যে কারণে আ জ ম নাছির আ. লীগের মনোনয়ন পান না

আ জ ম নাছির। ফাইল ফটো স্টার

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন বারবার দলীয় মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়ছেন দলের ভেতরে তার অনুসারীরা। বিষয়টি নিয়ে তারা প্রকাশ্যে কিছু না বললেও দলীয় সূত্রগুলো বলছে নাছিরের অনুসারীদের মধ্যে বঞ্চনাবোধ তৈরি হয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে নাছির এবার চট্টগ্রাম-৯, চট্টগ্রাম-১০ ও চট্টগ্রাম-১১ আসনের জন্য দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। তিনি এর আগে ২০২০ সালের চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। সেবারও হতাশ হতে হয়েছিল তাকে।

আওয়ামী লীগ সূত্রগুলো জানায়, নাছিরকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের মূল নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অথচ তার অনেক জুনিয়র নেতা, এমনকি তার অনুসারী হিসেবে পরিচিত কেউ কেউ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের বিভিন্ন আসনে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন।

নাছির তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে শুধু একবার দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ২০১৫ সালের চসিক নির্বাচনে মেয়র পদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তিনি। সেই নির্বাচনে তিনি বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এম মঞ্জুর আলমকে বড় ব্যবধানে পরাজিত করেন। এরপর আর কোনো নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাননি নাছির।

নাছির ১৯৭০-এর দশকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে রাজনীতি শুরু করেন। তিনি ছাত্রলীগ, চট্টগ্রাম কলেজ শাখার সভাপতি এবং ১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮০-এর দশকে তিনি ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯০ এর দশকে তিনি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০১৩ সালে তিনি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এখনও এই পদে আছেন তিনি।

বারবার চেষ্টা করেও ফোন না ধরায় এই ব্যাপারে নাছিরের বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

নাছিরের মনোনয়ন না পাওয়ার কারণ জানতে চট্টগ্রামের বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে কথা বলেছে এই প্রতিবেদক। তাদের কেউ কেউ নাছিরের অনুসারী হিসেবেও পরিচিত।

তাদের একজন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী। তিনি চসিক ২০ নং ওয়ার্ডের (দেওয়ান বাজার) কাউন্সিলর। তিনি বলেন, 'নাছির ভাই এবার মনোনয়ন পাননি, এর মানে এই নয় যে তিনি ভবিষ্যতে পাবেন না। তিনি দলের একজন নিবেদিতপ্রাণ নেতা। তাই এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কোনো আসন থেকে লড়বেন না।'

তবে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নাছির একসময় দলীয় হাইকমান্ডের 'গুডবুকে' ছিলেন এবং এ কারণে ২০১৩ সালে তৎকালীন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী এনামুল হক দানুর মৃত্যুর পর তাকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাকে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের একজন প্রতিশ্রুতিশীল নেতা বলে মনে করতেন। তাই ২০১৫ সালের মেয়র নির্বাচনে চসিক এর তৎকালীন তিনবারের নির্বাচিত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে মনোনয়ন না দিয়ে নাছিরকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।

মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নাছিরের দূরত্ব তৈরি হতে শুরু করে। সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ১০ আগস্ট চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে সরকারি কিছু কর্মকর্তার ব্যাপারে 'বিস্ফোরক' মন্তব্য করে আলোচনায় আসেন নাছির। তাদেরকে ৫ শতাংশ 'কমিশন' দিতে অস্বীকার করায় চসিক পর্যাপ্ত বরাদ্দ পায়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

নাছিরের অভিযোগ, তিনি কমিশন দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় মাত্র ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছিলেন। কিন্তু ৫ শতাংশ দিতে পারলে বরাদ্দের পরিমাণ ৩০০-৩৫০ কোটি টাকা হতো।

একজন সরকারি কর্মকর্তা ঘুষ হিসেবে একটি পাজেরো গাড়ি দাবি করার ব্যাপারে বক্তব্য দেওয়ার পর নাছিরের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিল এলজিআরডি ও সমবায় মন্ত্রণালয়। দলীয় সূত্র জানায়, দল তখন এই বিষয়টি সহজভাবে নেয়নি।

আরও কিছু কারণে দলে নাছিরের অবস্থান ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। ২০১৬ সালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) নাছিরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর লাশ ক্যাম্পাসে তার বাসায় ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।

এটিকে হত্যা দাবি করে ২০১৯ সালে দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে একটি অনুষ্ঠানে প্রবেশ করে খুনিদের শাস্তি দাবি করেন। সেই অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নাছির। নাছিরের অনুসারীরা তাকে জোর করে হল থেকে বের করে দেয় বলে তখন অভিযোগ ওঠে। সেখানে জাহেদা অভিযোগ করে বলেন, নাছিরের অনুসারীরা তার ছেলেকে খুন করেছে।

চসিক ২০১৬ সালে জাতিসংঘ পার্কটি ২৫ বছরের জন্য একটি বেসরকারি সংস্থাকে ইজারা দেওয়ার উদ্যোগ নিলে স্থানীয় লোকজন এবং তৎকালীন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ওই উদ্যোগের বিরোধিতা করেন। এরপর নাছির ও মোশাররফের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়। সূত্র জানায়, নাছিরের আচরণে মোশাররফ নাখোশ হন।

আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, নাছিরকে স্নেহ করতেন মোশাররফ। তবে, ২০১৬ সালের ওই ঘটনার পর মোশাররফ ও নাছিরের সম্পর্কে তিক্ততা তৈরি হয়।

মেয়র থাকাকালে চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিং পুল নির্মাণ এবং প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির মালিকানাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তৎকালীন আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহানগর সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে নাছিরের দ্বন্দ্ব হয়। তাদের একে অপরের বিরুদ্ধে বক্তৃতা ও বিবৃতি নিয়মিত জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে যা দলীয় হাইকমান্ড সহজভাবে নেননি বলে সূত্র জানায়।

সূত্রগুলো জানায়, নাছির এভাবেই দলে নিজের সুনাম হারিয়েছেন।

Comments

The Daily Star  | English
Garment industry labour unrest in Bangladesh

Why does labour unrest drag on?

Following the political changeover on August 5, the country’s main export-earnings sector, the garments industry, witnessed a large-scale and drawn-out spell of labour unrest in industrial belts such as Savar, Gazipur, Ashulia, Zirabo and Zirani.

13h ago