নির্বাচনী ইশতেহারে যা জানালেন আজমত উল্লা
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান নগরীর জলাবদ্ধতা ও যানজট নিরসনসহ ২৮ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন।
সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে রাস্তা, ড্রেন, কালভার্ট, ব্রিজসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি সেবামূলক খাতগুলোকে আরও শক্তিশালী করে সেবার মানকে সুনিশ্চিত করতে ১ বৎসর, ২ বৎসর ও ৫ বৎসর মেয়াদি ৩ স্তরবিশিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করার কথা জানিয়েছেন তিনি।
আজ রোববার সকাল ১১টায় শহরের প্রকৌশল ভবনের ৬ষ্ঠ তলার কনফারেন্স কক্ষে তিনি এই ইশতেহার ঘোষণা করেন।
গাজীপুর মহানগরের পরিকল্পিত উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা নিরসন, বেকারত্ব দূরীকরণ, সেবার মান বৃদ্ধিকরণ, অধিগ্রহণকৃত ভূমির ক্ষতিপূরণ প্রদান, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত, শ্রমিক-কর্মচারী ও বস্তিবাসীদের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতকরণ, বর্জ্য ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, সাংবাদিকদের প্রয়োজনীয় সহায়তা, যানজট সমস্যা থেকে উত্তরণ ও সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাসহ বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা করেন তিনি।
অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নতকরণ, মূল শহরের যানজট নিরসনে পথচারীদের পারাপারে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, রেলগেট এলাকায় ফ্লাইওভার নির্মাণসহ আধুনিক গাড়ি পার্কিং লট নির্মাণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গুরুত্ব বিবেচনায় সড়ক উন্নয়ন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্টজনদের নামে সড়কের নামকরণ, নির্মাণ কাজের গুণগত মান নিরীক্ষার জন্য শক্তিশালী মনিটরিং টিম গঠন করা হবে।
যানজটকে নগরীর বড় সমস্যা উল্লেখ করে অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান বলেন, নগরীতে সড়ক সুবিধার তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা অনেক বেশি। সড়কের পাশে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা বহুতল ভবনের অধিকাংশেরই নিজস্ব কোনো পার্কিং সুবিধা নেই। ফলে সড়কে যত্রতত্র গাড়ি রাখার কারণে মূল সড়কের অর্ধেকই যানজট সৃষ্টি হয়। মানুষের চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়ে নষ্ট হয় কোটি কোটি শ্রমঘণ্টা ও অপচয় হয় বিপুল অর্থের। নগরীর এ জটিল সমস্যা নিরসনে ট্রাফিক বিভাগ, যানবাহন মালিক, বিআরটিএসহ সড়ক ব্যবহারকারী সবার সঙ্গে বসে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি ও বাস্তবায়নে উদ্যোগী হবো। রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে নাগরিকদের রেলে যাতায়াত সহজীকরণে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
নগরীর বেদখলে হয়ে যাওয়া খাল, নালা, নদী পুনরুদ্ধার ও পানি নিষ্কাশন উপযোগী করতে প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে তা নির্মূলে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সবার সমন্বিত উদ্যোগে নাগরিকবান্ধব নগর গড়তে নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হবে। নগরীর উপযুক্ত স্থানে বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার ব্যবস্থা করে নিয়মিত মশক নিধনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
সিটি করপোরেশনের অন্যতম প্রধান কাজ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মহানগরে প্রতিদিন হাজার হাজার টন বর্জ্য জমছে। যত্রতত্র ময়লা ছুঁড়ে ফেলায় সড়কে জলাবদ্ধতা হচ্ছে। নাগরিক দায়িত্বশীলতা ফিরিয়ে এনে এই কুঅভ্যাস বন্ধ করতে হবে সবার সমন্বিত উদ্যোগে। বর্জ্য রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট গড়ে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তৈরি করা হবে। অপচনশীল পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যরে আলাদা ডাম্পিং ইয়ার্ড করে রিসাইক্লিং প্ল্যান্টে রপ্তানি উপযোগী গ্রহস্থালী সামগ্রী তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে। জলাবদ্ধতা ও দূষণ যেন না ছড়ায় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর, এনজিও এবং পরিবেশবিদদের নিয়ে তদারকি কমিটি গড়া হবে।
