সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদন

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১০ দুর্বৃত্ত দল সক্রিয়

রোহিঙ্গাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক সহায়তা
কক্সবাজারের উখিয়ায় অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প। এএফপি ফাইল ছবি

আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মিসহ (আরসা) ৩টি সন্ত্রাসী গ্রুপ ও ৭টি ডাকাত দল রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় সক্রিয় রয়েছে। এরমধ্যে বেশিরভাগ ক্যাম্পের ওপর আরসার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। জিরো লাইনে অবস্থিত তুমব্রু কোনাপাড়া ক্যাম্পটিতে নিয়মিত টহল ও নজরদারি জোরদার করতে না পারার কারণে সেখানে আরসার সাংগঠনিক কার্যক্রম, প্রশিক্ষণ, মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আজ বুধবার অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।

প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ১০টি দুর্বৃত্ত দল বর্তমানে সক্রিয় রয়েছে। এরমধ্যে আরসা সক্রিয় রয়েছে উখিয়া, বালুখালী, পালংখালী, হোয়াইক্যংয়ে, আরএসও ও মাষ্টার মুন্না দল উখিয়া, পালংখালীতে, ইসলামী মাহাজ ও জাবু ডাকাত দল হোয়াইক্যংয়ে এবং নয়াপাড়া ক্যাম্পে চাকমা ডাকাত দল, নবী হোসেন ডাকাত দল, পুতিয়া ডাকাত দল, সালমান শাহ ডাকাত দল ও খালেক ডাকাত দল সক্রিয় রয়েছে।

বেশিরভাগ ক্যাম্পের ওপর আরসার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে উল্লেখ করে এতে আরও বলা হয়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আরসা ও নবী হোসেন ডাকাত দল প্রায়ই মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

আরসার উপস্থিতি ও তাদের সন্দেহভাজন কার্যক্রম নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি করেছে উল্লেখ করে বলা হয়, জিরো লাইনে অবস্থিত তুমব্রু কোনাপাড়া ক্যাম্পটি আরসার সাংগঠনিক কার্যক্রম, প্রশিক্ষণ, মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

প্রতিবেদনে ২০২১ ও ২০২২ সালে সংঘটিত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরা হয়। এদের সার্বিক অপরাধ কিছু কমেছে বলে প্রতীয়মান হয়। তবে এসময় বেড়েছে হত্যাকাণ্ড। ২০২১ সালে যেখানে ২২টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, ২০২২ সালে তা বেড়ে হয় ৩২টি।

এদিকে, ২০২১ সালের চুরি-ডাকাতির ঘটনা ৭৭ থেকে কমে ২০২২ সালে ৭৫টি, গোলাগুলির ঘটনা ৫১টি থেকে ১৮টি, অপহরণের ঘটনা ১৭৩টি থেকে কমে ৮৬টি, আন্তর্কোন্দল ১১টি থেকে কমে একটি, মাদকের ঘটনা ২৬৮টি থেকে ২৪৯টি এবং অন্যান্য অপরাধ ৫৬৭টি থেকে কমে ৫৫৩টি সংঘটিত হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, জানুয়ারি ২০২১ থেকে ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত ২২২টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ৯৯টি দুর্ঘটনাজনিত। ৬০টি নাশকতামূলক ও ৬৩টির কারণ জানা যায়নি।

রোহিঙ্গা এলাকা এইচআইভি-এইডস, হেপাটাইটিস সি, ডিপথেরিয়া ইত্যাদির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়। এখন পর্যন্ত কক্সবাজারে ৭১০ জন এইচআইভি পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। এরমধ্যে ৬১২ জনই রোহিঙ্গা। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬১ জন রোহিঙ্গা এইচআইভিতে মৃত্যুবরণ করেছেন। ৫ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা নারী কক্সবাজারে বিভিন্ন হোটেলে যৌন পেশায় জড়িত রয়েছেন।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে প্রতিদিন ৯৫ জন শিশু জন্মগ্রহণ করে। ২০২৫ সালে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ১২-১৩ লাখ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়।

কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটি সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান, মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ এবং মো. নাসির উদ্দিন অংশগ্রহণ করেন।

Comments

The Daily Star  | English

BTRC directs telcos to provide 1GB free internet on July 18

Mobile phone operators have been instructed to notify users in advance via SMS

1h ago