নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে নিক্সন চৌধুরীকে শোকজ

তৃতীয় দফায় আগামী ২৯ মে সদরপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনে কাজী শফিকুর রহমানকে সমর্থন দিয়েছেন নিক্সন চৌধুরী।
কাজী জাফর উল্যাহকে তৃতীয়বারের মতো হারিয়ে জয়ী নিক্সন
মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। ছবি: সংগৃহীত

ফরিদপুরের সদরপুর ও ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরীকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

আজ সোমবার বিকেলে ভাঙ্গা ও সদরপুর উপজেলা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জিয়াউল হক খান এ নোটিশ দেন। নোটিশে আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টার মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তার জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ফরিদপুর সদরপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মো. শহীদুল ইসলাম (আনারস) সংসদ সদস্যের নামে ছড়িয়ে পড়া একটি অডিওর বিষয়ে আপনি অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়া ভাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী মো. মোকলেসুর রহমান (ঘোড়া প্রতীক) সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের একটি অভিযোগ দিয়েছেন।

উপজেলা নির্বাচনের (আচরণবিধি) বিধিমালা অনুযায়ী, সংসদ সদস্য নিক্সন 'সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি'। তাই নির্বাচনপূর্ব সময়ে নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা বা নির্বাচনী কার্যক্রমে তিনি অংশ নিতে পারবেন না। কিন্তু বিভিন্ন অভিযোগ ও প্রাপ্ত নথি থেকে বোঝা যাচ্ছে, তিনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। আচরণবিধি লঙ্ঘনের সুনির্দিষ্ট লিখিত ব্যাখ্যা ২৮ মে বিকেল ৪টার মধ্যে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ভাঙ্গা-সদরপুর ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে দাখিল করার জন্য অনুরোধ করা হলো।

নিক্সন চৌধুরী নোটিশের বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান, তিনি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেননি। তিনি এলাকাতেই নেই। যে অডিওর কথা বলা হচ্ছে, তার কোনো ভিত্তি নেই। তিনি এখনো কারণ দর্শানো নোটিশ পাননি। তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং নোটিশ পেলে এ ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানাবেন।

অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জিয়াউল হক খান বলেন, ভাঙ্গা ও সদরপুরের দুই সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাকে সংসদ সদস্যকে এ কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়ার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি শিগগিরই নোটিশ পেয়ে যাবেন।

নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন

এর আগে সোমবার দুপুর ১২টার দিকে মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী শহীদুল ইসলাম। সদরপুর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ৪৮ ঘণ্টা আগে নিক্সন চৌধুরীর হুমকির মুখে নিজের ও কর্মীদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা জানান তিনি।

কান্না জড়িত কন্ঠে শহীদুল ইসলাম জানান, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন থেকেই তিনি নিক্সন চৌধুরীর হুমকির মুখে রয়েছেন। নিক্সন চৌধুরী তাকে সরে যাওয়ার জন্য প্রথমে অনুরোধ ও পরে হুমকি-ধামকি দিয়েছেন। তবু তিনি নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত অপরিবর্তিত রাখেন।

শহীদুল জানান, গত ২১ মে সকাল ১০টার দিকে নিক্সন চৌধুরী তার বাড়িতে এসে জোর জবরদস্তি করে তাকে তুলে নিয়ে যান। এরপর তাকে ভাঙ্গায় এমপির বাড়িতে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা বলতে বাধ্য করেন।

'আমি বাড়িতে আসার পর হাজার হাজার জনতার অনুরোধে আমি নির্বাচন করার ইচ্ছে পোষণ করি। জনগণের চাপের মুখে ভোটের অধিকার রক্ষায় আমি নির্বাচন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই,' বলেন তিনি।

গত ২৫মে রাতে নিক্সন চৌধুরী তার বাড়িতে সদরপুরের নেতাকর্মী ও তার সমর্থকদের নিয়ে নির্বাচনী সভা করে। ওই সভায় নিক্সন চৌধুরী তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। উপজেলার ৬৮ কেন্দ্রে তার কোনো এজেন্ট রাখবেন না বলে হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন শহীদুল।

শহীদুল ইসলাম বলেন, 'এমপির ওই বক্তব্যের পর আমার ৬৮টি কেন্দ্রের নেতাকর্মীদের ওপরেও প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিনিয়ত তাদের টেলিফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাদের সেন্টারে ঢুকতে দেবে না, এজেন্ট হতে দেবে না, প্রকাশ্যে ভোট সিল দিয়ে নিয়ে নেবে-এসব কথা বলে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে।'

সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক বলেন, 'একজন সংসদ সদস্য হয়ে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন উনি তা দিতে পারেন না। উনি নির্বাচন বিধি লঙ্ঘন করেছেন। জননেত্রী মন্ত্রী এমপিদের নির্বাচনের প্রভাবের বাইরে থাকতে বলেছেন। কিন্তু উনি তা মানছেন না।

নিক্সন চৌধুরী সম্পর্কে তিনি বলেন, 'উনি আসলে একটা মানসিক ভারসাম্যহীন লোক। ওনার কথায় এতো গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নাই।'

এসময় অন্যদের মধ্যে সদরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু আলম রেজা, সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মো. ফরহাদ মিয়া, সদস্য কাজী কুদ্দুসুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি ইসমাইল হোসেন, সদরপুর সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি ইয়াকুব আলী মোল্লাসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, তৃতীয় দফায় আগামী ২৯ মে সদরপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান কাজী শফিকুর রহমান (মোটর সাইকেল) ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শহীদুল ইসলাম ওরফে বাবুল (আনারস)। এ নির্বাচনে কাজী শফিকুর রহমানকে সমর্থন দিয়েছেন নিক্সন চৌধুরী।

Comments