চসিকের ২২ ওয়ার্ড জলাবদ্ধতা ঝুঁকিতে, অতি উচ্চ ঝুঁকিতে ৬টি

সেভ দ্য চিলড্রেন এবং ইয়াং পাওয়ার ফর সোশ্যাল অ্যাকশন (ইপসা) পরিচালিত গবেষণা তুলে ধরতে চসিকে অনুষ্ঠান। ছবি: সংগৃহীত

অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে বন্দর নগরীর ১৩ দশমিক ৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা প্রত্যক্ষ এবং ৫২ বর্গ কিলোমিটার এলাকা পরোক্ষ ঝুঁকিতে আছে। গত ৫৩ বছরে শহরের ৭০ শতাংশ খাল বিলীন হয়ে গেছে।

অপরিকল্পিতভাবে নগরী গড়ে তোলায় আগ্রাবাদ, হালিশহর, বাকলিয়া, মোহরা, খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইসহ নিম্নাঞ্চল শুষ্ক মৌসুমেও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে।

সম্প্রতি বেসরকারি সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন এবং ইয়াং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশন (ইপসা) পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি জন আর স্নেল যখন শহরের ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করে তখন নগরীতে ৭০টি খাল পাওয়া যায়। তবে সম্প্রতি চট্টগ্রাম পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ওয়াসা) পরিচালিত একটি জরিপ অনুসারে, গত ৫৩ বছরে খালের সংখ্যা ৭০ শতাংশ হ্রাস পেয়ে বর্তমানে ২২টিতে দাঁড়িয়েছে।

'চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের জন্য মাল্টি হ্যাজার্ড কন্টিনজেন্সি প্ল্যান' শীর্ষক এই গবেষণায় আরও জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মোট ২২টি ওয়ার্ড সরাসরি জলাবদ্ধতার ঝুঁকিতে রয়েছে, এর মধ্যে ৬টি আছে অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিতে। এ ছাড়া, ৩টি ওয়ার্ড উচ্চ ঝুঁকিতে এবং ১৩টি ওয়ার্ড মাঝারি থেকে কম জলাবদ্ধতার ঝুঁকিতে রয়েছে।

গবেষণা মতে, যদি জলাবদ্ধতার সমস্যা খুব দ্রুত সমাধান করা না হয় তাহলে ভবিষ্যতে প্রতিদিন ২০০ মিমি বৃষ্টিপাতেও নগরীর বেশিরভাগ নিচু এলাকা ১ দশমিক ৩ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে।

চসিকের অর্থায়নে হওয়া এই গবেষণায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহ জালাল মিশুক প্রধান পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন।

শাহ জালাল মিশুক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জলাবদ্ধতার স্তর এবং এর অর্থনৈতিক প্রভাবের ভিত্তিতে অতি উচ্চ ঝুঁকি, উচ্চ ঝুঁকি এবং মাঝারি ঝুঁকি বিবেচনা করা হয়েছে। জলাবদ্ধতার সময় যে ওয়ার্ডগুলোর ৩ ফুট থেকে সাড়ে ৩ ফুট পানির নিচে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে সেগুলো অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ। যেগুলো ১ ফুট থেকে ৩ ফুট পানির নিচে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে সেগুলো উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গ্রুপে।'

'গবেষণাটি চসিকের জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়েছে, যাতে চসিক কার্যকরভাবে সমস্যাটির সমাধান করতে পারে', যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে একটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে চসিক এর রক্ষণাবেক্ষণ কর্তৃপক্ষ হবে। এই গবেষণাটি তখন চসিককে সহায়তা করবে।'

জলাবদ্ধতাকে নগরীর একটি বড় উদ্বেগ উল্লেখ করে শাহ জালাল মিশুক বলেন, 'বছরের পর বছর ধরে চলে আসা এই সমস্যাটি প্রকট আকার ধারণ করেছে।'

তিনি বলেন, 'অপরিকল্পিত নগরায়ন ও অবৈধ দখলের কারণে গত ৫৩ বছরে নগরীর ৭০ শতাংশ খাল বিলীন হয়ে গেছে। বর্ষাকালে প্রাকৃতিক জলাধারের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের পরিমাণও কমেছে সেই কারণে। খাল ও অন্যান্য জলাশয় প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে কাজ করে।'

কর্মপরিকল্পনায় জলাবদ্ধতার ঝুঁকি কমানোর জন্য বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এরমধ্যে আছে বর্ষাকালে পানির প্রবাহ বাধামুক্ত রাখতে খাল ও ড্রেন নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও পরিষ্কার করা, ড্রেনগুলোকে উঁচু স্ল্যাব দিয়ে ঢেকে দেওয়া, যদি তা সম্ভব না হয় তবে জাল দিয়ে ঢেকে দেওয়া, ড্রেন ও খাল থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং নগরবাসীর মধ্যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা।

মিশুক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার পানি মাটির নিচের পানির স্তরগুলোকে পূর্ণ করতে সাহায্য করতে পারে, যদি নগরীতে অপ্রয়োজনীয় পাকা রাস্তাঘাটের মতো অপ্রয়োজনীয় অভেদ্য পৃষ্ঠ নির্মাণকে নিরুৎসাহিত করা যায়।  সেক্ষেত্রে পানি সহজেই মাটির গভীরে চলে যাবে এবং মাটির নিচের পানির স্তর পূর্ণ হয়ে যাবে। এতে করে নগরীতে নলকূপের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানির চাহিদা পূরণ করা যাবে।'

আজ রোববার এই গবেষণা সম্পর্কে জানাতে চসিকে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

এতে চসিকের নগর পরিকল্পনাবিদ আবদুল্লাহ আল ওমর, চুয়েটের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক রশিদুল হাসান, সেভ দ্য চিলড্রেনের ম্যানেজার (আরবান রেজিলিয়েন্স) সাইমন, নগর পরিকল্পনাবিদ সুভাষ বড়ুয়া, প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার ও ইপসার উপপরিচালক নাসিম বানু বক্তব্য দেন।

Comments

The Daily Star  | English

47th BCS applications to open on December 10

Online applications will open on December 10 at 10:00am and close on December 31 at 11:59pm

2h ago