র‌্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রাজনৈতিক বিষয়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। স্টার ফাইল ছবি

র‌্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রাজনৈতিক বিষয় বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারকে একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেছেন, শুরু থেকেই এর সমাধানের জন্য জোরালোভাবে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নুর প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।

মন্ত্রী বলেন, 'নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও ভবিষ্যতে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা যাতে না আসে, সে ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অন্যান্য সংস্থা একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাস যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।'

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় র‌্যাব, আইনি সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা, আইন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ মিশনের মধ্যে নিয়মিতভাবে সমন্বয় সাধন করছে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর পরই আমি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলি। সে সময় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে কাজ করবে, সে ব্যাপারে খোলামেলা আলোচনা হয়। পরবর্তীতে তারই আমন্ত্রণে ওয়াশিংটন সফর করে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করি। বৈঠকে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়ন নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরি।'

তিনি আরও বলেন, 'ওই সফরে সিনেটর, কংগ্রেসম্যানসহ বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক হয়। এতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে তাদের সমর্থনের অনুরোধ করি। কংগ্রেসনাল বাংলাদেশ ককাস গঠনের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করি।'

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিশেল সিসনের সাক্ষাৎ করে র‌্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে আলোচনা করেন বলেও জানান।

মোমেন বলেন, ওই সময়ে পররাষ্ট্র সচিব মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডোনাল্ড লু, কাউন্সিলর ডেরেক চোলেটসহ মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। সে সময় সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু মানবাধিকার নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশের গৃহীত উদ্যোগের প্রশংসা করেন।

তিনি জানান, জাতিসংঘ সম্মেলন চলাকালে পররাষ্ট্র সচিব, যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, অ্যাম্বাসেডর আট লার্জ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবসহ বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ককাসের তিনজন কো-চেয়ার কংগ্রেসম্যান জেরি কনোলি,  কংগ্রেসম্যান স্টিভ চ্যাবট এবং কংগ্রেসম্যান ডেট ইভানসের সাথে একটি বৈঠক করেন। বৈঠকে ইউএস হাউজ কমিটি অন ফরেন অ্যাফেয়ার্সের চেয়ারম্যান গ্রেগরি মিকসও অংশগ্রহণ করেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ককাস এর সদস্য স্টিভ চ্যাবট যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে নির্বাচিত হননি। ওয়াশিংটন ডিসিস্থ দূতাবাস বাংলাদেশ ককাসে আরেকজন সদস্য যুক্ত করার নিমিত্ত কাজ করে যাচ্ছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে আসা সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর সাথে সাক্ষাতে র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আলোচিত হয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ওই সময় ডোনাল্ড লু বর্তমান র‌্যাবের কার্যক্রমের বিশেষ প্রশংসা করেন।

মোমেন বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাস আইনি সহায়তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে সাথে নিয়ে র‌্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ব্যাপারে জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

সরকার দলের আবুল কালাম আজাদের প্রায় একই ধরনের এক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, 'হ্যাঁ, বাংলাদেশে কর্মরত কতিপয় বিদেশি রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিডিয়ায় বক্তব্য রাখেন। তাদের এই ধরনের শিষ্টাচার বহির্ভূত বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত রাখার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গণমাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করা কূটনীতিকদের কাছে তাদের বক্তব্যের বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাদেরকে কূটনৈতিক শিষ্টাচার পালন করে দায়িত্ব পালন করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।'

গণমাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য না করে যথাযথ দপ্তরগুলোর মাধ্যমে তাদের জানানোর জন্য দূতাবাসগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি লক্ষ্য করা গেছে যে, কিছু বিদেশি রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে গণমাধ্যমে মন্তব্য করেছেন যা একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের সামিল।

তিনি বলেন, বাংলাদেশসহ পৃথিবীর যেকোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কূটনীতিকগণ ওই রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তর/ব্যক্তিগণের সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেন এবং তাদের পক্ষ থেকে যদি কোনো বিষয়ে বক্তব্য থাকে তা আলোচনা করতে পারেন।

সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য মমতা হেনা লাভলীর এক সম্পূরক প্রশ্নে দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকরা নামসর্বস্ব বিভিন্ন সংস্থার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত না হওয়ার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে কী না তা জানতে চান।

জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশ সবসময় আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে কূটনৈতিকদের স্বচ্ছন্দ চলাচলসহ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কোন্নয়নে তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকে ইতিবাচক হিসেবে দেখে থাকে। কূটনীতিকেরা দু'দেশের জনগণের স্বার্থে এবং কল্যাণে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। তবে আশা করি, দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের সামিল বা বিতর্ক সৃষ্টি করে এমন বিষয়/অনুষ্ঠান থেকে কূটনীতিকরা বিরত থাকবেন। তবে আমাদের কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে বিরোধীদল ও কিছু গণমাধ্যম তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বক্তব্য দিতে সময় সময় উৎসাহিত করে যা অন্যান্য দেশে প্রচলিত নয়।

কূটনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক ভিয়েনা কনভেনশনের বিধান উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, 'সরকার বিদেশি কোনো কূটনীতিককে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক কোনো অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে বাধা প্রদান করবে না। আশা করি, এসব অনুষ্ঠানে কূটনীতিকগণ কূটনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রাখবেন এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকবেন।'

Comments

The Daily Star  | English

Thailand sees growing influx of patients from Bangladesh

Bangladeshi patients searching for better healthcare than that available at home are increasingly travelling to Thailand instead of India as the neighbouring country is limiting visa issuances for Bangladeshi nationals.

13h ago