১১ বছরেও চালু হয়নি ‘তিনবিঘা করিডোর এক্সপ্রেস’

লালমরিনহাট-রেল-স্টেশন
লালমনিরহাট বিভাগীয় রেল স্টেশনের লোকোশেড ইয়ার্ডে রাখা ট্রেন। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসেছিলেন বহুল আলোচিত আঙ্গোরপোতা-দহগ্রামে। লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বুড়িমারী-ঢাকা রুটে আন্তঃনগর ট্রেন চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, 'এ অঞ্চলের মানুষ যাতে সহজেই রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করতে পারেন সেজন্য বুড়িমারী-ঢাকা রুটে একটি আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা হবে। ট্রেনটির নাম দেওয়া হবে "তিবিঘা কড়িডোর এক্সপ্রেস"।'

প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি এ অঞ্চলের মানুষের মনে আশা জাগায়। সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে 'তিনবিঘা করিডোর এক্সপ্রেস' ট্রেনের নাম।

সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগীয় সদরদপ্তরে এসেছিলেন ২০১৮ সালের ১১ জুন। লালমনিরহাট রেল স্টেশনের নতুন ভবন উদ্বোধন করেন তিনি। সেসময় বলেছিলেন, 'আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা "তিনবিঘা করিডোর এক্সপ্রেস" চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।'

২০২১ সালের ১২ নভেম্বর লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশনে এসেছিলেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। স্টেশনটি পরিদর্শন শেষে তিনি বলেছিলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি শিগগির বাস্তবায়ন করা হবে। খুব তাড়াতাড়ি চালু হবে "তিনবিঘা করিডোর এক্সপ্রেস' ট্রেন। এটি সরাসরি বুড়িমারী থেকে ঢাকায় চলাচল করবে।'

কিন্তু, বাস্তবতা হচ্ছে—আজো বাস্তবায়িত হয়নি সেই প্রতিশ্রুতি। স্থানীয়রা দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, আশান্বিত লালমনিরহাটবাসী এখন আশাহত। তারা এখন বিক্ষুদ্ধও।

আরও জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কোনো নমুনা দেখা যাচ্ছে না। রেলমন্ত্রীর নিজ এলাকা পঞ্চগড় থেকে পরপর ৪টি নতুন আন্তঃনগর ট্রেন চালু হয়েছে। রেলওয়ে বিভাগীয় সদরদপ্তর হওয়া সত্ত্বেও লালমনিরহাট বঞ্চিত রেলের সুবিধা থেকে।

বুড়িমারী স্থলবন্দর সূত্র ডেইলি স্টারকে জানায়, প্রতিদিন বুড়িমারী-চ্যাংড়াবান্ধা রুটে ৬০০-৭০০ যাত্রী ভারত-নেপাল-ভুটান যাতায়াত করছেন। ২ শতাধিক ব্যবসায়ী বুড়িমারী স্থলবন্দরে আসেন ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য। বুড়িমারী-ঢাকা রুটে আন্তঃনগর ট্রেন 'তিনবিঘা করিডোর এক্সপ্রেস' চালু হলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবেন। বাণিজ্যিকভাবে রেল লাভবান হবে।

ব্যবসায়ী ইয়াসির আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ছেলে দার্জিলিংয়ের একটি স্কুলে পড়ছে। সেজন্য বুড়িমারী আসতে হয়। সড়কপথে বুড়িমারী আসা চরম বিড়ম্বনার। অনেক সময় লাগে। বুড়িমারী-ঢাকা রুটে আন্তঃনগর ট্রেন চালু হলে সহজে ও আরামদায়কভাবে চলাচল করা যাবে। আমার মতো অনেকে বুড়িমারীতে প্রায়ই আসেন।'

টাঙ্গাইল থেকে আসা বুড়িমারী স্থলবন্দরে আসা সুনীল চন্দ্র সাহা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সড়কপথে বুড়িমারীতে আসতে সীমাহীন কষ্ট পোহাতে হয়। এই রুটে আন্তঃনগর ট্রেন থাকলে সহজেই যাতায়াত করা যাবে।'

ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রায়ই বুড়িমারী স্থলবন্দরে আসি। সড়কপথে বুড়িমারী আসতে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। আন্তঃনগর ট্রেন চালু জরুরি হয়ে পড়েছে।'

বুড়িমারী স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি ও পাটগ্রাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বাবুল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখানে "তিনবিঘা করিডোর এক্সপ্রেস" নিয়ে শুধু প্রতিশ্রুতিই শুনে আসছি। ট্রেনটি কবে চালু হবে বা আদৌ চালু হবে কি না সে বিষয়ে কিছুই বুঝতে পারছি না।'

লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) আব্দুস সালাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বুড়িমারী-ঢাকা রুটে আন্তঃনগর ট্রেন "তিনবিঘা করিডার এক্সপ্রেস" চালু করতে সরকারের প্রতিশ্রুতি আছে। তবে এখনো কোনো আপডেট পাইনি।'

এই রুটে আন্তঃনগর ট্রেন চালু হলে বাণিজ্যিকভাবে রেল লাভবান হবে বলেও মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং তা বাস্তবায়নে সাবেক ও বর্তমান রেলমন্ত্রীরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু, কোনো ফল আসেনি। আন্তঃনগর ট্রেন চালুর দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছি। স্মারকলিপি দিয়েছি। আন্তঃনগর ট্রেন চালুর দাবিতে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Nahid warns against media intimidation, vows stern action

The government will take stern action against those trying to incite violence or exert undue pressure on the media or newspapers, said Information Adviser Nahid Islam today

16m ago