১৮ ডিসেম্বর থেকে শুধু নির্বাচনী প্রচারণা, রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়: অধিকার খর্ব হবে বলছেন বিশেষজ্ঞরা

আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে নির্বাচনী প্রচারণা ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি যেন না হয়, সে বিষয়ে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছে নির্বাচন কমিশন( ইসি)।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে ইসি বলেছে, আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে যারা সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তারা প্রচারণা শুরু করবেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে উদ্দেশ্য করে চিঠিতে বলা হয়েছে, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে এবং জনগণকে ভোট দিতে নিরুৎসাহিত করতে পারে এমন সমাবেশ এবং অন্যান্য পাবলিক ইভেন্ট করা থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে বিরত রাখতে হবে।

আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এ ব্যবস্থা বহাল রাখতে হবে।

বিএনপি, তার সহযোগী এবং বেশ কয়েকটি বামপন্থী রাজনৈতিক দল নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে আসছে।

দলগুলো নির্বাচন বর্জন করেছে। এক দফা দাবিতে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি বিরোধী দল অবরোধ ও ধর্মঘট পালন করে আসছে।

এছাড়া ইসলামপন্থী সংগঠন হেফাজতে ইসলাম সম্প্রতি ২৯ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে।

একাধিক সূত্র বলছে, ইসি বিশ্বাস করে যে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলতে বাধ্য করতে পারে।

তবে দলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সরাসরি সুযোগ ইসির নেই বলেও জানান তারা।

এ ছাড়া নির্বাচনবিরোধী রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে ভোটাররা আতঙ্কিত হতে পারেন। এ ধরনের কর্মসূচিতে ভোটার উপস্থিতি কম হতে পারে বলে মনে করেন তারা।

ইসির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আগের তিনটি নির্বাচনের আগে কমিশন এ ধরনের কোনো চিঠি পাঠায়নি।

২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলেও ২০১৪ সালে বিএনপিসহ অন্যান্য প্রধান বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করে।

গতকাল বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ইসির মুখপাত্র জাহাঙ্গীর আলমের কার্যালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করলে তার ব্যক্তিগত সচিব এ কে এম সাইফুল আলম বাধা দেন। তিনি বলেন, সংবাদ সম্পর্কিত বিষয়গুলি জনসংযোগ বিভাগের দেখা উচিত।

ইসি কেন এমন চিঠি দিয়েছে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, নির্বাচন কমিশন এ ধরনের প্রশ্নের জবাব দিতে পারবে।

তিনি বলেন, বিরোধীদের কর্মসূচির সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠির কোনো সম্পর্ক নেই।

তিনি আরও বলেন, বিগত নির্বাচনের সময় ইসি এ ধরনের চিঠি পাঠিয়েছিল কি না সে বিষয়ে তিনি জানেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, 'আমার যতদূর মনে আছে, সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচন কমিশন এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

যে দলগুলো রাজপথে নেমেছে, তারা অন্য কোনো ধরনের কর্মসূচি বেছে নিতে বাধ্য হতে পারে বলে যোগ করেন তিনি।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, 'সমাবেশ, মিছিল করা রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক অধিকার। আজ নির্বাচন কমিশন আবারও প্রমাণ করেছে যে, তারা আওয়ামী লীগকে সন্তুষ্ট করতে চায় এবং একতরফা নির্বাচন করতে চায়।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদে সকল নাগরিকের রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, 'নির্বাচন কমিশন এ ধরনের চিঠি দিয়েছে জেনে আমরা বিস্মিত হয়েছি। যারা নির্বাচনে অংশ নেবে না তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করার জন্যও এটি  একটি পদক্ষেপ। নির্বাচনবিরোধী কার্যকলাপ কী তা কে সংজ্ঞায়িত করে?'

তিনি বলেন, প্রত্যেকেরই নির্বাচনে অংশগ্রহণ বা বর্জন এবং নির্বাচনের পক্ষে বা বিপক্ষে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের অধিকার রয়েছে।

'আমরা আশা করি নির্বাচন কমিশন তাদের চিঠি প্রত্যাহার করবে।'

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

7h ago