প্রথম আলোর সম্পাদক-সাংবাদিকের বিরুদ্ধের মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান ৪১ নাগরিকের

মতিউর রহমান ও শামসুজ্জামান শামস
মতিউর রহমান ও শামসুজ্জামান শামস

প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ও প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসের বিরুদ্ধে দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৪১ নাগরিক।

আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো ওই বিবৃতিতে তারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।

বিবৃতিতে তারা বলেন, 'আমরা জানতে পেরেছি, প্রথম আলো সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান ও পত্রিকাটির নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। কোনো সংবাদ প্রকাশে কোনো ব্যক্তি সংক্ষুব্ধ হলে তিনি প্রতিবাদ জানাতে পারেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ ও মামলা দায়ের করতে পারেন। এভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি পত্রিকার সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং রাতের অন্ধকারে নিজস্ব প্রতিবেদককে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে বাসা থেকে তুলে নেওয়া দেশে আইনের শাসনের পরিপন্থী। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ প্রয়োগ করে এভাবে মামলা দায়ের ও গ্রেপ্তার করার ফলে দেশে মুক্তচিন্তা, বাক স্বাধীনতা এবং স্বাধীন সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে কণ্ঠরোধ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করবে। আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অবিলম্বে বাতিল করার আহ্বান জানাই।'

এতে আরও বলা হয়েছে, 'সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি ঘটনায় আমরা দেখতে পেয়েছি,  সাংবাদিক নির্যাতনের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। ভিন্নমত ও সরকারের সমালোচনা দমনে এই আইনের নজিরবিহীন অপপ্রয়োগ চলছে। ভিন্নমত দমন ও সমালোচনার সীমারেখা এতটাই টেনে দেওয়া হয়েছে যে, এখানে স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্র দিন দিন সংকুচিত হয়ে পড়ছে। দেশে একটি ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। যার ফলে অনেকে স্বাধীনভাবে তাদের মনের কথা বলতে পারছে না। লেখার স্বাধীনতা না থাকায় এবং নিজের জীবনের ভয়ে ও পরিবারের নিরাপত্তায় অনেক সাংবাদিক পেশা পরিবর্তন করছেন, অনেকে দেশান্তরি হচ্ছেন। দেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। ফলে দুর্নীতি ও লুটপাট হলেও তার খবর প্রকাশ করা দিন দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত এই অবস্থার পরিবর্তন না হলে দেশে সাংবাদিকতার যে আদর্শ পেশা ও গৌরব তা হারিয়ে যাবে।'

৪১ নাগরিক বিবৃতিতে আরও বলেছেন, 'আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে মতিউর রহমান এবং শামসুজ্জামান শামসের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানি মূলক এই মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানাই। পাশাপাশি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে আহ্বান করছি।'

বিবৃতিতে সাক্ষর করেছেন:

আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুম, মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন, লেখক ও অ্যাকটিভিস্ট অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ, সাবেক কূটনীতিক সাকিব আলি, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ, লেখক ও রাজনীতিক ফিরোজ আহমেদ, লেখক ও সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজীম উদ্দিন, বাংলাদেশ পুনর্গঠন আন্দোলনের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোহসীন রশিদ, লেখক ও বিশ্লেষক ড. মারুফ মল্লিক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকিব, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম, কবি ও লেখক শওকত হোসেন, টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক লেখক ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, নারী গ্রন্থ প্রবর্তনার সভানেত্রী ফরিদা আক্তার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং ডিপার্টমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা, মানবাধিকার কর্মী রেজাউর রহমান লেনিন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল- ইউএসএ'র বাংলাদেশ ও পাকিস্তান কান্ট্রি স্পেশালিষ্ট সুলতান মুহাম্মদ জাকারিয়া, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জিশান মহসিন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নূরে এরশাদ সিদ্দিকী, আদর্শ প্রকাশনীর প্রকাশক মাহাবুব রহমান, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক সালাহ উদ্দিন শুভ্র, লেখক ও গবেষক জাকারিয়া পলাশ, গবেষক ও মানবাধিকার কর্মী রোজীনা বেগম, লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট দিলশানা পারুল, কথাসাহিত্যিক ও লেখক রবিউল করিম মৃদুল, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক মুতাসিম বিল্লাহ, লেখক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক সোহেল রানা, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, পেশাজীবী অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নিজাম উদ্দিন, লেখক ও প্রকাশক শমীম রেজায়ী, গবেষক ও এক্টিভিস্ট মাহা মির্জা,  সংগঠক ও রাজনৈতিক এক্টিভিস্ট আরিফুল ইসলাম আদীব।

Comments

The Daily Star  | English

Palak admits shutting down internet deliberately on Hasina's order

His testimony was recorded by the International Crime Tribunal's investigation agency following a questioning session held yesterday

50m ago