১০ মরদেহ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি, প্রশ্নের উত্তর মিলছে না
কক্সবাজারে গত রোববার ভেসে আসা ট্রলার থেকে ১০ মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার ধোঁয়াশা কাটেনি। ঘটনা তদন্তে জেলা পুলিশ, সিআইডিসহ পুলিশের ৫টি দল কাজ করছে।
এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একটি মামলা হয়েছে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাহফুজুল ইসলাম এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন।
ট্রলার মালিক সামশুল আলম ওরফে সামশু মাঝির স্ত্রী রোকেয়া আক্তার বাদী হয়ে মামলাটি করেন। ভেসে আসা ১০ মরদেহের একটি সামশুর বলে দাবি স্ত্রী রোকেয়ার।
এসপি জানান, মামলায় ৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং ৬০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। মামলার ১ নম্বর আসামি মাতারবাড়ি এলাকার ট্রলার মালিক বাইট্টা কামাল ও ৪ নম্বর আসামি ট্রলার মাঝি করিম সিকদারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ দুজন ১০ জেলের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানান তিনি।
এসপি মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, 'এ ঘটনার কোনো ক্লু এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। নিহতদের স্বজন ও ঘটনায় সংশ্লিষ্ট যাদের নাম পাওয়া যাচ্ছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।'
পুলিশ সুপার বলেন, 'ওই ঘটনায় বেশ কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেলে ঘটনার মূল রহস্য বের করা সম্ভব হবে।'
গত রোববার দুপুরে কক্সবাজারের স্থানীয় কয়েকটি মাছ ধরার ট্রলারের মাঝিরা বঙ্গোপসাগরের সোনাদিয়া দ্বীপের পশ্চিমে গভীর বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ট্রলারটিকে ভাসতে দেখে সেটি নাজিরারটেক এলাকার কূলে নিয়ে আসে।
ট্রলারের হিমঘরের ভেতরে মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয় তারা। এরপর পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ট্রলারটির বরফ মজুত রাখার জায়গা থেকে একে একে ১০ জনের হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করে।
সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ট্রলারগুলোতে সাধারণত নাম লিখা থাকলেও, উদ্ধার করা ট্রলারটিতে কোনো নাম লেখা ছিল না।
কক্সবাজার জেলার ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ট্রলারটি সমিতির আওতাভুক্ত নয়। মৃতরা প্রকৃত জেলে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।'
'সাধারণত জলদস্যুদের ব্যবহৃত ট্রলারগুলোর নাম থাকে না,' দাবি তার।
এদিকে পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ট্রলারটির মালিক মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের হরিয়ারছড়া এলাকার ছনখোলা পাড়ার সামশুল আলম ওরফে সামশু মাঝি। তার মরদেহ শনাক্ত করেছেন তার স্ত্রী রোকেয়া আক্তার।
পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত ১১ এপ্রিল সাগর থেকে ফিরে এসে ৬ জন জেলে নিহতদের স্বজনদের জানিয়েছেন যে সাগরে ডাকাতি করতে গিয়ে কয়েকজন হামলার শিকার হয়েছেন এবং তাদের ট্রলারের বরফের ঘরে বন্দি করে ট্রলারটি ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ওই ৬ জেলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সামশু মাঝির ট্রলারে করে ৭ এপ্রিল সাগরে যান ১৯ মাঝি। ৯ এপ্রিল সাগরে মাছ ধরার ট্রলারে ডাকাতির অভিযোগে মাতারবাড়ির এলাকার বাইট্টা কামাল ও একই এলাকার নুর হোসাইন বহদ্দারের মালিকানাধীন দুটি ট্রলার এবং আরও ৪-৫ টি ফিশিং ট্রলার সামশু মাঝির ট্রলারটিকে ধাওয়া করে।
এ তথ্য তারা কীভাবে জেনেছেন বা অপর ৪-৫টি ট্রলার কাদের, তা জানতে আরও জিজ্ঞাসাবাদ জরুরি বলে পুলিশ সুপার উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, 'নানাভাবে নানা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সব বিবেচনা করে মামলার তদন্ত চলছে। এ ঘটনার রহস্য বের করতে পুলিশের ৫টি দল কাজ করছে। ইতোমধ্যে নুরুল কবির ও সামশু মাঝির বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও হত্যা মামলা আছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।'
'নিহতদের মধ্যে এমন কয়েকজনকে পাওয়া গেছে যারা এর আগে কখনো সাগরে যাননি বলে স্বজনরা দাবি করছেন। তাদের দাবি, নিহত নুরুল কবির তাদের ডেকে সাগরে নিয়ে গেছেন,' বলেন তিনি।
এসপি মো. মাহফুজুল ইসলাম আরও জানান, এর বাইরে এ ঘটনার সঙ্গে মাদক সংক্রান্ত একটি বিষয়ের সংশ্লিষ্টতাও সামনে এসেছে।
ট্রলারে পাওয়া ১০ মরদেহের মধ্যে ৬ জনের মরদেহ গতকাল স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষায় নিশ্চিতের পর বাকি ৪ জনের মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।
ইতোমধ্যে সামশু মাঝি, চকরিয়ার তারেক, মোহাম্মদ শাহজাহান, শাপলাপুর ইউনিয়নের সওকত, গণি ওসমান, নুরুল কবিরের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
বাকি ৪ জনকে স্বজনরা প্রাথমিকভাবে শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (১৮), সাহাব মিয়ার ছেলে সাইফুল্লাহ (২৩), মোহাম্মদ আলীর ছেলে পারভেজ মোশাররফ (১৪), চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের কবির হোসাইনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩৪) বলে দাবি করেছেন।
Comments