সৌদিতে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩ বছরের প্রবাস জীবনের সমাপ্তি মোজাম্মেলের
ওমরাহ পালন শেষে মদিনা থেকে পৌনে পাঁচশ কিলোমিটার দূরে কর্মস্থলে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে মোজাম্মেল হোসাইনের (৪৫) বাড়ি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের ছৈলাবুনিয়া গ্রামের। ভাগ্যের অন্বেষণে ২৩ বছর আগে সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি।
দুর্ঘটনায় নিহত অন্যজনের নাম সাগর জোমাদ্দার। তার বাড়ি বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের বটতলা গ্রামে। সৌদি আরবের আল কাসিম প্রদেশে মোজাম্মেল হোসাইনের রেস্টুরেন্টে কাজে যোগ দিতে দুই বছর আগে দেশ ছেড়েছিলেন সাগর। সম্পর্কে মোজাম্মেলের শ্যালক সাগর।
সৌদি আরবে যাওয়ার আগে বিয়ে করেছিলেন সাগর। শান্তা আক্তারের সঙ্গে দুই মাস সংসার করেই দেশ ছাড়েন তিনি। আগামী বছর দেশে ফিরে নতুন বাড়ি বানানোর স্বপ্ন ছিল তার। সড়ক দুর্ঘটনায় তাদের সেই স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেছে।
সাগরের পরিবারের সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টার দিকে সড়ক দুর্ঘটনায় তাদের মৃত্যু হয়। তাদের মরদেহ একটি সরকারি হাসপাতালের হিমঘরে রাখা আছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে দুজনের মরদেহ বাংলাদেশে আনার চেষ্টা চলছে। ছয় ভাইবোনের মধ্যে সাগর সবার ছোট।
মঙ্গলবার মোজাম্মেলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় এখনোও স্বজনদের আহাজারি চলছে। বাবার জন্য আহাজারি করছিলেন ছোট মেয়ে রানিম জাহান। আর বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন স্ত্রী রুবিনা ইয়াসমিন। খানিকটা দূরে নির্বাক বসে ছিলেন সাগরের স্ত্রী শান্তা আক্তার।
মোজাম্মেলের স্ত্রী রুবিনা বলেন, ২৩ বছর আগে ব্যবসা করতে আমার স্বামী সৌদি আরবে গিয়েছিল। ৮ বছর আগে সবশেষ দেশে এসেছিলেন। সবার জন্য কেনাকাটা করে আগামী বছর দেশে আসার কথা ছিল তার। তার আগেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন। এখন সরকারের কাছে অনুরোধ তাদের লাশ যেন দেশে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হয়।
মোজাম্মেলের ছোট মেয়ে রানিম জাহান বলেন, আমি যখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি তখন আমার বাবা সৌদি গিয়েছে। ৮ বছর তাকে আমি দেখিনি। ভিডিও কলে কথা না হলে আমি তার চেহারা ভুলেই যেতাম।
সাগরের স্ত্রী শান্তা আক্তার বলেন, দুই মাসের বেশি আমরা সংসার করতে পারিনি। কিছুদিন আগেও ভিডিও কলে সে বলেছিল ঈদে সবার জন্য কেনাকাটা করতে টাকা পাঠাবে। কিন্তু তার আগেই আল্লাহ তাকে না ফেরার দেশে নিয়ে গেল।
Comments