নির্বাচনের আগে গাড়ি রিকুইজিশন আতঙ্ক: যা জানা প্রয়োজন

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যানবাহন রিকুইজিশন শুরু করায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাস, মাইক্রোবাস, পিকআপ, হিউম্যান হলারসহ বিভিন্ন পরিবহনের মালিক ও চালকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। 
গাড়ি রিকুইজিশন
সরকারি যানবাহনের সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাস, মাইক্রোবাস, পিকআপ ভ্যান রিকুইজিশন করে। ফাইল ফটো

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আগামী রোববার। নির্বাচনী দায়িত্ব পালন ও ভোটের সরঞ্জাম বহনের জন্য বিপুল সংখ্যক পরিবহনের প্রয়োজন।

সরকারি যানবাহনের সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যানবাহন রিকুইজিশন করছে। এতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাস, মাইক্রোবাস, পিকআপ ভ্যান, হিউম্যান হলারসহ বিভিন্ন পরিবহনের মালিক ও চালকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। 

রিকুইজিশন এড়াতে অনেকেই গাড়ি বের করছেন না। এতে একদিকে যেমন তাদের আয় কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে যাত্রী দুর্ভোগ বাড়ছে।

কয়েকজন বাসের চালক ও হেলপার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গাড়ি রিকুইজশন দিলেও, কোনো খরচ দেয় না। এতে তারা বাস বের করছেন না। 

গত কয়েকদিন ধরে রিকুইজশন আতঙ্কে সড়কে গাড়ি কম থাকায়, মানুষকে অনেক ক্ষেত্রে হেঁটে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে। 

রিকুইজিশন
রিকুইজিশন আতঙ্কে রাজধানী ঢাকায় যানবাহন স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। আজ শুক্রবার মহাখালী থেকে ছবি দুটি তুলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সাংবাদিক শাহীন মোল্লা।

ব্যাপক হারে গাড়ি রিকুইজিশনের কারণে, অনেকে গনপরিবহন স্বল্পতায় হতাশা প্রকাশ করে আবার অনেকে ব্যক্তিগত গাড়ি রিকুইজিশনের আতঙ্কের কথা উল্লেখ করে 'ট্রাফিক অ্যালার্ট' ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দিয়েছেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্সের ১৯৭৬ এর ১০৩ (ক) ধারা অনুযায়ী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ির প্রয়োজন হলে  জনস্বার্থে সর্বোচ্চ সাত দিনের জন্য যানবাহন রিকুইজিশন করতে পারে।

কিন্তু, ২০১০ সালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি অংশের বিরুদ্ধে এ ধারা অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করে।

২০১৯ সালের ৩১ জুলাই হাইকোর্টের একটি আদেশে বলা হয়, পুলিশ প্রাইভেটকার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ট্যাক্সি রিকুইজিশন করতে পারবে না। 

২০২২ সালের ৮ জুন এক পূর্ণাঙ্গ রায়ে হাইকোর্ট গাড়ি রিকুইজিশনের ক্ষেত্রে ১১টি নির্দেশনা দেয়। 

নির্বাচন ছাড়াও যে কোনো সময় গাড়ি রিকুইজিশনের বিষয়ে এসব নির্দেশনা জেনে রাখা উচিত। এগুলো হলো-

১. যে কোনো গাড়ির রিকুইজিশন অবশ্যই জনস্বার্থে করতে হবে।

২. রিকুইজিশন করা গাড়ি কোনা কর্মকর্তা ব্যক্তিগত বা পরিবারের কাজে ব্যবহার করতে পারবেন না। 

৩. কোনো ব্যক্তি, কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন কোনো যানবাহন পূর্ব নোটিশ ছাড়াই রিকুইজিশন করা যাবে না।

৪. প্রত্যেক থানায় রিকুইজিশন করা গাড়ির তালিকা সংরক্ষণ করতে হবে।

৫. রিকুইজিশন করা গাড়ির কোনো ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। গাড়ির পেট্রোল খরচ বহন করতে হবে। চালকদের খাবার খরচও দিতে হবে।

৬. ছয় মাসের মধ্যে একই গাড়ি দুইবার রিকুইজিশন করা যাবে না।

৭. নারী, শিশু, রোগী বহনকারী গাড়ি রিকুইজিশন করা যাবে না।

৮. এসব নির্দেশনা পালনে পুলিশ কমিশনার কর্তৃক একটি সার্কুলার জারি করে তা সব পুলিশ কর্মকর্তার কাছে পাঠাতে হবে।

৯. কোনো গাড়ি একনাগাড়ে সাত দিনের বেশি রিকুজিশনে রাখা যাবে না। রিকুইজিশন অর্ডারে নির্দিষ্ট সময়য় উল্লেখ থাকতে হবে।

১০. রিকুইজিশন করা গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

১১. প্রাইভেটকার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ট্যাক্সি রিকুইজিশন করা যাবে না।

এরপরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গাড়ি রিকুইজশনের ক্ষেত্রে হাইকোর্টের নির্দেশনা উপেক্ষা করছে বলে অভিযোগ আছে।

Comments