৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট চলছে, প্রার্থী ‘নিখোঁজে’ নজর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়
দেশের মোট ৬ সংসদীয় আসনে আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৮টায় উপনির্বাচন শুরু হয়েছে। আসনগুলোর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ বিশেষভাবে আলোচনায়। কেননা, এই আসনের এক স্বতন্ত্র প্রার্থী গত ৫ দিন ধরে 'নিখোঁজ'।
আশুগঞ্জ বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু আসিফ আহমেদের পরিবার তাকে নিখোঁজ বলে অভিযোগ করলেও গতকাল মঙ্গলবার একজন নির্বাচন কমিশনার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বলেছেন, তাদের কাছে মনে হয়েছে তিনি 'আত্মগোপন' করেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) উপনির্বাচনে আরও বেশ কিছু চমকপ্রদ বিষয় রয়েছে। এই আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেয়নি। এর পরিবর্তে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়াকে বিজয়ী করতে কাজ করছেন। এমনকি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন গত সোমবার নির্বাচনী এলাকা পরিদর্শন করে সাত্তারের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেন।
গত ডিসেম্বরে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন সাত্তার।
ঠাকুরগাঁও-৩, বগুড়া-৪ ও ৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ও ৩ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে বিএনপির ৬ সংসদ সদস্য পদত্যাগের পর আসনগুলো শূন্য হওয়ায় এই উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বগুড়ায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভোটারদের ভয়ভীতি ও ভোটকেন্দ্রে না আসার জন্য হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
আসিফ আত্মগোপনে: নির্বাচন কমিশনার
নির্বাচন কমিশনার আনিসুর রহমান গতকাল তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও নির্বাচন কর্মকর্তার কাছ থেকে তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছেন।
'প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মনে হচ্ছে, প্রার্থী হয়তো আত্মগোপনে রয়েছেন।'
স্বতন্ত্র প্রার্থী আসিফের কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাড়িয়ে পড়েছে উল্লেখ করে আনিসুর বলেন, 'আমি অডিওটি শুনেছি। কথোপকথন থেকে মনে হচ্ছে, তাদের কোনো পরিকল্পনা ছিল।'
তিনি জানান, স্থানীয় প্রশাসন প্রতিবেদনে বলেছে যে প্রার্থী 'নিখোঁজ' এবং এটি নিশ্চিত যে ঘটনার সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কোনো যোগসূত্র নেই।
কমিশনার বলেন, 'প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে প্রার্থীকে একবার পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু পরে তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় অবস্থান শনাক্ত করা যায়নি। তবে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এখনো তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।'
আসিফের স্ত্রী মেহেরুন্নেসা মেহেরিন জানান, তিনি তার স্বামী নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালকে ই-মেইলে অভিযোগ করেছেন।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে আশুগঞ্জে নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'আমাদের ক্রমাগত হুমকি দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ আমাদের বাড়িতে এসে অকারণে তল্লাশি চালাচ্ছে, হয়রানি করছে।'
সুষ্ঠু উপনির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবদুল হামিদ ভাসানী, জাকের পার্টির মনোনীত প্রার্থী জহিরুল ইসলাম জুয়েল ও আসিফের স্ত্রী।
হামিদ বলেন, 'উপনির্বাচন সুষ্ঠু হবে, এমন কোনো লক্ষণ নেই। ক্ষমতাসীন দল ও স্থানীয় প্রশাসন আবদুস সাত্তারকে বিজয়ী করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।'
জহিরুল বলেন, 'প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ভূমিকায় সাধারণ মানুষ হতাশ।'
ভয় দেখানোর অভিযোগ
বগুড়া-৬ উপনির্বাচনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (ইনু) প্রার্থী এমদাদুল হক ইমদাদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মান্নান অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য অনেক ভোটারকে হুমকি দিয়েছে।
তবে বগুড়া-৬ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রাগেবুল আহসান রিপু অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা কাউকে হুমকি দিচ্ছি না। উপনির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে।'
বগুড়া-৪ ও ৬ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম (হিরো আলম) জানান, তিনি শুনেছেন যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে ফলাফল বদলানো হতে পারে।
তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ইভিএম ব্যবহারে কোনো অনিয়ম দেখলে আমি উপনির্বাচন বয়কট করব।'
আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা ভোটকেন্দ্র দখলের হুমকি দিচ্ছে—এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়ার জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, 'একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী লিখিত অভিযোগ করেছেন এবং আরও কয়েকজন প্রার্থী এ বিষয়ে আমাদেরকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন।'
তিনি বলেন, 'আমরা ইতোমধ্যেই সুষ্ঠু উপনির্বাচন নিশ্চিত করতে ওই সব ভোটকেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেট, স্ট্রাইকিং ফোর্স, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বিজিবির সংখ্যা বাড়িয়েছি।'
বগুড়ার ২ আসনেই অনেক ভোটার ইভিএমে ভোট দেওয়ার বিষয়ে চিন্তিত। উদাহরণস্বরূপ বগুড়ার কাহালু উপজেলার ভোটার ৫০ বছর বয়সী হযরত আলীর কথাই ধরা যাক। তিনি বলেন, 'কীভাবে ইভিএমে ভোট দিতে হয় এবং কীভাবে ভোট গণনা করা হয়, আমরা তো এর কিছুই জানি না।'
অনেক ভোটার, বিশেষ করে বিএনপির নেতাকর্মীরা ভোট দিতে মোটেও আগ্রহী নন। কারণ, দলটি তাদের 'দুর্গে' উপনির্বাচনে প্রার্থী দেয়নি।
নির্বাচন কমিশনার আনিসুর জানান, তারা উপনির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন এবং স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোরভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, 'কীভাবে ইভিএম ব্যবহার করে ভোট দিতে হয় সে বিষয়ে আমরা ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন। আশা করি ইভিএম ব্যবহারে কোনো সমস্যা হবে না।'
দ্য ডেইলি স্টারের ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও বগুড়া সংবাদদাতা এই প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন।
Comments