সাঁওতাল নারীকে মারধর ও বাড়িতে আগুন দেওয়ার অভিযোগ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

আগুনে ফিলোমিনা হাসদার একটি ঘর পুড়ে গেছে। ছবি: সংগৃহীত

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের রাজাবিরাট এলাকায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে এক সাঁওতাল নারীকে মারধর ও তার বাড়িতে আগুন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।

মারধরে আহত ফিলোমিনা হাসদা (৫৫) বর্তমানে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানিয়েছে পরিবার।

ফিলোমিনা হাসদার ছেলে ব্রিটিশ সরেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গতকাল সকাল ১০টার দিকে গ্রামের পাশে সাঁওতালদের পৈত্রিক জমি, যা বাঙালিরা দখল করে নিয়েছে, সেই জমিতে রাজাহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মাটি ভরাট করছিলেন। জায়গাটি আগে পতিত অবস্থায় ছিল। হঠাৎ করে চেয়ারম্যান সেই জমিতে মাটি ভরাট করছেন দেখে গ্রামের কয়েকজন সাঁওতাল যুবক বাধা দিতে যায়। তখন চেয়ারম্যানের সামনেই তার লোকজন আমার খালাতো ভাই নিকোলাস মুর্মুকে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। আমরা কিছু দূরে আলুর খেতে কাজ করছিলাম। খালাতো ভাইকে মারধরের কথা শুনে আমি প্রতিবাদ করতে গেলে চেয়ারম্যান আমাকে লাঠি দিয়ে মারতে আসেন। এসময় আমার মা চেয়ারম্যানের লাঠি ধরতে গেলে চেয়ারম্যান তার কানে উপর্যুপরি থাপ্পড় দেন। এতে মা মাটিতে পরে যান এবং তার কান দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে।'

'সকালে সাড়ে ১১টার দিকে ভাইয়েরা মাকে উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে দুপুর ১২টার দিকে আমি আবার আলুর খেতে গেলে চেয়ারম্যানের অনুসারী ২০-২৫ জন লোক আমাকে বাড়ি পর্যন্ত ধাওয়া করে এবং হুমকি দিয়ে চলে যায়', যোগ করেন তিনি।

ব্রিটিশ সরেন আরও বলেন, 'বিকেলে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালের চিকিৎসকরা মাকে রেফার্ড করলে তাকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। মা এখনো সেখানে চিকিৎসাধীন।'

'রাত ১১টার দিকে শুনি চেয়ারম্যানের লোকজন আমাদের বাড়িতে আগুন দিয়েছে। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে আগুন নিভিয়ে ফেলেন। তবে একটি ঘর পুড়ে গেছে', বলেন তিনি।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, '১০-১২ বছর আগে স্থানীয় এক বাঙালি মালিকের কাছ থেকে ১৬ শতক জমি কিনেছিলাম। সেই জমিতে মাটি ভরাট করতে গেলে ব্রিটিশ সরেনসহ কয়েকজন সাঁওতাল যুবক বাধা দেয়। আমার লোকজন তাদের তাড়িয়ে দেয়। আমার কাছে জমির দলিল আছে। জমিও আমার নাম রেকর্ড হয়েছে। আমি ব্রিটিশ সরেনের মাকে মারধর করিনি।'

তবে সাঁওতালদের দাবি, বাঙালিরা ভুয়া দলিলপত্র তৈরি করে এই জমি দখলে নিয়েছে।

গোবিন্দগঞ্জ বাগদা-ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগে রাজাবিরাট গ্রামে অনেক সাঁওতাল পরিবার ছিল। তবে স্বাধীনতার পর থেকে তাদের প্রায় ২৫০ বিঘা জমি স্থানীয় বাঙালিরা নানাভাবে দখলে নিয়েছে। সে কারণে সেখান থেকে অনেক সাঁওতাল পরিবার অন্য জায়গায় চলে গেছে।'

'ব্রিটিশ সরেনের মাকে মারধর ও বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় আমরা প্রতিবাদ সভা করব। এখন সরেজমিনে দেখতে যাচ্ছি। পরে থানায় যাব', বলেন তিনি।

ফিলোমিনা হাসদার বাড়িতে আগুন দেওয়ার দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, 'তাদের বাড়িতে কারা আগুন দিয়েছে আমি জানি না। সেসময় আমি থানায় ছিলাম।'

তবে স্থানীয় দুই প্রত্যক্ষদর্শী জানান, সকালে চেয়ারম্যান নিজে সাঁওতালদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি এবং ফিলোমিনা হাসদাকে মারধর করেন।

এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বুলবুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঘটনাটি তদন্ত করতে একজন অফিসারকে সেখানে পাঠিয়েছি। শুনেছি জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে ঝামেলা হয়েছে। একজন সাঁওতাল নারীকে কানে থাপ্পড় দিয়েছেন (চেয়ারম্যান)। আর রাতে বাড়িতে কে আগুন দিয়েছে সেটা কেউ দেখেনি। আমার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। চেয়ারম্যান হোক আর যেই হোক ছাড় দেওয়া হবে না।'

Comments

The Daily Star  | English

'100 percent' of Gazans at risk of famine: UN

"Gaza is the hungriest place on Earth," said a spokesman for the UN humanitarian agency OCHA

31m ago