‘নৌকা মার্কায় সিল মারো’ বলছেন যুবক, ব্যালট ছিঁড়ে দিচ্ছেন নির্বাচন কর্মকর্তা

ছড়িয়ে যাওয়া ভিডিওতে দেখা যায় গলায় নৌকার ব্যাজ পরা এক যুবক স্ট্যাম্পপ্যাড থেকে বৃদ্ধাঙ্গুলিতে কালি লাগিয়ে ছাপ দিচ্ছেন এবং সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ব্যালট পেপারের পেছন দিকে সই করছেন। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

'সিল মারো ভাই সিল মারো, নৌকা মার্কায় মারো'-সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে যাওয়া একটি ভিডিওতে এক যুবককে এমনই বলতে শোনা যায়। 

দুই মিনিট ২৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিওর ৫ সেকেন্ডের সময়ে যে ব্যালট পেপারের দৃশ্য দেখা যায়, সেটি গত ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনের। 

এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার দুইদিন পর গত মঙ্গলবার  ফলাফল স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। একইসঙ্গে ভোট কারচুপির অভিযোগ তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়।  

ভিডিওটির ৪১ সেকেন্ডে একজনকে ব্যালট পেপারের সবচেয়ে নিচের অংশের নৌকা প্রতীকে সিল মারতে দেখা যায়। এ সময় তাকে বলতে শোনা যায়, 'সিল মারো ভাই সিল মারো, নৌকা মার্কায় মারো।'

ভিডিওটির ৯ সেকেন্ডের পর দেখা যায়, ওই ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বরত এক সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার (নারী) সামনে তিনজন যুবক দাঁড়িয়ে আছেন। 

ওই নারী কর্মকর্তা যুবকদের একের পর এক ব্যালট ছিঁড়ে দিচ্ছেন। এক যুবক স্ট্যাম্পপ্যাড থেকে বৃদ্ধাঙ্গুলিতে কালি লাগিয়ে ছাপ দিচ্ছেন এবং নৌকা প্রতীকে সিল মারছেন। পাশে থাকা আরেক যুবক ব্যালট ভাঁজ করে দিচ্ছেন।

একই ভিডিও ক্লিপে ধারণ করা আরেকটি বুথের দৃশ্যে দেখা যায়, আরেক নারী সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হাসতে হাসতে ব্যালট পেপারের পেছন দিকে সই করছেন। তার সামনে দাঁড়ান পাঁচ-ছয় জন যুবক। 

'ব্যালটে সিলের কালি পড়েনি,' এক যুবকের এমন কথায় ওই কর্মকর্তাকে বলতে শোনা যায়, 'আরে কালি হইছে।' 

তার পাশে থাকা যুবকের গলায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শাহজাহান আলম সাজুর ছবি সম্বলিত কার্ড ঝুলছে। 

কর্মকর্তা দ্রুত একটার পর একটা ব্যালট ছিঁড়ে দিচ্ছেন, আর যুবকরা নৌকা প্রতীকে সিল মারছেন। তখনই এক যুবক বলতে থাকেন, 'সিল মারো ভাই সিল মারো।' আরেক যুবক বলেন, 'নৌকা মার্কায় মারো।'

সেখানে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার উদ্দেশে আরেকজন বলেন, 'আরে আপনে ছিঁড়েন না। ৮-১০টা ছিঁড়া লইন না। ছিঁড়া দিয়া দেন, মাইরা দেই। পরে আপনি লেখেন, আস্তে আস্তে। আপনি ছিঁড়েন ১০-২০টা। আমরা সিল মারি।'

এর পরপর আরেকজন বলে ওঠেন, 'আরে আমি দিমু, ঠাস ঠাস ঠাস।' আরেকজন বলেন, 'আস্তে আস্তে।'

এক মিনিট ২৭ সেকেন্ডের পর ভিডিওটির শুরুর দিকের নারী কর্মকর্তার বুথের চিত্র দেখা যায়। এ দৃশ্যে সেই নারী কর্মকর্তাকে এক নারী পোলিং এজেন্ট সহায়তা করছেন। 

তারা ব্যালট পেপার ছিঁড়ে দিচ্ছেন। নৌকার সমর্থকরা ব্যালটের নিচের অংশের 'নৌকা' প্রতীকে প্রকাশ্যে সিল মারছেন। নারী কর্মকর্তাটি ভোটার নম্বর ২৩৯ কি না, জানতে চাইলে নৌকার সমর্থকরা বলেন, 'না ১৩৯।'

এদিকে ফেসবুকে এমন ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, ভিডিওতে ধারণকৃত চিত্রটি আশুগঞ্জ উপজেলার শরীফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের দুটি বুথের।

ভিডিওতে প্রদর্শিত দুজন নারী কর্মকর্তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য শরীফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিউল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্য ডেইলি স্টারের এই প্রতিবেদক। 

প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছে ওই দুই নারী কর্মকর্তার ছবি পাঠানো হলে, তিনি শাড়ি ও চশমা পরা নারী কর্মকর্তাকে চিনতে পারেন। তিনি বলেন, 'অন্য এক সাংবাদিক আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, একজন আমার কেন্দ্রের সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ছিলেন। ছবি অস্পষ্ট হওয়ায় অন্যজনকে আমি চিনতে পারিনি।'

উল্লেখ্য, গত ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনের বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু নৌকা প্রতীকে ৬৬ হাজার ৩১৪ ভোট এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা কলার ছড়ি প্রতীকে পেয়েছেন ৩৭ হাজার ৫৫৭ ভোট। 

তবে নির্বাচনে অনিয়মের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর গত মঙ্গলবার এর ফলাফলের গেজেট প্রকাশ স্থগিত রেখে অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত করার নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন। 

এদিকে, অভিযোগ তদন্ত করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ডিসি-এসপিকে দায়িত্ব দেওয়ায়, তাদের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা। 

অপরদিকে, ভোট কারচুপি ও অনিয়মের বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। 

Comments

The Daily Star  | English

One killed in multi-vehicle crash on Dhaka-Mawa highway

The chain of crashes began when a lorry struck a private car from behind on the Mawa-bound lane

25m ago