নারায়ণগঞ্জ

বিএনপির লোকজনের ‘হাত-পা ভেঙে পুলিশে’ দিতে বললেন আ. লীগ নেতা

সোমবার উঠান বৈঠকে বক্তব্য দেন নারায়ণগঞ্জ সদরের কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জসিম উদ্দিন। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

নির্বাচন বর্জনের দাবিতে বিএনপির লোকজনকে লিফলেট বিতরণ করতে দেখলে তাদের 'হাত-পা ভেঙে পুলিশে দেওয়ার' নির্দেশ দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জসিম উদ্দিন।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় দেলপাড়া গোলাপবাগ এলাকায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের পক্ষে এক নির্বাচনী উঠান বৈঠকে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ নির্দেশনা দেন। 

তার এমন বক্তব্যের ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

বক্তব্যে আওয়ামী লীগ নেতা জসিম উদ্দিন বলেন, 'আগামী ৭ তারিখে জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচন বানচাল করতে বিএনপি পায়তারা করছে। এলাকায় যারা বিএনপি করে তারা মাঝে মাঝে দেখি বাড়ি-বাড়ি গিয়ে হ্যান্ডবিল দেয়। ফেসবুকে দেখলাম, দেলপাড়া বাজারেও তারা (হ্যান্ডবিল) দিয়েছে। '

'আমি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে বলব, যদি তাদের এই অবস্থায় (হ্যান্ডবিল বিতরণ অবস্থায়) পাওয়া যায় তাহলে হাত-পা ভেঙে পুলিশের হাতে তুলে দেবেন। আর না হলে আপনারা ওদের আটকে আমাদের খবর দেবেন, আমি আসব,' বক্তব্যে বলেন ওই আওয়ামী লীগ নেতা।

এ নির্বাচনী উঠান বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন। আরও উপস্থিত ছিলেন ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম, কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মানিক চাঁন।

বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ তুলে সভায় জসিম উদ্দিন বলেন, '২০০১ সালের নির্বাচনের পরে আওয়ামী লীগের লোকজনের ওপর অনেক অত্যাচার নির্যাতন করছে, সেইটা ভোলার মতো না। কিন্তু আমাদের নেত্রী নির্বাচনে জেতার পরদিন বলেছিলেন, কোনো আনন্দ-উল্লাস করা যাবে না এবং কোনো বিএনপির লোকের ওপর কোনো আঘাত করা যাবে না। শামীম ওসমানের নির্দেশ যখন আসলো, আমরা আমাদের এলাকাগুলোতে গিয়ে কারও উপর জুলুম-অত্যাচার না করার নির্দেশ দিয়েছি।'

তিনি আরও বলেন, 'এই কুতুবপুরে বিএনপির লোকেরা ১৫ বছর ব্যবসা-বাণিজ্য কইরা যাইতেছে। আগামী নির্বাচনের পরে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করবে, নির্বাচনের পর যতটুক ব্যবস্থা নেওয়ার আমরা নেবো। বিএনপির লোকজন কীভাবে এলাকায় থাকে আর ব্যবসা করে সেইটা আমরা দেখব। শামীম ওসমান একটাই নির্দেশ দিয়েছেন, নির্বাচনে কাউকে কিছু বলবেন না। নির্বাচনের পর ব্যবস্থা আমরা নেবো। কারণ আমরা বহু সহ্য করেছি, আর না।'

৭ জানুয়ারি ভোটের দিন ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য দলের পক্ষ থেকে পরিবহনের ব্যবস্থা থাকবে বলেও জানান এই আওয়ামী লীগ নেতা।

তিনি বলেন, '৭ তারিখে ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য পরিবহন ব্যবস্থা থাকবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে নেতাকর্মীরা অটোরিকশার ব্যবস্থা করবে। তারা আপনাকে কেন্দ্রে নিয়ে যাবে, আবার নিয়ে আসবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার নিতে হবে।'

এ বক্তব্যের বিষয়ে জানতে বিকেলে আওয়ামী লীগ নেতা জসিম উদ্দিনকে আজ মঙ্গলবার বিকেলে ফোন করা হলে, তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি এখন ব্যস্ত আছি। কথা বলতে পারব না।'

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কল করা হলেও, তিনি একই কথা বলে কল কেটে দেন।

তবে, এ বিষয়ে জানতে সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিনকে বলেন, 'হাত-পা ভেঙে দেওয়ার কথা আমি খেয়াল করিনি। উনি বলছেন যে, যারা আগুন দিয়ে মানুষ মারে তাদের এবার আর ছাড় দেওয়া হবে না।'

হাত-পা ভেঙে দিতে নির্দেশ দেওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছে, বিষয়টি উল্লেখ করলে নাজিম উদ্দিন বলেন, 'আমি অমন কথা তখন শুনিনি। এ বিষয়ে উনি নিজেই বলতে পারবেন।'

যোগাযোগ করা হলে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আযম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এমন বক্তব্যের ব্যাপারে পুলিশ অবগত নয়। আপনার কাছ থেকেই জানলাম। এ ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হবে।'

উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন বর্জন করে নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে নির্বাচনের আয়োজনের দাবিতে সারাদেশে টানা হরতাল ও অবরোধের পর লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি।

Comments

The Daily Star  | English

Ending impunity for crimes against journalists

Though the signals are mixed we still hope that the media in Bangladesh will see a new dawn.

7h ago