নীলফামারী-৩ ও ৪: আসন ছাড়লেও জাপা প্রার্থীর সঙ্গে নেই স্থানীয় আ. লীগ

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করতে নীলফামারীর চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে দু‌টি থেকে প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা সংসদীয় আসন দুটি হলো, জলঢাকা উপজেলা নিয়ে গঠিত নীলফামারী-৩ ও কিশোরগঞ্জ ও সৈয়দপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত নীলফামারী-৪।

কিন্তু তারপরও, জাপার লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীদের বিজয় অনিশ্চিত। কারণ কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে হতাশ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সহযোগিতার পরিবর্তে জাপা থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন।

সরকারি দলের ক্ষুব্ধ নেতারা মনে করেন, কেন্দ্র এই সিদ্ধান্ত তাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে এমন এক দলের জন্য যাদের সাংগঠনিক ভিত্তি নড়বড়ে ও জনসমর্থন তলানিতে।

তাই তারা বিকল্প হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতা যারা স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। আর এতেই বিপাকে পড়েছে জাপা।

নীলফামারী-৩ আসনে জলঢাকা উপজেলা ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা ও নীলফামারী- ৪ সংসদীয় আসনে কিশোরগঞ্জ উপজেলার দলীয় সভাপতি জাকির হোসেন বাবুলকে মনোনয়ন দিয়েও তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করানো হয়।

বর্তমানে নীলফামারী-৩ আসনে গোলাম মোস্তাফার স্ত্রী মার্জিয়া সুলতানা ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা সাদ্দাম হোসেন পাভেল এবং নীলফামারী-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সৈয়দপুর উপজেলা সভাপতি মোকসুদুল মোমিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে তৃণমূলের নেতা কর্মীদের নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।

দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহযোগী ও বড় দল আওয়ামী লীগের স্থানীয় সমর্থন না পেয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মেজর (অব.) রানা মো. সোহেল নীলফামারী-৩ আসনে ও আহসান আদেলুর রহমান নীলফামারী- ৪ আসনে বিজয়ী হবার ক্ষেত্রে একটি অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদে তারা উভয়েই আসন দুটি থেকে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন।

গত কিছুদিন যাবৎ আওয়ামী লীগ দলীয় স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থীসহ আরও কয়েকজন প্রার্থীর পক্ষ থেকে জাপা প্রার্থীদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ ছিল যে, নির্বাচনী ময়দানে তাদের দলীয় প্রার্থীদের হতাশাব্যঞ্জক অবস্থায় তারা মিথ্যাচার ও কূট কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে যা নির্বাচনী আচরণ বিধির লঙ্ঘন।

কিশোরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী যুবলীগ সভাপতি ও নীলফামারী-৪ আসনে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী মোকছেদুল মোমিনের নির্বাচনী কাজের অন্যতম সমন্নয়ক আবুল কালাম বারী পাইলট বলেন, 'নির্বাচনে পরাজয় অনুমান করে, জাতীয় পার্টির প্রার্থীর লোকেরা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার আগেই ভোটারদের কাছে মিথ্যাচার করছেন। তারা মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে এই বলে যে, পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন এমন কি এক ভোট পেলেও তাদের প্রার্থীকেই বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।'

'এর ফলে ভোটারদের মধ্যে সংশয়ের সৃষ্টি হবে ও তারা ভোট কেন্দ্রে যাবার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে,' অভিযোগ করে বলেন পাইলট

এ অবস্থায় নিলফামারী-৩ ও নীলফামারী-৪ আসনের আট জন সংসদ সদস্য প্রার্থী যৌথভাবে লিখিত আকারে গত ৩০ ডিসেম্বর জেলা রিটার্নিং অফিসার বরাবর জাতীয় পার্টির দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেন।

অভিযোগে তারা বলেন, নীলফামারী-৩ ও নীলফামারী-৪ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা প্রকাশ্যে ও বিভিন্ন মাধ্যমে ভোটগ্রহণের আগেই নিজেদের আগাম বিজয়ী হিসাবে ঘোষণা করছেন। যা নির্বাচনী পরিবেশ ব্যাহত ও নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। ফলে প্রার্থী ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দিচ্ছে। এতে ভোটাররা ভোট প্রদিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এ ব্যাপারে কার্য্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

অভিযোগকারী হলেন, নীলফামারী-৩ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী মার্জিয়া সুলতানা (ঈগল প্রতীক), সাদ্দাম হোসেন পাভেল (কাঁচি), হুকুম আলী (ট্রাক), কাজী ফারুক কাদের (কেটলী), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির বাদশা আলমগীর (হাতঘড়ি), ও গণতন্ত্রী পার্টির মোজাম্মেল হক।

নীলফামারী-৪ আসন থেকে অভিযোগকারী প্রার্থীরা হলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী মকছেদুল মোমিন (ট্রাক) ও জাসদের আজিজুল হক (মশাল)।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে, নীলফামারী-৩ আসনে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী মার্জিয়া সুলতানা বলেন, জাপা প্রার্থী রানা মো. সোহেল বলে বেড়াচ্ছেন, এক ভোট পেলেও তিনি এমপি নির্বাচিত হবেন। এটা সম্পূর্ণভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন। ফলে ভোটারদের মধ্যে ভোট দেওয়ার আগ্রহ হারিয়ে যাচ্ছে। এই গুরুতর অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে আমরা জেলা রিটার্নিং অফিসার বরাবর দরখাস্ত দিয়েছি।'

তবে নীলফামারী জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ পারভেজ দাবি করেন অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা। এ অঞ্চলের মানুষ জাপাকে ভালোবাসে। এই ভালোবাসা থেকেই তারা লাঙ্গলের প্রার্থীদের বিপুল ভোটে বিজয়ী করবে। এটা আমাদের আত্মবিশ্বাস।'

এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে জেলা প্রশাসক পঙ্কজ কুমার ঘোষ বলেন, 'অভিযোগটি আমি পেয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Jubo Dal leader dies in custody after 'jt forces picked him up'

The body of Touhidul Islam, 42, bore marks of trauma and injuries from his waist to the knees, family members said, alleging that he was tortured to death

1h ago