কান্তজিউ মন্দিরে রাস উৎসব শুরু

কান্তজিউ
রাস উৎসব উপলক্ষে কান্তজিউ মন্দিরে আগত ভক্তদের প্রসাদ দিচ্ছেন পুরোহিতরা। ছবি: কংকন কর্মকার/স্টার

দিনাজপুরে ঐতিহাসিক কান্তজিউ মন্দিরে শুরু হয়েছে রাস উৎসব। রাস বেদীতে সোমবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে এ উৎসব শুরু হয়। 

আড়াইশ বছরের পুরোনো এই উৎসবকে কেন্দ্র করে মন্দির এলাকায় শুরু হয়েছে মাসব্যাপী রাস মেলা।

এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও দিনাজপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য খালিদ মাহমুদ চৌধুরী রাস উৎসব ও মেলার উদ্বোধন করেন।

জানা যায়, দিনাজপুরের তৎকালীন মহারাজা জমিদার প্রাণনাথ রায় শেষ বয়সে কাহারোল উপজেলার ঢেপা নদীর তীরবর্তী এলাকায় একটি মন্দির করা ইচ্ছা করেন। তার ইচ্ছা অনুযায়ী ১৭২২ সালে এ মন্দিরের নির্মাণকাজ শুরু হয়।

প্রাণনাথের মৃত্যুর পর তার পোষ্যপুত্র রামনাথ রায় ১৭৫২ সালে মন্দিরের নির্মাণকাজ শেষ করেন।

মন্দিরটি হিন্দু ধর্মের কান্ত বা কৃষ্ণের মন্দির হিসেবে নামকরণ করা হয়। তখন থেকে এই মন্দিরে রাধাকৃষ্ণের পূজা হয়।

কান্তজিউ
রাস বেদীতে সোমবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে এ উৎসব শুরু হয়। ছবি: কংকন কর্মকার/স্টার

কান্ত থেকে কান্তজিউ মন্দির। কান্তজিউ থেকে এলাকার নাম হয় কান্তনগর।

প্রথা অনুযায়ী, কান্তজিউ এই মন্দিরে থাকেন ৯ মাস। আর বছরের বাকি ৩ মাস থাকেন দিনাজপুর শহরের রাজবাড়ী মন্দিরে। 

দিনাজপুরের অনেক ঐতিহ্য হারিয়ে গেলেও, ১৭৫২ সাল থেকে কান্তজিউ মন্দির ও দিনাজপুর রাজবাড়ীকে ঘিরে যে উৎসব শুরু হয়েছিল তা গত ২৭০ বছর ধরে চলছে।

কান্তজিউ মন্দিরকে ঘিরে সবকটি উৎসবে হাজারো ভক্ত ও পূণ্যার্থীরা এখানে আসেন। 

প্রতিবছর শ্রীকৃষ্ণের জন্ম তিথির আগে কান্তজিউ বিগ্রহ নৌকার বহরে প্রায় ২৬ কিলোমিটার নদীপথে (ঢেপা) কান্তজিউ থেকে দিনাজপুর শহরের রাজবাড়ী নিয়ে আসা হয়। এখানে রাজমন্দিরে এই বিগ্রহ থাকে ৩ মাস।

৩ মাস পর কার্তিক মাসের শেষ পূর্ণিমার আগে বিগ্রহ সড়কপথে আনা হয় কান্তজিউ মন্দিরে।

কান্তজিউ
রাস উৎসব উপলক্ষে সোমবার সকাল থেকেই ভক্ত, পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থীর ভিড়ে মুখরিত কান্তজিউ মন্দির প্রাঙ্গণ। ছবি: কংকন কর্মকার/স্টার

দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক এই রাজ দেবোত্তর সম্পত্তির সভাপতি।

সাবেক সরকারি কর্মকর্তা দিনাজপুর রাজ দেবোত্তর সম্পত্তির এজেন্ট রনজিত সিংহ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এই উৎসবের জন্য কোনো প্রচার হয় না। গত ২৭০ বছর ধরে এভাবেই তিথি বা প্রথা অনুযায়ী রাস উৎসব চলে আসছে।

উৎসব উপলক্ষে সাজানো হয়েছে কান্তজিউ মন্দিরকে। সোমবার সকাল থেকে হাজার হাজার ভক্ত, পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থীর ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে মন্দির প্রাঙ্গণ। তাদের অধিকাংশই রাতে মন্দির এলাকায় থাকবেন। 

ভজন, কীর্তন আর ধর্মীয় সঙ্গীতের ধ্বনিতে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে ঐতিহাসিক এই মন্দিরকে ঘিরে।

করোনা মহামারির কারণে গত ২ বছর এখানে তেমন কোনো গণজমায়েত হয়নি।

এ বছর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত হাজার হাজার ভক্ত, পুণ্যার্থী আর দর্শনার্থীদের পদচারণায় কান্তজিউ মন্দির প্রাঙ্গণ পরিণত হয়েছে মিলনমেলায়।

রাস উৎসবকে ঘিরে কান্তজিউ মন্দিরে কেউ এসেছেন মনোবাসনা পূরণে, কেউ এসেছেন মনোবাসনা পূরণের পর কৃতজ্ঞতা জানাতে, কেউ এসেছেন ঐতিহাসিক এই মন্দির দর্শনে, আবার কেউ কেউ এসেছেন রাস উৎসবে অংশ নিতে বা কান্তজিউ মন্দির দেখতে।

মন্দির প্রাঙ্গণ ও তার আশপাশের এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, হাজারো মানুষ তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন। পাশাপাশি চলছে রান্না। অনেকে আবার ব্যবস্থা করেছেন তাঁবুর।

আগত ভক্তদের সঙ্গে কথা বলে জানান যায়, তারা দূর-দূরান্তের বিভিন্ন জেলা, বিশেষ করে কুড়িগ্রাম, জয়পুরহাট, রংপুর, গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছেন।

নীলিমা রায় তার পরিবারের ১২ জন সদস্যের সঙ্গে নীলফামারীর জলঢাকা থেকে রাস উৎসবে এসেছেন। শুধু পরিবার নয়, পাড়া-প্রতিবেশী মিলিয়ে তারা আছেন ২৭ জন। 

আয়োজকরা জানান, ভারত থেকেও এসেছেন অনেক ভক্ত।  

সোমবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে পূর্ণিমা তিথিতে রাধাকৃষ্ণের যুগল প্রতিমায় পূজা অর্চনা শেষে মন্দিরের পশ্চিম পাশে নবনির্মিত রাস বেদীতে শ্রীকৃষ্ণের রাস পূর্ণিমা উৎসব শুরু হয়।

কাহারোল ও বীরগঞ্জ এলাকার সংসদ সদস্য মনোরঞ্জল শীল গোপাল ডেইলি স্টারকে জানান, দিনাজপুরের ঐতিহ্যের এই উৎসব ১৭৫২ সাল থেকে পালন হয়ে আসছে। শুধু ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের কারণে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়নি।  

Comments

The Daily Star  | English

Teknaf customs in limbo as 19 mt of rice, authorised by AA, reaches port

The consignment of rice weighing 19 metric tonnes arrived at Teknaf land port on Tuesday evening with the documents sealed and signed by the Arakan Army

1h ago