আসামি ছিনতাই

হামলার পর পাটগ্রাম থানায় নিরাপত্তা জোরদার, দুর্বৃত্তদের ধরতে ফুটেজ দেখছে পুলিশ

ছবি: সংগৃহীত

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানা ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার পর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে থানার বাইরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। থানার ভেতরে বাড়ানো হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশের উপস্থিতি।

এদিন সকালে পুলিশের রংপুর রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আমিনুল ইসলাম, লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক (ডিসি) এইচ এম রকিব হায়দার ও পুলিশ সুপার (এসপি) তরিকুল ইসলাম থানা পরিদর্শন করেছেন।

তারা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন।

আমিনুল ইসলাম দুপুরে গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, 'হামলায় যারা জড়িত, তারা যে দলেরই হোক না কেন—কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে, সেগুলো বিশ্লেষণ করে হামলাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।'

তিনি জানান, সাজাপ্রাপ্ত সেই দুই আসামিকে ধরতে ইতোমধ্যে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। এই ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে এবং পুলিশকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

'নিরাপত্তা জোরদার করতে থানায় অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে,' বলেন আমিনুল।

গত রাত সাড়ে ১০টার দিকে আনুমানিক ২৫০ জন দুর্বৃত্ত পাটগ্রাম থানায় অতর্কিত হামলা চালান। তারা সাজাপ্রাপ্ত আসামি বেলাল হোসেন ও সোহেল রানা চপলকে ছিনিয়ে নিয়ে যান।

দুর্বৃত্তদের হামলায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমানসহ অন্তত আট পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজনের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিরা পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, হামলার সময় থানার ভেতরে নয়টি ল্যাপটপ ভাঙচুর করা হয়েছে এবং একটি দুর্বৃত্তরা নিয়ে গেছেন। চেয়ার, টেবিল, জানালার কাঁচ, দরজা, আসবাবপত্র, এমনকি পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানও ভাঙচুর করেছেন তারা।

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৪০ লাখ টাকার বেশি হতে পারে।

সূত্র জানিয়েছে, সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামি—পাটগ্রামের মমিনপুর গ্রামের লিয়াকত আলীর ছেলে বেলাল হোসেন ও মির্জার কোর্ট এলাকার সামসুল হকের ছেলে সোহেল রানা চপল—বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

একই অভিযোগ তুলেছেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।

ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট দিয়ে তিনি বলেন, আগে স্থানীয় পর্যায়ের মূল সংগঠনগুলোর নেতাদেরকে কন্ট্রোল করতে হবে, তারপরে দেশ সংস্কার। প্রশাসন এবং পুলিশকে সহযোগিতা করা তো দূরের কথা; জিম্মি করে যে অপকর্ম করা হলো বিএনপি থেকে তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা সেটা এখন দেখার অপেক্ষায়। আমরা বিএনপি'র কথা কিংবা দফা দেখতে চাই না, অপকর্মের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান এবং একশন দেখতে চাই। সেটা নিজের দলের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হলেও।

প্রসঙ্গত, সরোয়ার বাজার এলাকায় পাথর ও বালুবাহী ট্রাক থেকে চাঁদাবাজির সময় বুধবার সন্ধ্যায় বেলাল ও চপলকে হাতেনাতে আটক করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উত্তম কুমার দাশ তাদের প্রত্যেককে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে পাটগ্রাম শহরে 'পাথর মহাল ইজারাদার' ব্যানারে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মাহমুদুল হোসেন।

তিনি ওসি ও ইউএনওর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

মাহমুদুল আরও দাবি করেন, কোনো চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটেনি।

এইচ এম রকিব হায়দার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, 'আটকের সময় অভিযুক্তরা সরাসরি চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত ছিল। ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছেন। উপজেলার নয়টি এলাকায় সরকার অনুমোদিত নয়টি পাথর কোয়ারি রয়েছে। সেসব স্থান থেকে বৈধভাবে উত্তোলিত পাথর ও বালু পরিবহনের সময় একটি সংঘবদ্ধ চক্র চাঁদাবাজি করছিল।'

'অবৈধ চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান কঠোর,' যোগ করেন তিনি।

পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, 'ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তাদের কাছে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী মামলা ও আইনি প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।'

Comments

The Daily Star  | English

US tariff talks: First day ends without major decision

A high-level meeting between Bangladesh and the Office of the United States Trade Representative (USTR) ended in Washington, DC, yesterday without a major decision, despite the looming expiry of a 90-day negotiation window on July 9.

11h ago