ভোটার বিড়ম্বনা: ওয়েবসাইট থেকে জানার সুযোগ নেই ভোটকেন্দ্রের নাম
গুলশান এলাকার বাসিন্দা মনোয়ারুল ইসলাম ঢাকা-১৭ আসনের একজন ভোটার। আগামীকাল সোমবার অনুষ্ঠেয় এই আসনের উপনির্বাচনে তিনি ভোট দিতে আগ্রহী।
ভোট দিতে যাওয়ার আগে নিজের ভোটার নম্বর আর কেন্দ্রের নামটি জানা চাই। তবে ভোট শুরুর ১৬ ঘণ্টা আগেও মনোয়ার সেটা জানতে পারেননি।
দ্য ডেইলি স্টারকে মনোয়ার বলেন, 'আমি এখানকার একজন ভোটার। ভোট দিতে চাই। কিন্তু কোন কেন্দ্রে দেবো? নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে ঢুকে এটা জানার কোনো অপশন পেলাম না। মোবাইলের এসএমএস অপশনে গিয়ে নিজের এনআইডি নম্বর লিখে ১০৫-এ পাঠালাম। সেখান থেকেও কিছু জানা গেল না। তাহলে উপায়টা কি?'
এর আগে ২০২০ সালে ঢাকা সিটি নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন এসএমএস ও অ্যাপের মাধ্যমে, নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে ঢুকে, কলসেন্টারে ফোন করে এবং ও কিউ আর কোড স্ক্যান করে কেন্দ্রের নাম ও ভোটার নম্বর জানার ব্যবস্থা রেখেছিল।
কিন্তু এর কোনোটিই এখন কার্যকর নেই বলে জানান এই উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'ভোটারদের এলাকার কাছাকাছি কোনো কেন্দ্রে গিয়ে ভোটার নম্বর ও কেন্দ্রের নাম জেনে আসতে হবে।' এটি ছাড়া কেন্দ্রের নাম ও ভোটার নম্বর জানার আর কোনো উপায় নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সমস্যার এমন সমাধানের কথা জেনে রীতিমতো উষ্মা ঝরল বনানীর আরেক ভোটার সারোয়ার হোসেনের কণ্ঠে। তিনি বলেন, 'এটা কীভাবে সম্ভব? আন্দাজে কোথায় ঘুরব? কোন কেন্দ্রে যাব? আর আমি নাহয় কোনোভাবে খুঁজে খুঁজে এটা বের করলাম। কিন্তু একজন বয়স্ক মানুষের পক্ষে তো সেটা সম্ভব না।'
হতাশা প্রকাশ করে এই ভোটার আরও বলেন, 'সমাজের একজন সচেতন ও শিক্ষিত মানুষ হয়েও কেন্দ্রের নাম, ভোটার নম্বর বের করতে আমাকে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে অন্যদের কী অবস্থা হবে? নির্বাচন কমিশনের উচিত ছিল এগুলো জানার সহজ কোনো উপায় রাখা।'
রাজধানীর গুলশান, বনানী, ভাসানটেক থানা ও সেনানিবাস এলাকা নিয়ে গঠিত হয়েছে ঢাকা-১৭ আসন। এই আসনের সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের মৃত্যুতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে এ উপনির্বাচন হচ্ছে।
ভাসানটেক এলাকার ভোটার আবুল কালাম শামসুদ্দিনের কথায় উঠে এলো আরেকটি সমস্যার কথা। তিনি বলেন, 'শনিবার মধ্যরাত থেকে এই নির্বাচনী এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। রোববার মধ্যরাত থেকে বাসসহ অন্যান্য যান্ত্রিক যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। এক্ষেত্রে কেন্দ্র খুঁজে বের করার কাজটি তো আরও কঠিন।'
নির্বাচন কমিশন এই উপনির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করে ব্যালটের মাধ্যমে ভোট নিতে যাচ্ছে। এ আসনের মোট ভোটার তিন লাখ ২৫ হাজার ২০৫ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার এক লাখ ৫৩ হাজার ৫৮০।
১২৪টি ভোটকেন্দ্রের ৬০৫টি ভোটকক্ষে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভোটগ্রহণ চলবে।
এ আসনে উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আছেন ৮ জন। তাদের মধ্যে দলীয় প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগের মোহম্মদ আলী আরাফাত, জাতীয় পার্টির সিকদার আনিসুর রহমান, জাকের পার্টির কাজী মো. রাশিদুল হাসান, তৃণমূল বিএনপির শেখ হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. রেজাউল ইসলাম স্বপন ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের মো. আকবর হোসেন।
আর স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে আছেন আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মো. আশরাফুল আলম (হিরো আলম) এবং মো. তারিকুল ইসলাম।
Comments