জাতীয় কন্যাশিশু দিবস

কন্যাশিশুদের নিরাপত্তা কোথায়

কন্যাশিশুদের নিরাপত্তা কোথায়
প্রতীকী ছবি। স্টার ফাইল ফটো

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় ২০৩০ সালের মধ্যে শিশু নির্যাতন-পাচারসহ সব ধরনের সহিংসতা বন্ধের বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও বাংলাদেশ এখনো এই ক্ষেত্রে বেশিদূর এগোতে পারেনি।

কন্যাশিশুর জন্য বাস্তবতা আরও ভয়াবহ। এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে ৫৭৪ জন কন্যাশিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৪৩ জন প্রতিবন্ধী। তাদের মধ্যে ৮৪ জনকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে।

জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ছাড়াও ৮৭ কন্যাশিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০ জন কন্যাশিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। ১ বছর বয়সী কন্যাশিশুকেও ধর্ষণ করা হয়েছে।

সংগঠনটি চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ২৪টি দৈনিক সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে 'গার্ল চিলড্রেন সিচুয়েশন মনিটরিং রিপোর্ট ২০২২' তৈরি করেছে। আজ শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করবে সংগঠনটি।

সংগঠনটি বলছে, এসব ঘটনায় জিডি ও মামলার পর কয়েকজন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হলেও তাদের অধিকাংশই পরে জামিনে মুক্তি পান এবং ভুক্তভোগী ও অভিভাবকদের হত্যাসহ নানা ধরনের হুমকি দেন।

প্রতিবেদনে কোনো মামলায় অপরাধীদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। যদিও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দাখিলের ১৮০ দিনের মধ্যে ধর্ষণ বা হত্যা মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

'সময়ের অঙ্গীকার: কন্যাশিশুর অধিকার' প্রতিপাদ্যকে সামনে নিয়ে আজ বাংলাদেশে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস পালিত হচ্ছে।

সংগঠনটির প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৭৬ কন্যাশিশুকে যৌন হয়রানি ও নির্যাতন করা হয়েছিল, যার মধ্যে একজন প্রতিবন্ধী। তাদের মধ্যে ১৫ জন পর্নোগ্রাফির শিকার।

বেশিরভাগ ঘটনা ঘটেছে বাজার, রাস্তাঘাট, গণপরিবহন, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ নিজের বাড়ির সীমানায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন, শিক্ষক ও উত্ত্যক্তকারীদের মাধ্যমে কন্যাশিশুরা সহিংসতার শিকার হয়ে থাকে।

এই ৮ মাসে ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও পারিবারিক কলহের ঘটনায় ১৮৬ জন কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে। এ বছর আত্মহত্যার ঘটনা বেড়েছে। ২০২১ সালে ১৫৩টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে, আর চলতি বছরের ৮ মাসে ১৮১টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।

৮ মাসে পারিবারিক কলহ ও প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে ৩ কন্যাশিশু। পাচার ও অপহরণের শিকার হয়েছে ১৩৬ জন।

বাল্যবিবাহের ঘটনাগুলো মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে প্রকাশিত না হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে সংগঠনটি জানিয়েছে, মাঠপর্যায়ে কাজ করা অংশীদারদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে তারা প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ৮ মাসে ২৫টি জেলার মোট ১ হাজার ৬৬৯ জন কন্যাশিশু বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় ৫৮৯টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ১৩টি কন্যাশিশু যৌতুক সংক্রান্ত পারিবারিক সহিংসতার মুখোমুখি হয়েছে, এ ধরনের ঘটনায় ৫ জন প্রাণও হারিয়েছে।

অন্যদিকে, চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করা ১৫ কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে, যাদের মধ্যে ২ জনের প্রাণহানি হয়েছে এবং ১ জন আত্মহত্যা করেছে।

মাঠপর্যায়ে কন্যাশিশুদের সঙ্গে ফোকাস গ্রুপ আলোচনায় জানা গেছে, প্রায় ১ হাজার কন্যাশিশু নিয়মিত সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে মেসেজে উত্ত্যক্ত করা, বিকৃত ছবি পাঠানো ও যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ কন্টেন্ট পাঠানো।

সংগঠনটি জানিয়েছে, বেশিরভাগ ঘটনায়ই কেউ অভিযোগ করেনি। কারণ তারা জানে না প্রতিকারের জন্য কোথায় যেতে হবে। তা ছাড়া হুমকি ও অন্যান্য জটিলতার কথা বিবেচনা করে আইনি লড়াইয়ে যেতে অনেকেই অস্বীকৃতি জানায়।

ফোরামটি শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাগুলোতে বিশেষ জোর দিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিচারিক কার্যক্রম শেষ করার এবং একটি পৃথক 'যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন' প্রণয়নের সুপারিশ করেছে।

অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- ধর্ষণ, ধর্ষণ চেষ্টা, মামলা ও ধর্ষণ সংশ্লিষ্ট সব ধরনের অভিযোগের ক্ষেত্রে, ঘটনার শিকার কন্যাশিশু ও নারীর পরিবর্তে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে হবে ও আইনের আওতায় আনতে হবে। নারী ও শিশুকে অপদস্ত না করে অভিযুক্তের কাছে প্রমাণ চাইতে হবে যে, সে অপরাধী না। এ সম্পর্কিত প্রচলিত আইনের বিধান সংশোধন করতে হবে। কন্যাশিশু নির্যাতনকারীদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া বন্ধ করতে হবে। শিশু সুরক্ষায় শিশুদের জন্য একটি পৃথক অধিদপ্তর গঠন করতে হবে। কন্যাশিশু ও নারীর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতা রোধে তরুণ-যুবসমাজকে সচেতনকরণ সাপেক্ষে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যুক্ত করতে হবে। একইসঙ্গে আইন ও বিচারিক কাঠামাের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জেন্ডার সংবেদনশীল করে তুলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh Emerging Cocaine Transit Hub

Bangladesh now a transit for cocaine smuggling

A sharp rise in the smuggling of cocaine, which mainly enters Bangladesh from African and South American countries, has become a new headache for authorities.

16h ago