যৌনকর্মীরা জীবনে অন্তত একবার গ্রাহক দ্বারা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন: সমীক্ষা

ঢাকা নগরীর প্রায় সব নারী যৌনকর্মী জীবনে অন্তত একবার গ্রাহক দ্বারা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন।
ছবি: এমরান হোসেন/স্টার

ঢাকা নগরীর প্রায় সব নারী যৌনকর্মী জীবনে অন্তত একবার গ্রাহক দ্বারা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন।

সেক্স ওয়ার্কার নেটওয়ার্ক অব বাংলাদেশের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

সংগঠনটি সম্প্রতি রাজধানীর ৮টি এলাকায় ৪০ জন যৌনকর্মীর ওপর সমীক্ষা চালিয়েছে।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৪০ জনই জীবনে অন্তত একবার ঘরে বা বাইরে গ্রাহক দ্বারা সহিংসতার শিকার হয়েছেন।

এছাড়াও, গত ৬ মাসে তাদের মধ্যে ৩৩ জন ঘরের ভেতরে শারীরিক নির্যাতন করা হয় এবং ৩৪ জন ঘরের বাইরে নির্যাতিত হন।

অন্তত ২৭ জন যৌনকর্মী গ্রাহক দ্বারা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে যান এবং ২৬ জন গর্ভপাত ঘটান।

আজ বৃহস্পতিবার দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সমীক্ষার ফলাফল তুলে ধরা হয়।

এতে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য আরমা দত্ত বলেন, 'আমরা পতিতালয়গুলো ভেঙে দিয়ে যৌনকর্মীদের ক্ষতি করেছি। এর ফলে তাদের শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'শহর ও গ্রামে যৌনকর্মীদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করতে এবং তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে আমাদের কাজ করতে হবে। যৌনকর্মীদের নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে আমাদের সবাইকে জানাতে হবে। যৌনকর্মীদের সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।'

অনুষ্ঠানে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের পক্ষ থেকে লিমা রহমান বলেন, 'যৌনকর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সবার সচেতন হওয়া উচিত। বেসরকারি ও সরকারি সংস্থাগুলো অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে, কিন্তু তাদের সামগ্রিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে কি না তা নিয়ে আরও গবেষণা করা দরকার।'

বক্তারা বলেন, ৪০ জন নারী যৌনকর্মীকে নিয়ে সমীক্ষার ভিত্তিতে কোনো সিদ্ধান্তে আসা বা কোনো সুপারিশ করা কঠিন হতে পারে, কিন্তু এ ধরনের গবেষণা নারী যৌনকর্মীদের প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে সহায়তা করবে।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, করোনা মহামারি যৌনকর্মীদের জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। আয় না থাকায় তাদের অধিকাংশই সে সময় জীবনধারণের জন্য উচ্চ সুদে টাকা ধার করেছিলেন, যা এখনো শোধ করছেন।

যৌনকর্মীরা জানান, তাদের পেশা জানার পর সমাজ তাদের কখনোই সাধারণ মানুষ হিসেবে গ্রহণ করে না। তাদের, তাদের পরিবার, সন্তান, পিতামাতার ওপর অত্যাচার চালানো হয় এবং ধর্ষণ, গর্ভপাত, অপহরণ, ব্ল্যাকমেইলের হুমকি পেতে হয়।

সমীক্ষায় দেখা যায়, পুলিশ যৌনকর্মীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বা মিথ্যা মামলা দিয়ে এবং বারবার আটক করে হয়রানি করে।

সেক্স ওয়ার্কার নেটওয়ার্ক যৌনকর্মীদের অধিকার ও তাদের পেশার ক্ষেত্রে 'করুন এবং করবেন না' বিষয়ে একটি ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম পরিচালনাসহ কিছু সুপারিশ করেছে।

তাদের অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে আছে নারী যৌনকর্মীদের শিশুদের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার বা শেল্টার হোম স্থাপন করা এবং নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার সম্পর্কে জানানো, যেহেতু তাদের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গ্রাহকদের সঙ্গে যুক্ত থাকে।

সংগঠনটি নারী যৌনকর্মীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা কমাতে এবং তাদের স্বাস্থ্যগত ও সামাজিক অবস্থা উন্নত করতে একটি অ্যাডভোকেসি কাঠামো তৈরি করার সুপারিশও দিয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
economic challenges for interim government

The steep economic challenges that the interim government faces

It is crucial for the interim government to focus on setting a strong foundation for future changes.

9h ago