অভিজ্ঞ নগরবিদ ও প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে বিশ্বমানের একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে জনগণের সেবা নিশ্চিত করা, হোল্ডিং ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্স, নাগরিক সনদসহ বিভিন্ন সনদের ফি, ইউটিলিটি বিল ইত্যাদি অন লাইনের মাধ্যমে পরিশোধের ব্যবস্থা এবং ওয়ার্ডগুলোকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা ও ফ্রি ওয়াই-ফাই জোন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। সরকার কর্তৃক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ভূমি অধিগ্রহণে যে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা যথাযথভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে প্রদান করা হবে।
ইশতেহারে তিনি বলেন, সকল নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের জন্য সরকারি হাসপাতাল, স্বল্পমূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, দুঃস্থ ও অসহায় মানুষদের মৃত্যুর পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা এবং সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিসহ ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে শ্রমিক, বস্তিবাসী ও দরিদ্র মানুষের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্য কার্ড প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রতিবন্ধী নাগরিক এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্য পর্যাপ্ত আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হবে।
ইশতেহারে বলা হয়, শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রয়োজনে জিসিসি'র অধীনে কারিগরি ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে। ওইসব প্রতিষ্ঠানে অনাথ, গরীব, যোগ্যতাসম্পন্ন মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে। সিটি করপোরেশনের নিজস্ব পাঠাগারের আধুনিকীকরণ, নতুন পাঠাগার প্রতিষ্ঠা, ব্যক্তি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত পাঠাগার সমূহকে সহায়তা প্রদান করা হবে।
শ্রমবান্ধব এ শিল্প নগরীর শ্রমিক-কর্মচারী ও বস্তিবাসীদের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতে পোশাক শিল্পসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের অধিকার সংরক্ষণ ও নির্যাতন প্রতিরোধে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নিয়মিত মনিটরিং করা হবে। শ্রমজীবী মায়েদের শিশুদের পরিচর্যার জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে 'ডে-কেয়ার' সেন্টার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগসহ সরকার ও মালিক পক্ষের সহযোগিতায় বেতন-ভাতাদি, নিরাপত্তা, বাসস্থান ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে সহায়তা প্রদান করা হবে। শিল্প মালিক ও ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি কমাতে গাসিক আঞ্চলিক কার্যালয়ে হেল্প-ডেক্স তৈরি করা হবে।
সংবাদকর্মীদের উন্নয়নে গাজীপুর প্রেসক্লাবের উন্নয়ন ও সংবাদকর্মীদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে কোনো সাংবাদিক যেন হয়রানির শিকার না হয় সে উদ্যোগ নেওয়া হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্য, ভাতৃত্ববোধ, সম্প্রীতি রক্ষা ও সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য সিটি করপোরেশন কার্যকর ভূমিকা রাখবে। গাজীপুরের ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য যাদুঘর ও আর্ট গ্যালারী স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, নগরীর বিপুল জনগোষ্ঠীকে ন্যূনতম সেবা দিতে পারাটাই আসল যোগ্যতা। সুযোগ পেলে নিজের মেধা-মনন, অভিজ্ঞতা সবকিছু নগরবাসীর জন্য উৎসর্গ করাই আমার আসল অঙ্গীকার।
ইশতেহার ঘোষণাকালে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওয়াজ উদ্দিন, আতাউল্লাহ মন্ডল, আলীম উদ্দিন বুদ্দিন, আব্দুল হাদী শামীম, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট রীনা পারভীন, অ্যাডভোকেট আমানত হোসেন খান, অ্যাডভোকেট আনোয়ার সাদাত প্রমুখ।
Comments