গাবতলীতে গাড়ি কম, যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়

গাবতলীর বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টারে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন রুটের বাসের সংখ্যা কমলেও, কমেনি ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখো যাত্রীর চাপ।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে গাবতলী গিয়ে দেখা যায়, এই বাস টার্মিনাল ও সড়কে যাত্রীদের ভিড়। গাবতলী থেকে দেশের উত্তরাঞ্চল এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের গাড়ি ছাড়লেও, গাড়ির সংখ্যা কম। অনেক পরিবহনের টিকেট শেষ হয়ে যাওয়ায়, কাউন্টারে 'সিট খালি নেই' নোটিশ লাগিয়ে রাখা হয়েছে।

অনেক পরিবহনের সব টিকেট বিক্রি হয়ে যাওয়ায় কাউন্টারে সিট নাই নোটিশ। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

বাসের টিকেট না পেয়ে ভেঙে ভেঙে বাড়ি ফিরতে যাত্রীরা ভিড় করেন সড়কে। সেখানে বিভিন্ন লোকাল বাসসহ মাইক্রোবাসের খোঁজ করেন তারা। 

টার্মিনালের বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টার সূত্রে জানা যায়, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গাড়ির সংখ্যা কমে গেছে গাবতলী থেকে। তবে অনেক পরিবহন পদ্মা সেতু দিয়ে মাওয়া রুটে গাড়ির সংখ্যা বাড়িয়েছে।

গাবতলীতে ঈগল পরিবহনের ম্যানেজার মিজানুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগে গাবতলী থেকে আমরা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে প্রতিদিন ২৬টি বাস পরিচালনা করতাম। বর্তমানে এখান থেকে আমরা ১০টি বাস পরিচালনা করছি।' 

বাকি ১৬টি বাস তারা মতিঝিল-সায়েদাবাদ কাউন্টার থেকে মাওয়া রুটে পরিচালনা করছে বলে জানান তিনি।

বাসের টিকেট না পেয়ে ভেঙে ভেঙে যাওয়ার জনয় সড়কে যানবাহন খোঁজার চেষ্টা করেন ঘরমুখো মানুষ। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

গাবতলী থেকে ঢাকা-মাদারীপুর রুটে সার্বিক পরিবহনের ১৫টি বাস চালু ছিল।

পরিবহনটির এক কর্মী আনিসুর রহমান ডেইলি স্টারকে জানান, বর্তমানে তারা গাবতলী থেকে ৩টি গাড়ি পরিচালনা করছেন। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর বাকি ১২টি গাড়ি সায়েদাবাদ থেকে মাওয়া রুটে পরিচালিত হচ্ছে। 

তিনি জানান, সায়দাবাদ দিয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে মাদারীপুর ৯৭ কিলোমিটার এবং এ রুটে বাসভাড়া ৩৫০ টাকা। আর গাবতলী দিয়ে পাটুরিয়া হয়ে মাদারীপুর ১৭৭ কিলোমিটার এবং এই রুটে তারা বাসভাড়া রাখছেন ৪৭০ টাকা।

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়

তবে গাড়ির সংখ্যা কমলেও গাবতলীতে কমেনি যাত্রীর চাপ। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টারে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। 

আর বাস সংকটের কারণে বিআরটিসিসহ বিভিন্ন পরিবহনের বাসের টিকেটের দাম বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের কর্মী জমির আলী পরিবারসহ রংপুর যাওয়ার জন্য গাবতলীতে এসেছেন। দুপুর ১২টায় স্ত্রী ও সন্তানসহ মিরপুরের বাসা থেকে বের হয়েছেন।  শ্যামলী, কল্যাণপুর কাউন্টারে বাসের টিকেট না পেয়ে বিকেলে এসেছেন গাবতলীতে।

দুপুর থেকে ৬ ঘণ্টা অপেক্ষা করে রংপুরের বিআরটিসি বাসের টিকেট পেয়েছেন পরিবারটি। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কোথাও টিকেট পাইনি। গাবতলীতেও টিকেট নেই। বিআরটিসি বাসে টিকেট পাওয়া যাবে কাউন্টার থেকে বলেছে।'
 
তিনি জানান, বিআরটিসির এসি বাসে রংপুর পর্যন্ত টিকেটের দাম ২২০০ টাকা দাবি করেছে কাউন্টার থেকে।

তিনি বলেন, 'রোজার ঈদের আগে বাড়ি গিয়েছিলাম। নন-এসি বাসে ৫৫০-৬০০ টাকা টিকেট ছিল তখন। এসি বাসে ১০০০-১২০০ টাকা। কিন্তু বিআরটিসির এসি বাসে প্রতি টিকেট ২২০০ টাকা চেয়েছে।'

তিনি জানান, বাড়ি যেতে তিনি ভেবেছিলেন ৫ হাজার টাকা খরচ হবে সর্বোচ্চ।

'এখন দেখছি ১০ হাজার টাকার বেশি লাগছে। সারাদিন ঘোরাঘুরি করে পরিবারের সবাই ক্লান্ত হয়ে গেছে। এত টাকা খরচ করে যেতে হবে। একসঙ্গে ৪ সিট পাওয়া যাবে কি না জানি না,' যোগ করেন তিনি।

জানতে চাইলে বিআরটিসি বাসের সুপারভাইজার নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা দিনাজপুর পর্যন্ত যাব। রংপুর গেলেও ২২০০ টাকা ভাড়া পড়বে।' 

২ হাজার টাকায়ও রাজি হননি তিনি।

সেখানে বিআরটিসির দোতলা বাস দেখা যায়। রংপুরের ভাড়া ১৫০০ টাকা বলে জানায় বাসের সুপারভাইজার। 

বিআরটিসির দোতলা বাসের বগুড়ার ভাড়া ১২০০ টাকা।

যাত্রীরা জানান, বছরের অন্যান্য সময়ে এই ভাড়া সাধারণত ৫০০ টাকা হয়।

অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিসির মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) মেজর মুক্তারুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka cannot engage with non-state actors: foreign adviser

Md Touhid Hossain also emphasised that peace and stability in the region would remain elusive without a resolution to the Rohingya crisis

26m ago