সরেজমিন ফার্মগেট-কারওয়ান বাজার-পান্থপথ-গাবতলীর বাস ভাড়াচিত্র

যাত্রীপ্রতি ৫-১০ টাকা বেশি নেওয়া হলেও কর্তৃপক্ষ বলছে ভাড়া বাড়েনি
বাস ভাড়া বাড়ার পাশাপাশি দেখা দিয়েছে গণপরিবহন সংকট। ছবি: পলাশ খান

রাজধানীতে বিক্রয় কর্মীর কাজ করেন মাজহারুল ইসলাম (৪০) । আজ শনিবার বাবুবাজার থেকে কারওয়ান বাজারে আসতে তাকে ১০ টাকা বাস ভাড়া বেশি দিতে হয়েছে।

একই কথা জানান, ট্রাক চালক মাসুদ রানা (৩০) । তিনি মোহাম্মদপুর থেকে কারওয়ান বাজারে আসেন ১০ টাকা দিয়ে। আজ লেগেছে ১৫ টাকা।

রাজধানীর অন্তত ১০টি রুটের যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে ন্যূনতম ৫-১০ টাকা বাস ভাড়া বাড়ানোর তথ্য পাওয়া গেছে।

বাস ভাড়া বাড়ার পাশাপাশি হঠাৎ করে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীর সড়কে গণপরিবহন কমে গেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিসগামী ও সাধারণ মানুষ।

শনিবার সকালে রাজধানীর ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, পান্থপথ, গাবতলী গুলিস্তান, মতিঝিল ও পল্টন এলাকা ঘুরে গণপরিবহন সংকটের কারণে যাত্রীদের ভোগান্তির চিত্র দেখা গেছে।

ছবি: সুমন আলী

সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল ১০টা থেকে রাজধানীতে গণপরিবহনের সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় অনেক কম।

প্রতি ২০ থেকে ২৫ মিনিট অপেক্ষার পর বাস পাওয়া যাচ্ছে। তবে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীদের গেটে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। কেউ কেউ আবার ৩০-৪০ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকেও বাস পাচ্ছেন না।

পল্টন মোড়ে বিহঙ্গ পরিবহনের যাত্রী আব্বাস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রায় ৩০ থেকে ৪০ মিনিট অপেক্ষার পর পল্টন থেকে মিরপুরের বাসে উঠি। আগের দিনের তুলনায় আজ সড়কে গণপরিবহনের সংখ্যা খুবই কম।'

মাজহারুল ইসলাম বলেন, 'বাসে ওঠার আগেই বলে দিয়েছে ১০ টাকা বেশি দিতে হবে। দিলে উঠেন, না দিলে থাকেন। বাধ্য হয়ে ১০ টাকা বেশি দিয়ে আসলাম। আমরা তাদের কাছে জিম্মি। আমার ১ টাকা আয় বাড়েনি কিন্তু রাতারাতি খরচ বেড়ে গেলে। দিনদিন বেঁচে থাকাটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।'

ছবি: পলাশ খান

জরিনা বেওয়া (৫৫) বলেন, '১ ঘণ্টা ধরে কারওয়ান বাজারে দাঁড়িয়ে আছি। উত্তরা যাবো। কিন্তু কোনো বাস পাচ্ছি না।'

রাজধানীর স্ট্রিল পণ্য ব্যবসায়ী মেসার্স হাবিব এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হাবিবুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গতকাল সন্ধ্যা কারওয়ান বাজার থেকে মাওয়া পিকআপ ঠিক করলাম সাড়ে ৬ হাজার টাকা। রাত ১১টার দিকে চালক ফোন করে বললো ৯ তেলের দাম বেড়েছে। ৯ হাজার টাকা দিতে হবে। না হলে যাবো না। কোনো কারণ ছাড়াই আমার আমাকে বাধ্য হয়ে আড়াই হাজার টাকা বেশি দিতে হলো। কার কাছে কী বলবো। আমরা এক ধরনের জিম্মিদশার মধ্যে পড়েছি।'

তিনি বলেন, 'যেহেতু আমার পরিবহন খরচ বেড়েছে বাধ্য হয়ে আমাকেও দাম বাড়াতে হবে। এই সরকার সিন্ডিকেটকে সুবিধা দিতে জনগণকে অসুবিধায় ফেলেছে। সরকার জনগণের কথা ভাবে না। শুধু ব্যবসায়ীদের কথা ভাবে।'

ছবি: সুমন আলী

কারওয়ান বাজারে এক হোটেলে বসে সকালের নাস্তা করছিলেন ডিম ব্যবসায়ী আজাদ। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মানুষের রাস্তায় নামা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। কিন্তু ভয়ে কেউ রাস্তায় নামতে পারছে না। নামলেই তো গুলি করা হচ্ছে।'

চা দোকানদার হাবিব বলেন, 'আমাকে দৈনিক ৩০০ টাকা এবং মাসিক ২ হাজার টাকা কিস্তি দিতে হয়ে। সবকিছু দাম বাড়ানোর কারণে এই ঋণ হয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে আবারও সবকিছুর দাম বাড়বে। কারণে পরিবহণ খরচ বেড়ে যাবে। সরকারের ক্ষমতা আছে তাই দাম বাড়িয়েছে। জনগণ তা মানতে বাধ্য। তবে এই সরকারের ওপর জনগণ এখন অনেক বিরক্ত।'

তিনি বলেন, 'পরিবহন মালিকরা ভাড়া না বাড়িয়ে তেলের দাম কমানোর জন্য আন্দোলন করতে পারতো। কিন্তু তারা তা করবে না। কারণ পরিবহন মালিকরা সবাই সরকারের লোক। তাদের কোনোকিছু আসে যায় না। সমস্যা হয় শুধু সাধারণ মানুষের।'

বিকল্প পরিবহনের চালক আসলাম বলেন, 'আমরা মালিকের বাস চালাই। মালিক যেভাবে বলবে আমরা সেভাবে রাস্তায় চলাচল করব। সব ধরনের জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক বাস মালিক আজ সড়কে কম বাস নামিয়েছেন। মালিকপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নেবে সে অনুযায়ী আমরা সড়কে বাস চালাব।'

গাবতলী লিংক পরিবহনের হেলপার আশিক বলেন, 'তেলের দাম বাড়ায় ভাড়া আগের চেয়ে ৫ টাকা বেশি। আজ রাস্তায় গণপরিবহন কম। তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে আগামীকাল থেকে গণপরিবহনও বন্ধ থাকতে পারে। মালিকরা ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনে নামতে পারেন।'

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব ও এনা পরিবাহনের মালিক খন্দকার এনায়েত উল্লাহর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে আজ বিকেল ৫টায় বৈঠক আছে সেখানে বাস ভাড়া নিয়ে আলোচনা হবে। তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নেব। এখন পর্যন্ত বাস ভাড়া বাড়ানো হয়নি। যারা অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন তারা অন্যায় করছেন।'

Comments

The Daily Star  | English

Uncovering the silent deaths of migrant women

In the shadows of booming remittance flows and the quiet resilience of Bangladesh’s labour diaspora, a disturbing reality persists: numerous Bangladeshi female migrant workers, particularly those employed as domestic help in Gulf countries, are returning home in coffins.

18h ago