স্ট্রোক করে হাসপাতালে খবরের কাগজ বিক্রি করা সেই খুকি

স্ট্রোক করে হাসপাতালে খবরের কাগজ বিক্রি করা সেই খুকি
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন দিল আফরোজ খুকি। ছবি: আনোয়ার আলী/স্টার

নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ জয়িতা ও রাজশাহীর নারী পত্রিকা বিক্রেতা দিল আফরোজ খুকি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আত্মনির্ভরশীল ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনের জন্য তার সংগ্রাম এবং দাতব্য কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি দেশব্যাপী পরিচিত।

গত শনিবার সন্ধ্যা থেকে ৬২ বছর বয়সী এই মহিয়সী নারী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। তার ইস্কিমিক স্ট্রোক হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানি দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, 'যখন ইস্কেমিক স্ট্রোক হয়, তখন মস্তিষ্কের কিছু অংশে রক্ত জমাট বেঁধে যায়। অক্সিজেন ও পুষ্টির অভাবে মস্তিষ্কের কোষগুলো মারা যেতে শুরু করে। তার শরীরের বাম অংশ পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে গেছে। আমরা তাকে সর্বোত্তম চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছি।'

পৈতৃকসূত্রে পাওয়া সম্পদ নিঃস্বদের মাঝে বিলিয়ে দিয়ে সংগ্রামের জীবন বেছে নিয়েছিলেন রাজশাহীর দিল আফরোজ খুকি। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি শহরের পথে হেঁটে বিক্রি করছেন দৈনিক খবরের কাগজ।

নগরীর শিরইল এলাকায় তার বাড়ির কাছে এজেন্টদের কাছ থেকে সংবাদপত্র সংগ্রহ করতেন তিনি। শহরের প্রশস্ত সড়কে ও সংকীর্ণ অলি-গলিতে হেঁটে হেঁটে সেগুলো বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

তিনি তার কষ্টার্জিত আয় সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠীর লোকদের জন্য, বিশেষ করে নারীদের জীবনমান উন্নয়নে ব্যয় করেছেন। তার বয়স ৬২ পেরোলেও তিনি কর্মমুখর জীবন অক্ষুন্ন রেখেছিলেন।

শনিবার সন্ধ্যায় নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকায় খবরের কাগজ বিক্রির জন্য হাঁটতে হাঁটতে অসুস্থ হয়ে পড়েন খুকি। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের নগর স্পেশাল ব্রাঞ্চের পুলিশ কনস্টেবল মফিকুর আলম সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।

হাসপাতালে নেওয়ার ১ ঘণ্টা আগে তাকে হেঁটে হেঁটে সংবাদপত্র বিক্রি করতে দেখছিলেন মফিউর।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সেদিন হঠাৎ করেই দেখলাম তিনি রাস্তার এক পাশে পড়ে গেলেন। আমি তার কাছে দৌঁড়ে গেলাম। প্রথমে তাকে তার বাড়িতে নিয়ে যান। কিন্তু সেখানে তার যত্ন নেওয়ার জন্য কাউকে না দেখে পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।'

হাসপাতালে খুকি ২ দিন কোনো বিছানা পাননি। শীতের মধ্যে হাসপাতালের বারান্দায় শুয়ে তার চিকিৎসা চলছিল।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় রাজশাহী সিটি মেয়রের স্ত্রী শাহিন আক্তার রেনি তার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার পর তাকে পেয়িং বেডে স্থানান্তর করা হয়।

আজ মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে জানা গেছে,  খুকি কথা বলতে পারছেন না। কাউকে চিনতে পারছেন না। যদিও তিনি সবাইকে দেখছিলেন এবং কথা বলার চেষ্টা করছিলেন।

হাসপাতালে তার দেখাশোনা করছেন রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবী প্রেমা খাতুন। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সোমবার ফেসবুকে তার অসুস্থতার কথা জানতে পারি। এরপর আমি অলস বসে থাকতে পারিনি। আমি দিনের বেলাটা তার দেখাশোনা করছি। রাতে এক নারী তার কাছে থাকেন।'

তিনি আরও বলেন, 'ক্রমেই তার (খুকির) অবস্থার অবনতি হচ্ছে। গতকালও তিনি কথা বলতে পারতেন। তিনি আমাকে ধরে রাখতে পারতেন, ইশারায় কিছু জিজ্ঞাসাও করতে পারতেন। কিন্তু আজ তিনি আরও দুর্বল হয়ে পড়েছেন।'

তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে নিউরো মেডিসিনের অধ্যাপক কফিল উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিনি খেতে পারছেন না। আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।'

Comments

The Daily Star  | English
NBR Protests

NBR officials again announce pen-down strike

This time, they will observe the strike for three hours beginning at 9 am on June 23

2h ago