সন্তানদের বোঝা হতে চান না তিনি

তেজগাঁও, নাখালপাড়া,
পচে যাওয়া কাটা তরকারি বিক্রি করছিলেন ষাটোর্ধ্ব নারী। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে 'ফকিন্নিবাজার' নামে পরিচিত বাজারে অর্ধেক পচে যাওয়া কাটা তরকারি বিক্রি করছিলেন ষাটোর্ধ্ব এক নারী।

বিয়ের পর নরসিংদীর রায়পুরা থেকে স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় আসেন তিনি। তার সংসারে আছে ২ মেয়ে, ৩ ছেলে।

পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এই নারী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার স্বামী মুরগির ব্যবসা করতেন। ২০০৬ সালে অসুস্থ হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর ৫ সন্তানদের নিয়ে আমি দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। তারা সবাই ভালো স্কুলে পড়ত। কিন্তু, স্বামী মারা যাওয়ার পর আর্থিক অনটনে তাদের বেশিদূর পড়াতে পারিনি।'

স্বামী মারা যাওয়ার পর একটি গার্মেন্টসে চাকরি নিয়েছিলেন তিনি। জীবনের সঙ্গে লড়াই করে সন্তানদের বড় করেছেন। ছেলেদের এখন সংসার হয়েছে। এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন, আরেক মেয়ে গার্মেন্টসে কাজ করেন।

তবে, এই বয়সে অসুস্থ শরীর নিয়ে তরকারি বিক্রিকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন এই নারী।

'আমি সন্তানদের কাছে বোঝা হতে চাই না। জিনিসপত্রের যা দাম তাতে ওদের নিজেদের সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হয়। আমি তাই তরকারি বিক্রি করে কিছুটা হলেও সংসারে সাহায্য করার চেষ্টা করি,' বলেন তিনি।

দুই বছর আগে জরায়ুতে টিউমার ধরা পড়ে ষাটোর্ধ্ব এই নারীর। তখন অনেক কষ্টে বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্থ সংগ্রহ করে চিকিৎসা করান। বয়সের কারণে বর্তমানে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন তিনি। উচ্চ রক্তচাপ, স্পাইনাল কর্ডে সমস্যা নিয়েও বাজারে তরকারি বিক্রি করেন।

ফকিন্নি বাজারে গিয়ে তার সঙ্গে কথা হয় দ্য ডেইলি স্টারের। 'বেচাবিক্রি কেমন' জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'সকালে কাওরানবাজার আড়তে যাই। আড়তদাররা ফাটা ও ভাঙা তরকারি আলাদাভাবে কম দামে বিক্রির জন্য রাখে। সেখানে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলি। আমি কিছুটা নরম সূরে তাদেরকে বোঝাই যেন বেশি দাম না হাঁকে।'

'আজ সকালে ৩০০ টাকার তরকারি এনেছি। বেগুন, পেয়ারা, টমেটো, তরমুজ, পেপে ইত্যাদি। বিভিন্ন জায়গা থেকে এগুলো সংগ্রহ করেছি। কোনোটা ৫০ টাকা, কোনোটা ১০০ টাকা দরে কিনেছি। তারপর এখানে দোকান সাজিয়ে বসলাম।'

'কোনো কোনো দিন ৩-৪ ঘণ্টায় বিক্রি হয়ে যায়। কোনোদিন আরও দেরি হয়। সবজি কেনা ছাড়াও আমার আরও অনেক খরচ আছে। আজকে ৭০ টাকা রিকশাভাড়া দিয়ে এগুলো আনলাম। এখানে বসার জন্য আমাকে দৈনিক ১০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। সব খরচ সামলে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ টাকার মতো লাভ হয় আমার,' বলেন তিনি।

ঢাকার নাখালপাড়ায় ৩ রুমের একটি ভাড়াবাসায় সন্তানদের সঙ্গে থাকেন এই বয়োজ্যেষ্ঠ নারী। ১৫ হাজার টাকা বাসাভাড়া দিয়ে টেনেটুনে কোনোমতে সংসার চলে।

তিনি বলেন, 'বাসাভাড়া ছেলেরা দেয়। আমার উপার্জনের টাকায় আমি ব্যক্তিগত খরচ করি। নিজের ওষুধপত্র আমি নিজের টাকায়ই কিনি। আমার আত্মসম্মানবোধ আছে। তাই নিজে পরিশ্রম করে খাই।'

সন্তানদের চাকরির বিষয়ে তিনি বলেন, 'মেয়ের চাকরির বেতনে মেয়ে চলবে। ছেলেদের উপার্জনে তাদের সংসার চলবে। আমারটা আমিই চালাবো। কারো বোঝা হবো না। এটাই আমার নীতি।'

Comments

The Daily Star  | English

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

8h ago