জ্বালানি চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস কাতারের

দোহায় কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল সানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক। ছবি: পিআইডি

বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে কাতার বাংলাদেশের পাশে থাকবে। স্বল্পোন্নত দেশসমূহ বিষয়ক জাতিসংঘের ৫ম জাতিসংঘ সম্মেলনের পাশাপাশি রোববার দোহায় অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে (কিউএনসিসি) কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল সানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে এ আশ্বাস দেওয়া হয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল সানির উদ্ধৃত করে বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কাতারের আমিরকে বলেছেন, আমি আপনাকে সাহায্য করতে চাই। কাতার সবসময় বাংলাদেশকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে।

মোমেন বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ক্রমবর্ধমান জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় কাতারের কাছ থেকে আরও বেশি জ্বালানি, বিশেষ করে বার্ষিক আরও এক মিলিয়ন মেট্রিক টন (এমটিএ) তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) চেয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেছেন যে আমরা কাতারের সাহায্য চাই। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ জ্বালানি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। আমি চুক্তি নবায়ন করতে চাই। আমি আরও এলএনজি চাই। 

জবাবে কাতারের আমির জানতে চান বাংলাদেশ কতটা জ্বালানি চায়। তাকে বলা হয়, বাংলাদেশ আরেকটি এমটিএ অর্থাৎ ১৬-১৭ কনটেইনার জ্বালানি চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে আমির বলেন, আপনার কাতার ছাড়ার আগে তার জ্বালানি মন্ত্রী এ বিষয়ে আপনার সঙ্গে আলোচনা করবেন।

আমির বলেন, আমি আজ আমাদের জ্বালানি মন্ত্রীকে নির্দেশ দিচ্ছি, আপনার কাতার ত্যাগ করার আগে আমার জ্বালানি মন্ত্রী আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। আমির আরও বলেন, আমি আপনাকে সাহায্য করতে চাই। কাতার সবসময় বাংলাদেশকে সাহায্য করবে।

বাংলাদেশ বর্তমানে প্রায় ৪০ কন্টেইনার জ্বালানি আমদানি করছে, যার পরিমাণ ১.৮-২.৫ এমটিএ।

শেখ হাসিনা কাতারের আমিরকে বাংলাদেশ সফরে আসার আমন্ত্রণ জানালে শেখ তামিম বলেন, তিনি এ বছর বাংলাদেশ সফর করবেন। বৈঠকে আমির বলেন, 'আমি কথা দিচ্ছি যে আমি এ বছর বাংলাদেশ সফর করব।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছে এবং বিভিন্ন দেশ সেখানে বিনিয়োগ করছে। কাতার সেই অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতেও বিনিয়োগ করতে পারে।

কাতারে বাংলাদেশি শ্রমিকদের বিষয়ে শেখ হাসিনা কাতারের আমিরকে তাদের প্রতি লক্ষ্য রাখতে বলেন, কারণ এখানে কিছু শ্রমিক চাকরি হারাচ্ছে। জবাবে শেখ তামিম বলেন, তিনি সবসময় বাংলাদেশ ও বাঙালির কল্যাণ চান।

কিউএনসিসির দ্বিপাক্ষিক সভা কক্ষে ইউএনডিপি প্রশাসক আচিম স্টেইনারের সঙ্গে একটি পৃথক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ইউএনডিপিকে নেতৃত্ব দিতে বলেছিলেন, যেন এলডিসি থেকে স্নাতক হওয়া দেশগুলো একবারে এলডিসিগুলোর জন্য এনটাইটেলকৃত সব আন্তর্জাতিক সুবিধা না হারায়।

তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে যারা স্নাতক হচ্ছে তাদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রত্যাহার করে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। ইউএনডিপির কিছু প্রক্রিয়াকরণ করা উচিত যেন দেশগুলোকে একবারে সব সুবিধা হারাতে না হয়।

'আমাদের ভালো পারফরম্যান্সের জন্য পুরস্কৃত করা উচিত, কিন্তু আপনি শাস্তি দিচ্ছেন। ইউএনডিপিকে নেতৃত্ব দেওয়া উচিত,' বলেন প্রধানমন্ত্রী।

ইউএনডিপি প্রশাসক বাংলাদেশের উন্নয়ন, বিশেষ করে গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন এবং গ্রামীণ এলাকায় নগর সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ডিজিটালাইজেশনের জন্য প্রশংসা করেন।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা যেভাবে ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ছেন তা নতুন মডেলে পরিণত হচ্ছে।

কিউএনসিসিতে ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) মহাসচিব ডোরেন বোগদান-মার্টিনের সঙ্গে বৈঠকে শেখ হাসিনা সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রযুক্তিগত সহায়তা চেয়েছেন।

এছাড়া বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক জাতিসংঘ সম্মেলনের মহাসচিব রেবেকা গ্রিনস্প্যান কিউএনসিসিতে পৃথকভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বৈচিত্র্য আনতে এবং দেশের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে আঙ্কটাডের সহায়তা কামনা করেন।

তিনি কিউএসিসির প্রদর্শনী হলে বিনিয়োগ এবং অংশীদারিত্বের উপর এলডিসি৫ উচ্চপর্যায়ের মধ্যাহ্নভোজেও অংশ নেন।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

19h ago