কৃষকদের দায়ী করেই সমবায় ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদন

পাবনা
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

পাবনার ঈশ্বরদীর ভারইমারি গ্রামে ঋণ খেলাপির মামলায় ১২ কৃষক গ্রেপ্তারের ঘটনায় বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের তদন্ত কমিটি কৃষকদের দায়ী করেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

ঋণ প্রক্রিয়ায় ব্যাংক কর্মকর্তাদের কোনো অনিয়মের প্রমাণ খুঁজে পায়নি ব্যাংকের তদন্ত কমিটি। কৃষকদের ঋণ পরিশোধের দাবিও ঠিক নয় বলে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

ঋণ পরিশোধ করেই কৃষকদের মামলা থেকে মুক্তি পেতে হবে বলে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে বলে তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে।  

ঘটনার প্রায় ৩ সপ্তাহ পর গতকাল বুধবার সমবায় ব্যাংকের এই তদন্ত প্রতিবেদন ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপকের কাছে জমা দেওয়া হয়।

আজ বৃহস্পতিবার এসব তথ্য দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন তদন্ত কমিটির প্রধান সমবায় ব্যাংকের ডিজিএম মো. আহসানুল গনি।

মো. আহসানুল গনি বলেন, 'তদন্ত চলাকালে সব দিক বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কৃষকরা ঋণ পরিশোধের পরও জেলে নেওয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যমে অভিযোগ করলেও তা সত্য নয়।'

আহসানুল গনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতি জন কৃষক ৪০ হাজার টাকা করে সমিতির মাধ্যমে ঋণ নেন। এভাবে ভারইমারি উত্তরপারা সবজি চাষী সমবায় সমিতির ৪০ জন কৃষককে ২০১৬ সালে ১৬ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময় ঋণ ও সুদের টাকা পরিশোধ না করায় সমিতির ৩৭ জন কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা করে সমবায় ব্যাংক। ব্যাংকের সব আইনগত দিক ঠিক রেখেই এ মামলা করা হয়।'

এখানে ব্যাংকের কোনো ভুল নেই বলে দাবি করেন তিনি।  

কৃষকদের মধ্যে অনেকেই ঋণের টাকার চেয়ে বেশি টাকা পরিশোধ করেও জেল খেটেছেন বলে গণমাধ্যমে যেসব সংবাদ প্রকাশ হয়েছে সে সম্পর্কে সমবায় ব্যাংকের ডিজিএম বলেন, 'যাদের কাছে সুনির্দিষ্ট পাওনা রয়েছে তাদের বিরুদ্ধেই ব্যাংক মামলা করেছে। যারা টাকা পরিশোধ করেছেন বলে দাবি করেছেন তাদের দাবি সঠিক ছিল না।'

এর আগে অনেক কৃষক ঋণের ৪০ হাজার টাকা পাননি বলে দ্য ডেইলি স্টারের কাছে দাবি করেন।

এ প্রসঙ্গে কমিটির প্রধান আহসানুল গনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তদন্ত কমিটির কাছেও কিছু কৃষক ঋণের নির্ধারিত পরিমাণ টাকা পাননি বলে জানিয়েছেন। তারা সমিতির নেতাদের দোষারোপ করলেও তাদের দাবির পক্ষে যৌক্তিক তথ্য-প্রমাণ না থাকায় ঋণ পরিশোধ না করার জন্য কৃষকদেরই দায়ী করা হয়।'

২০২১ সালে সমবায় ব্যাংক মামলা দায়েরের পর গত নভেম্বরে ৩৭ জন কৃষকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। গত ২৪ নভেম্বর পুলিশ ১২ জন কৃষককে গ্রেপ্তার করলে সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এর প্রায় ৩ সপ্তাহ পর ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হলো।

তদন্ত কমিটির প্রধান মো. আহসানুল গনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঋণের টাকা পরিশোধের পরেই কৃষকরা মামলা থেকে মুক্তি পাবেন।'

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সমবায় ব্যাংকের মহা ব্যবস্থাপক (জিএম) ঝর্ণা প্রভা দেবী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিষদ এবং মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।'

ঝর্ণা প্রভা দেবী আরও বলেন, 'সমবায় ব্যংকের নিয়ম অনুযায়ী ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাংকের কর্মকর্তারা ছাড়াও সমবায় অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা যুক্ত থাকেন। সম্পূর্ণ নিয়ম মেনেই এসব ঋণ দেওয়া হয়েছে। ঋণ প্রক্রিয়ায় ব্যাংকের মাঠ পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তার কোনো অনিয়মের তথ্য পাওয়া যায়নি।'

এদিকে ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনে কৃষকদের দায়ী করায় হতাশ অভিযুক্ত কৃষকরা।

কৃষক রজব আলি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি লেখাপড়া জানি না, কে কোথায় কী সই করিয়ে নিচ্ছে জানতে পারিনি। আমি ৩০ হাজার টাকা নিয়েছি এবং প্রায় ৩৪ হাজার টাকা পরিশোধ করার পরও আমাকে জেল খাটতে হয়েছে।'

তবে তার নামে ৪০ হাজার টাকা ঋণ উত্তোলন হয়েছে বলে জানানো হলে রজব বলেন, 'ব্যাংক ঋণ সম্পর্কে ধারণা না থাকায় এবং লেখাপড়া না জানায় আমাকে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Not for kidney patient, they tried to rob bank for iPhones

Police say three robbers fabricated a story claiming that the robbery was to save a kidney patient

1h ago