দ্র করে বিশাল কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকারের কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার অভিজ্ঞতা সেসব দেশে ভাগ করে নিতে চায়, যারা এখনো তাদের দেশের তৃণমূল পর্যায়ে চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন, 'অনেক দেশ এখনো মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে পারেনি। তারা চাইলে আমরা তাদের কাছে আমাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করব।'

সব মানুষের দোরগোড়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্যোগের স্থপতি শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর তারা সীমিত সম্পদ নিয়ে এই কার্যক্রম শুরু করেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ১১ হাজার বাড়ি তৈরি করেছে এবং ৪ হাজার বাড়িতে স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করেছে।

তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র চালু করার ফলাফল সম্পর্কে জানার জন্য তারা এক বছর পর একটি জরিপ পরিচালনা করে এবং এর সাফল্যের হার ৭০ শতাংশের বেশি পাওয়া গেছে।

ইতিবাচক ফলাফল দেখে তিনি বলেন, ওই সময়ে সরকার এই সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে ১১ হাজার বাড়িতে স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণের ব্যবস্থা নেয়।

শেখ হাসিনা বলেন, কিন্তু তার সরকারের ৫ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ায় তারা তা করতে ব্যর্থ হয়।

২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেয়। কারণ তারা মনে করেছিল সেখান থেকে চিকিৎসা নেওয়া জনগণ নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে।

আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জামায়াত সমর্থকসহ সব মানুষ ক্লিনিক থেকে চিকিৎসাসেবা নিলেও বিএনপি-জামায়াত জোট কেন কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দিয়েছিল, সে প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার পর তারা ট্রাস্ট গঠনের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেছেন, যাতে এটি আর কেউ বন্ধ করতে না পারে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তিনি কমিউনিটি ক্লিনিকের উদ্যোগ নিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু স্বাস্থ্যসেবা দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ইউনিয়ন পর্যায়ে একটি ১০ শয্যার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা এজন্য জনগণকে ধন্যবাদ জানান। কারণ তারা ভোটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করে বারবার তাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন।

বুলেট, বোমা ও গ্রেনেড থেকে রক্ষা পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, 'গ্রেনেড, বোমা ও বুলেট হামলার পরও আমি বেঁচে আছি বলে আল্লাহর কাছে আমার সকল কৃতজ্ঞতা। আমি এখনো দেশবাসীর কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি।'

সম্প্রতি জাতিসংঘে (ইউএন) বাংলাদেশে কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হওয়ায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পেয়েছে।

এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 'কমিউনিটি-ভিত্তিক প্রথমিক স্বাস্থ্যসেবা: সার্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা অর্জনে একটি অংশগ্রহণমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতি' শিরোনামের প্রস্তাবটি কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা উদ্ভাবনী সেবা উদ্যোগ গড়ে তুলেছেন এবং সেই উদ্যোগের আওতায় জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে দেশে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত রেজুলেশনে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফল উদ্ভাবনী উদ্যোগকে ব্যাপকভাবে স্বীকৃতি দেয় এবং এই উদ্যোগটিকে 'শেখ হাসিনা উদ্যোগ' নামে অভিহিত করে।

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka, Beijing to ink 20 MoUs but loan deal unlikely

Dhaka and Beijing will sign around 20 MoUs, including some on trade and economic cooperations, during Prime Minister Sheikh Hasina’s visit to China that begins today.

6h ago