ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্থপতি মোবাশ্বের হোসেনের জানাজা সম্পন্ন
বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সদ্য সাবেক সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও দেশ বরেণ্য স্থপতি মোবাশ্বের হোসেনের তৃতীয় জানাজা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার তারুয়া গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারুয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে গতকাল সোমবার বাদ জোহর তার প্রথম জানাজা রাজধানীর স্থপতি ইনস্টিটিউটে এবং দ্বিতীয় জানাজা বাদ আসর ব্রাদার্স ক্লাব মাঠে অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজা শেষে তার একমাত্র মেয়ে সোনিয়া কৃষ্টি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, মরদেহ নিয়ে তারা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন। স্থপতি মোবাশ্বের হোসেনের প্রতি সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে মরদেহ রাখা হবে।
বরেণ্য এই স্থপতির শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী, তার দেহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে দান করা হবে বলেও জানান তিনি।
গ্রামবাসীরা জানান, দেশ বরেণ্য এই স্থপতি গ্রামের মানুষের কল্যাণে অনেক কাজ করেছেন। ১৯৬৯ সালে তার পূর্বপুরুষেরা গ্রামে একটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা করেছেন। স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন তার নিজ গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, আশ্রয় কেন্দ্র, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, গ্রামীণ ব্যাংক, বাজার ও খেলার মাঠ করতে প্রায় ১০০ বিঘা জমি দান করেছেন। তিনি গ্রামের বালিকা বিদ্যালয়টিকে কলেজে রূপান্তর করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলেন। কিন্তু এর আগেই তিনি পরলোক গমন করেন।
তারুয়া গ্রামে বসবাসরত তার চাচাতো ভাই মোসাদ্দেক আহমেদ বলেন, ৫৩ বছর আগে গ্রামে প্রতিষ্ঠিত বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সব শিক্ষকদের বেতনের ৫০ ভাগ বহন করতেন স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন। প্রায় ৩৫ লাখ টাকা ব্যয় করে তিনি স্কুলের সামনের একটি ডোবা ভরাট করে মেয়েদেরকে খেলার মাঠ করে দিয়েছেন।
গত রোববার দিনগত রাত দেড়টার দিকে রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোবাশ্বের হোসেন মারা যান। দীর্ঘদিন ধরে নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করা স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন ছিলেন এসোকনসাল্ট লিমিটেডের প্রধান স্থপতি৷ কমনওয়েলথ অ্যাসোসিয়েশন অব আর্কিটেক্টস এবং আর্কিটেক্টস রিজিওনাল কাউন্সিল, এশিয়ার (আর্কেশিয়া) প্রেসিডেন্টের দায়িত্বও তিনি পালন করেছেন৷ তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাবেক পরিচালক, ব্রাদার্স ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এবং সম্মিলিত ক্রীড়া পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি কমনওয়েলথ অ্যাসোসিয়েশন অব আর্কিটেক্টস এবং বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট-এর সাবেক প্রেসিডেন্ট। স্থপতি মোবাশ্বের আর্কিটেক্টস রিজিওনাল কাউন্সিল, এশিয়া (আর্কেশিয়া)-এর প্রেসিডেন্টও ছিলেন।
স্থপতি হিসেবে তিনি বেশ কয়েকটি স্থাপনা নির্মাণের কাজ করে গেছেন। এর মধ্যে প্রশিকা ভবন, গ্রামীণ ব্যাংক ভবন ও চট্টগ্রাম রেলস্টেশন উল্লেখযোগ্য। স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন তার জীবনে কয়েকটি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছেন। এর মধ্যে আমেরিকান স্থপতি ইনস্টিটিউট (এআইএ) প্রেসিডেন্ট পদক ২০০৯ উল্লেখযোগ্য।
Comments