কক্সবাজার

৫ মরদেহের একাধিক দাবিদার, পরিচয় শনাক্ত হবে ডিএনএ পরীক্ষায়

উপকূলে আনা ট্রলার থেকে লাশ উদ্ধার করছে ফায়ার সার্ভিস। গত রোববার দুপুরে কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক সমুদ্র উপকূলে। ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের নাজিরারটেকের উপকূলে গতকাল ভেসে আসা ছোট একটি ট্রলার থেকে হাত-পা বাঁধা ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। 

এর মধ্যে ৫টি মরদেহের দাবিদার হিসেবে একাধিক স্বজন আসায়, ডিএনএ পরীক্ষা করে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করার পর মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।

আজ সোমবার পুলিশ জানায়, গতকাল ভেসে আসা ট্রলারে থাকা ১০ মরদেহের মধ্যে ৫ জনের পরিচয় স্বজনরা শনাক্ত করেছেন। অপর ৫ জনের মরদেহ দাবি করেছেন একাধিক স্বজন।

আজ সোমবার দুপুরে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে মরদেহগুলো দেখতে যান পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'ট্রলার থেকে মৃত উদ্ধার ১০ জনের মধ্যে ৫ জনের পরিচয় স্বজনরা শনাক্ত করতে পেরেছেন। লাশগুলো অর্ধগলিত ও বিকৃত হয়ে গেছে। বাকিগুলো এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। মরদেহের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হবে। নমুনা স্বজনদের সঙ্গে মিলিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করা হবে।'

সোমবার দুপুরে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে মরদেহ দেখতে গিয়ে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

এ বিষয়ে সিআইডির চট্টগ্রাম জোনের ডিআইজি মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, 'সব মরদেহের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য। সেই নমুনাগুলো তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে মিলিয়ে পরিচয় শনাক্তের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

'যেসব মরদেহের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে, সেগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে কি না, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি,' যোগ করেন তিনি।

স্বজনদের দেওয়া তথ্য মতে, ৫টি মরদেহ মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের হরিয়ারছড়া এলাকার ছনখোলা পাড়ার শামশুল আলম ওরফে শামশু মাঝি (৪০), শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি এলাকার মো. সাইফুল ইসলাম (১৮) একই এলাকার মো. সাইফুল্লাহ (২৩) ও শওকত ওসমান (১৮) এবং চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের জঙ্গলকাটা এলাকার মো. তারেক জিয়ার (১৮)।

তাদের মধ্যে শামশু মাঝি উদ্ধারকৃত ট্রলারটির মালিক ও মাঝি বলে দাবি স্বজনদের।

পরিচয় চূড়ান্তভাবে শনাক্ত না হলেও মর্গে খুঁজতে আসা স্বজন ও পুলিশ সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী নিহত অপর ৫ জন হলেন-মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি এলাকার নুরুল কবির (২৩), একই এলাকার মোহাম্মদ পারভেজ মোশারফ (১৫), ওসমান গণি (১৭), চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের বটতলী এলাকার সাইফুল ইসলাম (৩৬) ও একই ইউনিয়নের জঙ্গলকাটা এলাকার মো. শাহজাহান (২৯)।

স্বজনরা জানিয়েছেন, এই ১০ জন গত ৭ এপ্রিল বঙ্গোপসাগরে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন।

'তবে এ পরিচয় প্রাথমিক' উল্লেখ করে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নিখোঁজদের পরিবারের স্বজনরা কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে এসেছেন। নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাদের ডিএনএর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার ব্যবস্থা হচ্ছে।'

'ডিএনএ পরীক্ষার পর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাবে। এরপরই মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে,' যোগ করেন তিনি।

গতকাল রোববার দুপুরে কক্সবাজারের স্থানীয় কয়েকটি মাছ ধরার ট্রলারের মাঝিরা বঙ্গোপসাগরের সোনাদিয়া দ্বীপের পশ্চিমে গভীর বঙ্গোপসাগরে ছোট আকৃতির মাছ ধরার ট্রলারটিকে ভাসতে দেখে সেটি নাজিরারটেক এলাকার কূলে নিয়ে আসে।

ট্রলারের হিমঘরের ভেতরে মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয় তারা। এরপর পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ট্রলারটির বরফ মজুত রাখার জায়গা থেকে একে একে মরদেহগুলো উদ্ধার করে।

মরদেহ শনাক্ত করতে আসা ওসমান গণির মা দাবি করা জোহরা বেগম ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, পরিবারের কাউকে না বলে তার ছেলে সাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। তাদের ট্রলারটি জলদস্যুর কবলে পড়েছিল বলে তারা শুনেছেন। 

রোববার মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়ে ছেলের খোঁজে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে আসেন তিনি। শার্ট-প্যান্ট দেখে ছেলের মরদেহ শনাক্ত করার কথা জানান জোহরা বেগম।

মহেশখালীর শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি গ্রামের বাসিন্দা আলী আজগর ডেইলি স্টারকে বলেন, শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি গ্রামের সাইফুল, শওকত, ওসমান গনি, সাইফুল্লাহ, পারভেজ মোশাররফ ও নুরুল কবির সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হয়।

তিনি বলেন, 'নিখোঁজ এই ৬ জনই আমার স্বজন। পরনের কাপড় দেখে ৬ জনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে।'  

পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, '১০-১২ দিন আগে কিছু লোক সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ফিরে না আসার খবর ছিল আমাদের কাছে। যদিও এ সংক্রান্ত দাপ্তরিক কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।'

তিনি আরও বলেন, 'কেউ তাদের হত্যা করেছে কি না, পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর উদঘাটন করা হবে।'

গতকাল মরদেহগুলো উদ্ধারের পর কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেছিলেন, 'ট্রলারের ভেতরে থাকা মরদেহগুলো পচে গেছে। ধারনা করা হচ্ছে কমপক্ষে ১০-১২ দিন আগে ট্রলারটি ডাকাতের কবলে পরে। সব মরদেহ ট্রলারের কোল্ড স্টোরেজের (হিমঘর) ভেতরে ছিল।'

উদ্ধার করা মরদেহগুলোর পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব না হলেও, মরদেহগুলো কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে আনার পর স্বজনদের অনেকে ভিড় জমান। 

তারা নিহতদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ, পরনের পোশাক ও অন্যান্য জিনিসপত্র দেখে মরদেহ শনাক্তের দাবি করেন। তবে এর মধ্যে ৫ জনের মরদেহ একাধিক স্বজন দাবি করায় পরিচয় শনাক্ত করতে বিড়ম্বনায় পড়ে পুলিশ।

সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ট্রলারগুলোতে সাধারণত নাম লিখা থাকলেও, উদ্ধার করা ট্রলারটিতে কোনো নাম লেখা ছিল না।

Comments

The Daily Star  | English

Nowfel gained from illegal tobacco trade

Former education minister Mohibul Hassan Chowdhoury Nowfel received at least Tk 3 crore from a tobacco company, known for years for illegal cigarette production and marketing including some counterfeit foreign brands.

9h ago