গোয়ালঘর ছেড়ে নতুন পাকা ঘরে প্রতিবন্ধী পরিবারটি

৪ সদস্যেরে এই পরিবারটির একমাত্র থাকার জায়গা ছিল গোয়ালঘর। ছবি: স্টার

সড়কের পাশেই চা বাগান। সেখানে গাছের ডাল, ছন আর পলিথিন বেঁধে তৈরি ছোট্ট এক ঝুপড়ির গোয়ালঘর। রোদ, ঝড়, বৃষ্টিতে একমাত্র সম্বল গরু নিয়ে কয়েক দশক ধরে সেখানেই থাকতেন ৪ সদস্যের পরিবারটি। ২ শিশুসহ পরিবারের সবাই প্রতিবন্ধী।

মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নের বরমচাল চা বাগানের ওই ছোট গোয়ালঘরটি থেকে রাতে আকাশের চাঁদ দেখা যেত। ঘরে জ্বলত কুপিবাতি। কিন্তু বৃষ্টি হলেই গরুসহ তাদের ভিজতে হতো।

গোয়ালঘর ছেড়ে নতুন পাকা ঘরে উঠেছে পরিবারটি। ছবি: স্টার

তবে এখন নতুন পাকা ঘরে থাকছেন পরিবারটি। পরিবার প্রধান মোহনলাল মাহাতো শারীরিক প্রতিবন্ধী। আর স্ত্রী ও ২ সন্তান দৃষ্টি প্রতিবন্ধী।

গত ১৩ জানুয়ারি 'Forgotten by society, unforgiving by hunger' শিরোনামে দ্য ডেইলি স্টারে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন প্রতিবন্ধী মোহনলাল পরিবারের খোঁজ নেয়।

গোয়ালঘরে প্রতিবন্ধী পরিবার থাকছেন এমন খবর পেয়ে গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি ওই কুঁড়েঘরে গিয়ে হাজির হন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, কুলাউড়ার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

কথা বলতে না পারলেও গাড়িসহ তাদের দেখে সেদিন বিস্মিত হয়েছিল প্রতিবন্ধী দম্পতি ও ২ শিশু। জেলা প্রশাসক এই পরিবারের জন্য একটি পাকা ঘরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, পাশাপাশি পরিবারটিকে ২টি ভেড়া ও ২ মাসের খাবার দেন তিনি।

অবশেষে পাকা ঘরও পেয়েছে পরিবারটি। ঘর পেয়ে মোহনলাল মাহাতো দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখন আর রাতে ভিজতে হয় না। গরুর প্রস্রাবে আর বিছানা ভিজে যায় না। রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারি।'

'এত কিছু একসঙ্গে পেয়ে যাব, তা বুঝিনি। ডিসি স্যার এলেন। জাদুর মতো সবকিছু একসঙ্গে চলে এলো,' বলেন তিনি।

মোহনলালের স্ত্রী ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী জসন্তি কুর্মী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যে ২টি ভেড়া পেয়েছিলাম, সেগুলো ইতোমধ্যে বাচ্চা দিয়েছে।'

জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, 'দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত প্রতিবেদনের পর আমরা সেখানে যাই এবং পরিবারটির জন্য একটি ঘর বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেই। এটা মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ছিন্নমূল প্রতিবন্ধী অসহায় মানুষদের জন্য ঘর ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় যা যা সুবিধা আছে, আমরা পরিবারটিকে সব দেওয়ার চেষ্টা করছি। মোহনলাল মাহাতোর মতো সম্বলহীনদের জন্য বাসস্থান তৈরি করতে পারা আমাদের জন্য অনেক আনন্দের। তার শিশুরা যেন স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে, তা যেন নিশ্চিত হয়, সে বিষয়ে আমরা সতর্ক ও সচেতন থাকব।'

কুলাউড়া সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইদুল হাসান সিপন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই প্রতিবন্ধী পরিবারটি সম্পর্কে প্রথমে জানতে পারি স্থানীয় চন্দন মেম্বারের কাছ থেকে। সেখানে গিয়ে দেখি গরু ও তারা একসঙ্গেই থাকছেন। রাতে রান্না করেছেন শুধু কচুশাক। ঘরটি ছিল স্যাঁতস্যাঁতে।'

Comments

The Daily Star  | English

Keraniganj bank robbery: Three robbers surrender, hostages safe

The robbers held bank officials and customers hostage for around three hours

Now