মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলায় বিভিন্ন সংগঠনের নিন্দা-ক্ষোভ
প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা ও একই মামলায় সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক, নাগরিক, ছাত্র ও সাংবাদিকদের সংগঠন। পৃথক বিবৃতি ও কর্মসূচি থেকে তারা অবিলম্বে এই মামলা প্রত্যাহার ও শামসুজ্জামানের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের লক্ষ্যেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন: সুজন
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, 'প্রথম আলো অনলাইনের একটি প্রতিবেদন ফেসবুকে প্রকাশকে কেন্দ্র করে প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে গভীর রাতে বাসা থেকে তুলে নেওয়া এবং পরবর্তীতে পত্রিকাটির সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মধ্যরাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে মতিউর রহমান ও শামসুজ্জামান শামসকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।'
সুজন মনে করে, 'গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের লক্ষ্যেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ নানা রকমের নিবর্তনমূলক আইন প্রণয়ন করা হয়েছে এবং হচ্ছে। এসব আইনের জেরে সাংবাদিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে সংকুচিত হয়ে পড়ছে। পাশাপাশি তাদের পেশাগত নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়েছে।'
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'আমরা সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে পরিবেশ তৈরি, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গণমাধ্যমের প্রত্যাশিত ভূমিকা এবং প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা তুলে নেওয়াসহ শামসুজ্জামানের দ্রুত মুক্তি দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো নিবর্তনমূলক আইনগুলো বাতিলেরও দাবি জানাচ্ছি।'
ফ্যাসিবাদ বিরোধী বাম মোর্চার নিন্দা ও প্রতিবাদ
প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা, পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে গভীর রাতে বাসা থেকে তুলে নেওয়া ও পরে একই আইনে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর ঘটনায় ফ্যাসিবাদ বিরোধী বাম মোর্চা নিন্দা, প্রতিবাদ ও উদ্বেগ জানিয়েছে।
মোর্চার পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, 'সরকার দমন পীড়নের সকল সীমা অতিক্রম করেছে। এমন ঘটনাও আছে শত চেষ্টা করেও মামলা নেওয়া হয় না। আর অন্যদিকে রাত ১টার পর মামলা, ভোর না হতেই তল্লাশি চালিয়ে আটক করা পূর্ব পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়। এভাবে গভীর রাতে একজন সংবাদকর্মীকে আটক, সংবাদপত্র ও বাকস্বাধীনতার ওপর চরম ফ্যাসিবাদী আঘাত।'
মোর্চার নেতারা এই মামলা প্রত্যাহারের পাশাপাশি শামসুজ্জামান শামসের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।
গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ
সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসের নিঃশর্ত মুক্তি, নওগাঁয় র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর বিচার ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে ছাত্র জোটের বিক্ষোভ মিছিল ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। পরে তারা রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ করেন।
সমাবেশে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ও গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ছায়েদুল হক নিশান বলেন, 'আওয়ামী শাসনে দেশের জনগণ তার ক্ষুধার কথাও প্রকাশ্যে বলতে পারছে না। চরম নিপীড়নের মাধ্যমে দমন করা হচ্ছে জনগণের প্রতিবাদের ভাষা। সরকার জনগণের মাছ-মাংস-চালের স্বাধীনতা দিতে চায় না। যার বাস্তব প্রমাণ প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামস, সম্পাদক মতিউর রহমানসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা।'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির উদ্বেগ
সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে তুলে নেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (ডুজা)। এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনটির নেতারা বলেন, 'কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ কিংবা পরোয়ানা ছাড়াই সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে তুলে নেওয়ার ঘটনা উদ্বেগজনক। তুলে নেওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বিষয়টি স্বীকার না করার ঘটনা বিপজ্জনক। এ ধরনের ঘটনা দেশের স্বাধীন সাংবাদিকতা এবং সংবিধানস্বীকৃত গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি হুমকি।'
সমিতির নেতারা বলেন, 'কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে স্বাভাবিক আইনি প্রক্রিয়ায় তার প্রতিবিধান সম্ভব। তা না করে ভোরে একজন সাংবাদিককে তার বাসা থেকে তুলে নেওয়ার ঘটনা সাংবাদিকতা ও সাংবাদিকদের প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম বিরূপ আচরণ।'
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন
বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির ব্যানারে এই মানববন্ধন হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের প্রায় একশ নেতাকর্মী অংশ নেন।
মানববন্ধন থেকে শামসুজ্জামানের নিঃশর্ত মুক্তি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলা প্রত্যাহার এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি রাকিব আহমেদ বলেন, 'সাংবাদিকেরা যদি স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে না পারেন, তাহলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় না। শামসুজ্জামানের অপরাধ কি? তাকে আটকের প্রক্রিয়াটা খুবই ন্যক্কারজনক। স্বাধীনভাবে কথা না বলতে পারলে গণতন্ত্র থাকে না।'
জাবি শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক বোরহান উদ্দিন বলেন, 'সরকারের দায়িত্ব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা নয়, তাদের দায়িত্ব মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া।'
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলী, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামছুল আল সেলিম, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক সোহেল রানা, ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমর্ত্য রায়, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রাপ্তি তাপসী দে, জাবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মো. বেলাল হোসেন প্রমুখ।
Comments