মন্ত্রীর দেওয়া পুরস্কার প্রধানমন্ত্রীর বলে প্রচার!
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আল মামুন সরকার জাতীয় মানবকল্যাণ পদক-২০২২ পেয়েছেন। প্রায় ২ মাস আগে গত ২ জানুয়ারি তিনি সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের কাছ থেকে পদকটি পান।
সম্প্রতি তিনি গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছবি তুলে দাবি করছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে তিনি এই পদক নিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আল মামুন সরকারের ছবি তিনি ও তার ঘনিষ্ঠজনেরা ফেসবুকে পোস্ট করার পর এখন সমালোচনা চলছে।
গত ২ জানুয়ারি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় (বাসস) প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তর মিলনায়তনে জাতীয় সমাজসেবা দিবস ও মানবকল্যাণ পদক বিতরণ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ২০২০ ও ২০২১ সালের জন্য এই পদক দেওয়ার পাশাপাশি স্মারক, সনদপত্র ও চেক দেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রত্যেককে ১৮ ক্যারেট মানের ২৫ গ্রাম স্বর্ণ দিয়ে তৈরি পদক, জাতীয় মানবকল্যাণ পদকের রেপ্লিকা, ব্যক্তি পর্যায়ে ২ লাখ টাকা, দপ্তর বা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ২ লাখ টাকা এবং একটি সম্মাননা সনদ দেওয়া হয়।
প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে কাজ করায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আল মামুন সরকার, প্রান্তিক ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় কাজ করায় আব্দুল জব্বার জলিল, মানবকল্যাণে ইতিবাচক কার্যক্রমে খুলনার জেলা প্রশাসন মানবকল্যাণ পদক ২০২০ গ্রহণ করেন।
এ ছাড়া, বয়স্ক-বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতার কল্যাণে বিশ্ব মানব সেবা সংঘ (বৃদ্ধাশ্রম), প্রান্তিক ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মাজেদা শওকত আলী, আইনের সংঘাতে জড়িত শিশু-নিরাশ্রয় ব্যক্তির কল্যাণে আকবরিয়া লিমিটেড এবং মানবকল্যাণে ইতিবাচক কার্যক্রমে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনকে মানবকল্যাণ পদক-২০২১ দেওয়া হয়।
পদক বিতরণের দিন আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সমাজকল্যাণ সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল।
গত ২ মার্চ বিকেলে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে আল-মামুন সরকারের হাতে এই পদক ও সম্মাননা সনদ তুলে দিয়েছেন দাবি করে তার ব্যক্তিগত সহকারীসহ ঘনিষ্ঠ কয়েকজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন।
ছবিতে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর হাতে সনদ ও পদক তুলে দিয়ে ছবি তোলার সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার জানামতে, মন্ত্রী যে পুরস্কার দেন সেটা প্রধানমন্ত্রী দেন না। উনি (আল মামুন সরকার) যদি রিকোয়েস্ট করেন তাহলে ভিন্ন কথা। একই পদক ২ বার দেওয়ার সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী কাউকে পদক দিলে তার কার্যালয় থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে।'
গত ২ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক আবু আবদুল্লাহ মো. ওয়ালীউল্লাহ রাজধানীর সমাজসেবা অধিদপ্তর মিলনায়তনে এই পদক বিতরণের বিষয়টি জানিয়েছেন।
গত ২ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আল মামুন সরকার পদক ও সনদ পেয়েছেন দাবি করে যে পোস্ট করেছেন এর সত্যতার বিষয়ে আবু আবদুল্লাহ মো. ওয়ালীউল্লাহ কোনো মন্তব্য করতে রাজি না হয়ে সরাসরি তার অফিসে গিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেন।
'গত জানুয়ারিতে এই পদক বিতরণ করা হয়েছে' জানিয়ে আল মামুন সরকার বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী দেশে না থাকায় (পরে) পদকটা সমাজকল্যাণমন্ত্রী হস্তান্তর করেন আর কী।'
Comments