উপজেলা নির্বাচন: চতুর্মুখী কোন্দলের আশঙ্কা আওয়ামী লীগে
আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থীকে সমর্থন না দেওয়া এবং কাউকে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে অনেক তৃণমূল ও কেন্দ্রীয় নেতা তাদের পছন্দের প্রার্থীর পেছনে ঝুঁকছেন।
শেষ পর্যন্ত, আগামী সপ্তাহগুলোতে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা, বর্তমান মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য, পরাজিত সংসদ সদস্য প্রার্থী এবং জানুয়ারির নির্বাচনে জয়ী 'স্বতন্ত্র' আইনপ্রণেতাদের মধ্যে একটি রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
তৃণমূল নেতারা ইতোমধ্যেই নির্বাচনে জয়লাভের জন্য মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, অন্যদিকে আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতা, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা উপজেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে চাইছেন।
কয়েকটি উদাহরণ দেখা যাক।
সূত্র জানায়, গত ৩১ মার্চ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ও বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ১০ উপজেলার সংসদ সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা না করেই 'আওয়ামী লীগের প্রার্থী' ঘোষণা করেন।
ছয়টি আসন নিয়ে গঠিত জেলার বেশিরভাগ সংসদ সদস্যও তাদের অনুগত প্রার্থী দাঁড় করানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।
নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সুবর্ণচর উপজেলা চেয়ারম্যান এএইচএম খায়রুল আনাম চৌধুরী (৭৫) বৃহস্পতিবার উপজেলার বর্ধিত সভায় বলেন, নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী তার ছেলে আতাহার ইশরাক সাবাব চৌধুরীকে চেয়ারম্যান প্রার্থী করেছেন শুধু তাকে অপমান করার জন্য। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
'আমি কখনো এমপি হতে চাইনি। আমি কখনই কারো বিরোধিতা করিনি... তাহলে আমাকে কেন একটি বাচ্চা ছেলের কাছে অপমানিত হতে হবে?', বৈঠকে বলেন, তিন বারের এই চেয়ারম্যান।
শনিবার টাঙ্গাইলের মধুপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপজেলার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা না করে সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণা করায় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মধুপুর উপজেলা চেয়ারম্যান সরোয়ার আলম খান আবুকে উপেক্ষা করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইয়াকুব আলীর নাম ঘোষণা করেন বিদায়ী কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগের ১২ জন সংসদ সদস্য ও একজন প্রতিমন্ত্রী ইতোমধ্যে তাদের বা তাদের নিকটাত্মীয়দের অনুগত 'আওয়ামী লীগ প্রার্থীর' নাম ঘোষণা করেছেন বলে তৃণমূল ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন।
৭ জানুয়ারির নির্বাচনের অংশ নিতে প্রায় ৫০ জন উপজেলা চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত যে ৪০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তাদের মধ্যে সাত জন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে এবং নয় জন 'স্বতন্ত্র প্রার্থী' হিসেবে জয়ী হন।
ভোটে হেরে যাওয়া বাকি উপজেলা চেয়ারম্যানদের অনেকেই আগামী ৮ মে থেকে পর্যায়ক্রমে শুরু হতে যাওয়া উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে চাইছেন।
তাদের একজন মুকসুদপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান কবির মিয়া। তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মোহাম্মদ ফারুক খানের (গোপালগঞ্জ-১) কাছে হেরে যান তিনি। এখন একই উপজেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
কবিরের মতো নীলফামারী-৪, চাঁদপুর-৫, দিনাজপুর-৪ ও খুলনা-৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোকছেদুল মোমিন, গাজী মাইনুদ্দিন, তরিকুল ইসলাম ও শেখ আকরাম হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তারা এখন স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে বলে সূত্র জানায়।
এদিকে, কিছু বর্তমান সংসদ সদস্য তাদের অনুগত প্রার্থীদের সহজ জয় নিশ্চিত করতে এবং স্থানীয় রাজনীতিতে তাদের দখল আরও শক্ত করতে কাজ করছেন।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিদ্যমান বৈরিতা আরও গভীর হতে পারে।
অপরদিকে, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে হেরে যাওয়া আওয়ামী লীগ মনোনীত কয়েকজন সংসদ সদস্য প্রার্থী এমপি সমর্থিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রার্থীদের সমর্থন দিয়ে আবারও মাঠে ফিরতে চাইছেন।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে মোট ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে ৫৭ জন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা। তৃণমূলে দলীয় পোর্টফোলিওতে থাকা আওয়ামী লীগ নেতারা মোট ৩০০ আসনের মধ্যে ১৮১টি আসনে দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
জাতীয় নির্বাচনের মতো, উপজেলা নির্বাচনেও শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যে লড়াই হতে পারে, কারণ বেশিরভাগ আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং কিছু ক্ষেত্রে জামায়াতের নেতারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ইতোমধ্যে বিদ্যমান বিভেদ কমাতে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা সম্প্রতি তৃণমূল নেতা, সংসদ সদস্য এবং তথাকথিত স্বতন্ত্র এমপিদের সঙ্গে বিভাগভিত্তিক বৈঠক শুরু করেছেন। সূত্র বলছে, কয়েকটি বৈঠকে স্থানীয় রাজনীতি নিয়ে নিজেদের মতপার্থক্য আরও স্পষ্ট হওয়ায় দলের নেতারা বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, দায়িত্বশীলদের দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।
তিনি গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যদি কোনো সংসদ সদস্য তার ছেলে বা স্ত্রী বা আত্মীয়-স্বজনকে উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে বেছে নেন তাহলে এটা দুঃখজনক।
সম্ভাব্য সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে দলের জেলা ইউনিটের ভূমিকা রয়েছে।
Comments