সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন

প্রার্থীদের নজর সম্প্রসারিত নগরের নতুন ভোটারদের দিকে

সিলেট নগরীর পার্শ্ববর্তী কুচাই এলাকার একটি সড়ক। এই এলাকা আগে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কুচাই ইউনিয়নের অংশ ছিল, বর্তমানে নগরীর অংশ। ছবি: শেখ নাসির।

২০০২ সালে সিলেট পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করার ১৯ বছর পর ২০২১ সালে নগরীর ২৬ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে সম্প্রসারিত করা হয় ৭৯ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকায়।

আগামী ২১ জুন অনুষ্ঠেয় সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এই বর্ধিত এলাকার নতুন ১ লাখ ৩৩ হাজার ৭৭৭ ভোটারের দিকে বিশেষ নজর দিচ্ছেন মেয়রপদ প্রার্থীরা।

অনুন্নত ও সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত এসব এলাকায় মেয়র পদপ্রার্থীরা উন্নয়ন ও সেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের নজর কাড়তে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

সিলেট পৌরসভা ১৮৭৮ সালে গঠিত হয় এবং ২০০২ সালের ২৮ জুলাই সিটি করপোরেশনে উন্নীত হয়। তারপর থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ২৭টি ওয়ার্ডে বিভক্ত নগর এলাকা একই রকম থাকে এবং ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৪টি সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

দীর্ঘদিনের দাবি, আলোচনা ও আইনি প্রক্রিয়ার পর ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট সিলেট সদর উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন পরিষদ এবং দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ৩টি ইউনিয়ন পরিষদ বিলুপ্ত করে সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

নতুনভাবে সম্প্রসারিত এলাকাগুলোকে আরও ১৫টি ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়েছে, যেখানে এবারই প্রথমবারের মতো সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে থাকা এই এলাকাগুলোর নগরসংলগ্ন অংশে অপরিকল্পিত নগরায়ন হয়েছে এবং বাকি অংশ এখনো পুরোদস্তুর গ্রামাঞ্চল।

এখনও বেশিরভাগ এলাকায় নেই পাকা সড়ক, নেই পানি সরবরাহ, সড়ক বাতি, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং অন্যান্য অনেক নাগরিক সুবিধা।

২০২১ সালে সিটি করপোরেশন ঘোষণার পর ইউনিয়ন পরিষদ বিলুপ্ত করে দেওয়ায় এসব এলাকার বাসিন্দারা প্রশাসনিক সমস্যায়ও রয়েছেন। সিটি করপোরেশন ৪টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের মাধ্যমে সেবা দেওয়ার ঘোষণা দিলেও জনপ্রতিনিধি না থাকায় জন্ম কিংবা মৃত্যুসনদসহ দরকারি অনেক কিছুই অনুপস্থিত এসব এলাকায়।

সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, নতুন সম্প্রসারিত এলাকার উন্নয়নের জন্য সিসিক প্রায় ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রণয়ন করে। প্রকল্পটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন শেষে একনেকের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

নগরীতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া বালুচর এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহিম বলেন, 'বালুচর নগর সংশ্লিষ্ট এলাকা এবং বিগত ২ দশক ধরে এখানে অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ন হচ্ছে। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদের বাজেট সীমাবদ্ধতায় কোনো নাগরিক সুবিধাই গড়ে ‍উঠেনি।'

`ইউনিয়ন পরিষদ বিলুপ্ত করার পর বিভিন্ন সনদ থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায়ও নানা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। এই নির্বাচনের পর আশা করছি ভোগান্তির অবসান হবে এবং প্রকৃত নগরায়নের অন্তর্ভুক্ত হবে এই এলাকা', যোগ করেন তিনি।

নতুন ১৫টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্রথমবারের মতো কাউন্সিলর হতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রচারণায়। প্রত্যেকের প্রচারণার মূলে রয়েছে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি ও সেবাপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা।

তবে এসব এলাকার ভোটারদের মনোযোগ কাড়তে বেশি মনোযোগী মেয়র পদপ্রার্থীরা। তারা কাঙ্খিত উন্নয়নের আশ্বাস দেওয়ার মাধ্যমে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পুরনো নগর এলাকার চেয়েও বেশি সময় ব্যয় করছেন এসব এলাকায়।

জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, 'নগরীর সম্প্রসারিত অংশগুলো ছিল ইউনিয়ন পরিষদের অংশ এবং এসব এলাকায় কোনো নাগরিক সুবিধা নেই। আমি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ নাগরিকদের একটি উপদেষ্টা প্যানেল গঠন করে পরিকল্পনা অনুযায়ী নতুন এলাকার উন্নয়নে কাজ করব।'

আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, 'আমি বিজয়ী হলে নগরীর জন্য ১০০ বছরের মাস্টারপ্ল্যান করব। যেখানে বর্ধিত এলাকাগুলোর উন্নয়নে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

JnU protesters spend night on road, vow to continue sit-in until demands met

As of 10:00am today, demonstrators remain at the site, refusing to leave until their demands are fulfilled

1h ago